শিক্ষা শুধু শ্রেণিকক্ষে সীমাবদ্ধ নয়—ভ্রমণ ও জ্ঞান অর্জনের এক গুরুত্বপূর্ণ উপায়। এই উপলব্ধি থেকেই মিশরে অবস্থানরত একদল বাংলাদেশি শিক্ষার্থী সম্প্রতি অংশ নেন এক ব্যতিক্রমী শিক্ষা সফরে। গন্তব্য ছিল মিশরের দক্ষিণ সিনাই অঞ্চলের ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থান তুর পাহাড়।
Advertisement
এই সফরের আয়োজক ছিলেন ‘দারুল আজহার’ নামের একটি বাংলাদেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। যারা মিশরে অবস্থানরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ও অনলাইনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ে নিয়মিত কোরানিক শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকেন।
ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় তাৎপর্যপূর্ণ তুর পাহাড়
তুর পাহাড় (মাউন্ট সিনাই) কেবল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে নয় বরং ধর্মীয় ইতিহাসেও গভীরভাবে প্রোথিত। এটি সেই পাহাড়, যে পাহাড়ে হজরত মূসা (আ.) আল্লাহর সঙ্গে কথা বলেছিলেন এবং যেখানে তাওরাত (তৌরাত) নাজিল হয়েছিল। তাছাড়াও এই স্থানটি খ্রিষ্টান ও ইহুদি ধর্মাবলম্বীদের কাছেও অত্যন্ত পবিত্র। ফলে এই সফর ছিল ইতিহাস, ধর্ম এবং দর্শনের এক অপূর্ব সমন্বয়।
Advertisement
শিক্ষা সফরের মূল উদ্দেশ্য
এই সফরের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা শুধু ঐতিহাসিক স্থান পরিদর্শন করেননি বরং তারা কীভাবে ধর্মীয় স্থানসমূহ মানব ইতিহাস ও বিশ্বাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে—তা বাস্তবে উপলব্ধি করেন। সফরের সময় শিক্ষার্থীদের হজরত মূসা (আ.)-এর জীবন, আল্লাহর নির্দেশ গ্রহণ এবং নবুয়তের দায়িত্ব পালনের গুরুত্ব নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোকপাত করেন।
পাহাড়ে আরোহণ ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা
দারুল আজহারের শিক্ষকরা ৫০ জনের একটি শিক্ষার্থী দল নিয়ে কায়রো থেকে বিকেলে রওনা করে পথিমধ্যে হজরত হারুন (আ.) ও হজরত সালেহ (আ.)-এর কবর জিয়ারত করে মধ্যেরাতে পৌঁছেন তুর পাহাড়ের পাদদেশে। শেষ রাতের অন্ধকারে শুরু হয় শিক্ষার্থীদের তূর পাহাড় আরোহণ। প্রায় ৭০০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এই শৃঙ্গ জয় করতে সময় লেগেছে প্রায় ৪ ঘণ্টা। পাহাড়ের চূড়ায় রয়েছে তিন ধর্মের তিনটি এবাদত খানা। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা মুসলমানদের জন্য নির্ধারিত এবাদতখানায় (মসজিদ) শুকরিয়া নামাজ আদায় করার পর প্রত্যক্ষ করেন সূর্যোদয়ের এক অবিস্মরণীয় দৃশ্য, যা জীবনের এক গভীর প্রশান্তির মুহূর্ত এনে দেয়।
Advertisement
এ সময় শিক্ষার্থীরা ব্যাখ্যা করেন—এই আরোহণ যেন আত্মশুদ্ধির প্রতীক হয়ে ওঠে; নিচ থেকে ওপরে ওঠার এই অভিজ্ঞতা তাদের মনে জাগিয়েছে ধৈর্য, সাহস এবং ঐক্যের শিক্ষা।
স্মৃতি ও শিক্ষা
সফরের শেষে শিক্ষার্থীরা জানান, এই সফর শুধু মিশরের ইতিহাস জানার সুযোগ নয় বরং নিজেদের আত্মিক ও মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রেও একটি মাইলফলক। পাহাড়, প্রকৃতি, ধর্ম ও ভ্রাতৃত্ব—সব মিলিয়ে এই অভিজ্ঞতা তাদের জন্য হবে আজীবনের প্রেরণা।
দারুল আজহারের চেয়ারম্যান শায়েখ হাবিবুল বাশার আজহারী এ শিক্ষাসফর সম্পর্কে বলেন, এই সফর শুধু একটি সফল ভ্রমণ নয় বরং এটি ছিল শিক্ষার বাস্তবমুখী ও অনুপ্রেরণাদায়ক এক অভিজ্ঞতা। হজরত মূসা (আ.)-এর জীবনকথা আমাদের জন্য এক অমূল্য সম্পদ। তার জীবনের ঘটনাবলি পাঠ ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে আমরা উপলব্ধি করতে পারি—কীভাবে একজন বান্দা আল্লাহর সাথে গভীর সম্পর্ক গড়ে তোলে। কিতাবকে হৃদয়ে ধারণ করে তা অনুসারে জীবন পরিচালনাই আমাদের প্রকৃত সাফল্যের দিকচিহ্ন।
তিনি আরও বলেন, ইনশাআল্লাহ, দারুল আজহার ভবিষ্যতেও এ ধরনের অর্থবহ, দায়িত্বশীল এবং ঈমানদীপ্ত কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে। আপনাদের দোয়া, ভালোবাসা ও সক্রিয় অংশগ্রহণই আমাদের প্রধান অনুপ্রেরণা।
এমআরএম