বিশ্বখ্যাত পপ তারকা জাস্টিন বিবার ফিরে এসেছেন নতুন অ্যালবাম নিয়ে। তার অ্যালবামের নাম রেখেছেন তিনি ‘স্ব্যাগ’। এর মাধ্যমে তিনি তার শ্রোতা ও ভক্তদের নিয়ে গেছেন ভালোবাসার অন্য এক জড়তে। সেইসঙ্গে আরএনবি ঘরানার গানগুলো জাস্টিন বিবারের সেই কোমল ও আবেগপ্রবণ কণ্ঠকেও যেন নতুন করে ফিরিয়ে আনলো।
Advertisement
অ্যালবামটি প্রকাশ পেয়েছে ১৮ জুলাই। এটি ইতিমধ্যেই সঙ্গীতপ্রেমীদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিলবোর্ডের টপচার্টেও জায়গা করে নিয়েছে। ২০০৭ সালে ইউটিউবে মা-পুত্রের আপলোড করা গান থেকেই যাত্রা শুরু বিবারের। নি-ইও, ব্রায়ান ম্যাকনাইট বা আরেথা ফ্র্যাঙ্কলিনের গান গেয়ে যে কোমল স্বরের আরএনবি চেতনা ধরা দিয়েছিল, সময়ের স্রোতে তা কিছুটা চাপা পড়ে গিয়েছিল পপ তারকার মোড়কে। কিন্তু ‘স্ব্যাগ’ নামের এই সপ্তম স্টুডিও অ্যালবামটি যেন সেই মূল সুরকেই নতুন আলোয় ফিরিয়ে এনেছে। এবার আরও পরিণত, অভিজ্ঞ, গভীর।
অ্যালবামটির সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো এর বৈচিত্র্যপূর্ণ ধ্বনি ও সহযোগিতা। গিটারে ভর করে তৈরি ‘ডেইজিস’ গানে বিবার যুক্ত হয়েছেন গিটারভিত্তিক ব্যতিক্রমী শিল্পী এমকে.জি-র সঙ্গে। অন্যদিকে ‘অল আই ক্যান টেক’, ‘গো বেবি’, ‘সুইট স্পট’ গানগুলোয় পাওয়া গেছে আশির দশকের জনপ্রিয় বালকদলের আরএনবি ঘরানার ছোঁয়া। এগুলো শ্রোতাদের মনে জাগিয়ে তোলে একধরনের সংগীত-নস্টালজিয়া।
‘ইউকন’ গানটিতে বিবারের কণ্ঠ ডিজিটালি রূপান্তরিত হলেও তা কৃত্রিম নয় বরং উগ্রতাপূর্ণ, দুষ্টুমি মাখানো কণ্ঠের চরিত্রে তিনি হয়ে উঠেছেন এক মোহময় প্রেমিক। গানটি যেন ড্রেকের ছন্দময়তার সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ।
Advertisement
অ্যালবামে গসপেল ধারার ছোঁয়াও স্পষ্ট। ‘গ্লোরি ভয়েস মেমো’ গানটিতে শোনা যায় তার জীবনের হতাশা আর বিশ্বাসের লড়াই। সেখানে তিনি বলছেন, ‘আমি ব্যবহৃত হয়েছি, আমি বারবার ধাক্কা খেয়েছি…’ শেষ গান ‘ফরগিভনেস’-এ গসপেল কিংবদন্তি মারভিন উইন্যান্সের কণ্ঠে অ্যালবামের এক আত্মিক সমাপ্তি টানা হয়।
বিবারের ব্যক্তিগত জীবন স্ত্রী হেইলি এবং তাদের সন্তান এই অ্যালবামের অনেক গানে একান্তভাবে ধরা পড়েছে। ‘গো বেবি’ গানে স্ত্রীর প্রসাধনী ব্যবসার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করে বলেন, ‘এটাই আমার ভালোবাসা, সে আইকনিক / আইফোন কেস, ঠোঁটে গ্লস।’
অন্যদিকে ‘ওয়াকিং অ্যাওয়ে’ গানটিতে সম্পর্কের জটিলতা ও বোঝাপড়ার কথাও এসেছে স্পষ্টভাবে।
অ্যালবামটিতে উপস্থিত অতিথি শিল্পীদের মধ্যে রয়েছেন লিল বি, গান্না, সেক্সি রেড ও ক্যাশ কোবেন। ‘ড্যাডজ লাভ’ গানে লিল বি তার স্বতন্ত্র ভঙ্গিতে গান গেয়েছেন। আর ‘স্ব্যাগ’ গানটিতে ক্যাশ কোবেনের উপস্থিতি প্রাঞ্জল ও পরিপূর্ণ মনে হয়েছে।
Advertisement
অ্যালবামের মাঝখানে থাকা তিনটি সংক্ষিপ্ত নাট্যাংশে হাস্যরসের সঙ্গে তুলনা টানা হয়েছে বিবারের কালো সংস্কৃতি অনুকরণ ও গ্রহণ নিয়ে। এসব স্কিটে কমেডিয়ান ড্রুসকি বিবারের অবস্থান ও উপলব্ধিকে চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন, যা তার আগের বিতর্কিত অ্যালবাম ‘জাস্টিস’-এর চেয়ে অনেক পরিমিত ও সংযত প্রয়াস বলে মনে হয়।
সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় হলো অ্যালবামের নাম ‘স্ব্যাগ’। শব্দটি মূলত ইংরেজি স্ল্যাং হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যার অর্থ হয়- আত্মবিশ্বাসপূর্ণ স্টাইল, দাপট, বা ব্যক্তিত্বপূর্ণ উপস্থিতি। জাস্টিন বিবারও তার স্টাইল, আত্মবিশ্বাস ও পুরনো চরিত্রের নতুন রূপায়নকে বোঝাতেই অ্যালবামটির নামকরণ করেছেন ‘স্ব্যাগ’। এটি তার কিশোর বয়সের নিরীহ, প্রাণবন্ত সময়ের দিকে ফিরে যাওয়ার একটি প্রচেষ্টা যেখানে ‘স্ব্যাগি’ ছিল তার প্রিয় শব্দ। এবার তিনি সেই উদ্দামতাকেই ফিরিয়ে এনেছেন এক পরিপক্ব শিল্পীর আত্মবিশ্বাস নিয়ে।
‘স্ব্যাগ’ অ্যালবামটি তাই শুধু সংগীত নয় এখানে জাস্টিন বিবার ফিরে পেয়েছেন নিজেকে। আর তার ভক্তরা পেয়েছেন নতুন করে ভালোবাসার এক অনুপ্রেরণা।
এলআইএ/জিকেএস