লাইফস্টাইল

অগ্নিদগ্ধদের চিকিৎসা ও পরিচর্যায় ডা. ওয়াহিদা খানের পরামর্শ

অগ্নিদগ্ধদের চিকিৎসা ও পরিচর্যায় ডা. ওয়াহিদা খানের পরামর্শ

জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীনদের জন্য প্রতিটি মুহূর্ত যেন একেকটি যুদ্ধ। উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তে অগ্নিদগ্ধদের বড় অংশই চিকিৎসাধীন হাসপাতালটিতে। অন্য হাসপাতালের বার্ন ইউনিটেও চিকিৎসা নিচ্ছেন কেউ কেউ।

Advertisement

আগুনে দগ্ধ হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ত্বক। তাই অগ্নিদগ্ধদের প্রাথমিক পরিচর্যা ও দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা নিয়ে জরুরি পরামর্শ দিয়েছেন অভিজ্ঞ চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ওয়াহিদা খান চৌধুরী। আগুনে পুড়ে গেলে আতঙ্কিত না হয়ে ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে বেশ কিছু টিপস দিয়েছেন তিনি। তার মতে, পোড়া জায়গায় শুধু ওষুধ লাগালেই হয় না, বুঝে নিতে হয় ভেতরের ক্ষত কতখানি গভীর।

আগুনে দগ্ধ হওয়া মানেই শুধু চামড়ার ক্ষতি নয়, পুরো শরীরের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। এ বিষয়ে ডা. ওয়াহিদা বলেন, বেশিরভাগ মানুষ ভাবেন পোড়া জায়গাটুকু সামলালেই রোগী বেঁচে যাবেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো বার্ন রোগীর শরীরে দ্রুত পানি ও প্রোটিন ঘাটতি দেখা দেয়। এতে রক্তচাপ কমে যায়, কিডনি কাজ করা বন্ধ করে দিতে পারে, ইনফেকশন হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। ঠিক সময়ে সঠিক ব্যবস্থা না নিলে বার্ন রোগীর শ্বাসযন্ত্রও আক্রান্ত হয়, বিশেষ করে যদি মুখ ও বিশেষ অঙ্গ পুড়ে যায়।

তাৎক্ষণিক করণীয়: পানি ঢালবেন, কিন্তু বরফ নয়

ডা. ওয়াহিদা খান চৌধুরীর মতে, অনেকেই ভুলভাবে পোড়া জায়গায় বরফ বা টুথপেস্ট লাগান, যা মারাত্মক ক্ষতিকর।

Advertisement

তিনি পরামর্শ দেন>> দগ্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পোড়া স্থানে ৩০ মিনিট নরমাল পানি ঢালতে হবে।>> কিন্তু কখনই বরফ ব্যবহার করা যাবে না এতে টিস্যু আরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।>> পোড়া জায়গায় কাপড় আটকে গেলে জোর করে টানবেন না।>> জীবাণুমুক্ত একটি পাতলা কাপড় দিয়ে জায়গাটি ঢেকে রোগীকে হাসপাতালে নিতে হবে।

ঘরোয়া টোটকায় বিশ্বাস নয়, চিকিৎসা জরুরি

প্রতিটি বার্ন রোগীকে অবিলম্বে চিকিৎসা কেন্দ্রে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ডা. ওয়াহিদা বলেন, অনেকেই প্রথমে ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে দেন, কেউ কেউ মধু বা ঘি লাগান। কিন্তু এগুলো ইনফেকশনের ঝুঁকি বাড়ায়। প্রথম ২৪ ঘণ্টা বার্ন রোগীর জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। তাই চিকিৎসা, পর্যাপ্ত পানি ও স্যালাইন দেওয়া জরুরি।

পোড়া চামড়ার যত্ন: কেবল মলম নয়, নিয়মিত পর্যবেক্ষণ

পোড়া চামড়ার পরিচর্যায় কী করতে হবে? এ প্রশ্নের উত্তরে ডা. ওয়াহিদা জানান, প্রথমে পোড়া স্থানের গভীরতা নির্ধারণ করে সে অনুযায়ী চিকিৎসা নির্ধারিত হয়। পরিচর্যার জন্য তিনি বলেন, হালকা পোড়ায় জীবাণুনাশক অ্যান্টিবায়োটিক ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে (চিকিৎসকের পরামর্শে)। পোড়া স্থানে যেন নতুন টিস্যু তৈরি হয়, সেজন্য পুষ্টিকর খাবার দেওয়া দরকার; বিশেষ করে প্রোটিন, জিঙ্ক ও ভিটামিন সি। গভীর পোড়ায় প্লাস্টিক সার্জারি প্রয়োজন হতে পারে।

আরও পড়ুন: বিপর্যয় পরবর্তী মানসিক সমস্যা থেকে পরিত্রাণের উপায় হঠাৎ পুড়ে গেলে কী করবেন বড় দুর্ঘটনার ট্রমা কীভাবে সামলাবেন বার্ন রোগীর মনের যত্নও গুরুত্বপূর্ণ

ডা. ওয়াহিদা খান চৌধুরীর মতে, শারীরিক ক্ষতের পাশাপাশি রোগীর মানসিক অবস্থার যত্নও জরুরি। চিকিৎসা চলাকালীন রোগীদের সঙ্গে কড়া ভাষায় কথা না বলা, আশ্বাস দেওয়া ও প্রিয়জনের উপস্থিতি তাদের সুস্থতার পথে বড় ভূমিকা রাখে।

Advertisement

তিনি বলেন, ‘বিশেষ করে শিশু রোগীদের ক্ষেত্রে যত্নের পাশাপাশি গল্প বলা, খেলনা দেওয়া-এগুলো মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।’

দীর্ঘমেয়াদি যত্ন: স্কিন গ্রাফট, সানস্ক্রিন ও আত্মবিশ্বাস

ডা. ওয়াহিদা খান চৌধুরী জানান, অনেক বার্ন রোগীকে পরে স্কিন গ্রাফট করাতে হয়; অর্থাৎ শরীরের অন্য জায়গা থেকে চামড়া এনে বসানো। এছাড়া পোড়া জায়গা একসময় গাঢ় দাগে রূপ নেয়, যা রোদে আরও কালচে হতে পারে। এজন্য বিশেষ পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।>> সূর্যরশ্মি থেকে বাঁচাতে ওই জায়গায় সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত।>> প্রয়োজনীয় ফিজিওথেরাপি করলে পুড়ে যাওয়া অংশের শক্ত হয়ে যাওয়া বা টানাপোড়েন কমে।

সর্বোপরি দুর্ঘটনায় হতাহতদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে ডা. ওয়াহিদা খান বলেন, দুর্ঘটনায় যারা অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন তাদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে সময়মতো চিকিৎসা, সঠিক পরিচর্যা এবং পরিবার-সমাজের সহানুভূতি দরকার। আগুনে পোড়া মানুষের দিকে করুণা নয়, সহমর্মিতার চোখে তাকাতে হবে। চিকিৎসকদের মতামত এবং নির্দেশনা অনুযায়ী যত্ন নিলে অনেক দগ্ধ মানুষ নতুন করে জীবন শুরু করতে পারেন।

জেএস/এমএফএ/এএসএম