সাহিত্যিক, নাট্যকার, চলচ্চিত্র পরিচালক হুমায়ূন আহমেদ নিজেই ছিলেন এক বহুমাত্রিক প্রতিভা। কিন্তু তার আরেকটি পরিচয় অনেক সময়েই উপেক্ষিত থাকে। তিনি ছিলেন একজন হৃদয়ছোঁয়া গীতিকারও। যদিও নিজেকে কখনোই তিনি ‘গীতিকার’ বলে পরিচয় দিতেন না। তবুও তার লেখা গানগুলো হয়ে উঠেছে কালজয়ী। সেই গানগুলো আজও মুখে মুখে ফেরে, বৃষ্টির দিনে, প্রেমের ব্যথায়, কিংবা শূন্য বিকেলে।
Advertisement
হুমায়ূন আহমেদের গানপ্রীতি ছিলো সত্যিই গভীর। তিনি ছিলেন রবীন্দ্রসংগীতের একনিষ্ঠ ভক্ত, তেমনি মুগ্ধ হতেন হাছন রাজা বা নজরুলের গানেও। গানের প্রতি ভালোবাসা থেকেই নিজেও কলম ধরেছেন। তার লেখা গানগুলোতে মেলে গভীর আবেগ, সরল শব্দে বলার অসাধারণ দক্ষতা এবং একধরনের নির্লিপ্ত বেদনা। যা মানুষকে এক নিমিষেই আপন করে নেয়।
আজ হুমায়ূন আহমেদের ১৩তম মৃত্যুবার্ষিকী। আজ এই দিনে তার লেখা জনপ্রিয় গানগুলো নিয়ে আলোচনা করা যাক-
একটা ছিল সোনার কন্যাছবি: শ্রাবণ মেঘের দিন (১৯৯৯)সুবীর নন্দীর কণ্ঠে এই গানটি বাংলা গানের ইতিহাসে এক অনন্য সংযোজন। গ্রামীণ প্রেম, স্মৃতি, হারানোর ব্যথা সব মিলিয়ে এই গান আজও গুনগুনিয়ে ফেরে কণ্ঠে কণ্ঠে। গানটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এনে দেয় সুবীর নন্দীকে।
Advertisement
আমার ভাঙা ঘরে ভাঙা চালাছবি: শ্রাবণ মেঘের দিন (১৯৯৯)সাবিনা ইয়াসমিনের কণ্ঠে গাওয়া এই গানটি হুমায়ূনের লেখা অন্যতম আবেগঘন রচনা। বৃষ্টিভেজা চালা আর শূন্যতার চিত্র যেন ফুটে ওঠে এই গানে।
বরষার প্রথম দিনেছবি: দুই দুয়ারী (২০০০)এটি নিঃসন্দেহে এক বৃষ্টিমাখা রোমান্টিক গান। সাবিনা ইয়াসমিনের মধুর কণ্ঠে ও মকসুদ জামিল মিন্টুর সুরে গানটি এতটাই জনপ্রিয় হয় যে বরষা এলেই গুনগুন করে গেয়ে উঠেন বাংলার মানুষ। সাবিনা ইয়াসমিন এই গানের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সেরা গায়িকার সম্মাননা পান।
‘যদি মন কাঁদে’শিল্পী : মেহের আফরোজ শাওন‘যদি মন কাঁদে/ তুমি চলে এসো, চলে এসো/ এক বরষায়.../ এসো ঝর ঝর বৃষ্টিতে/ জল ভরা দৃষ্টিতে/ এসো কোমল শ্যামল ছায়ায় / চলে এসো তুমি চলে এসো এক বরষায়/ যদি মন কাঁদে তুমি চলে এসো এক বরষায়... কথায় সাজানো গানটি বর্ষাপ্রেমীদের খুব পছন্দের। গানটি গেয়েছেন মেহের আফরোজ শাওন। এছাড়াও নানা প্রজন্মের শিল্পীদের কণ্ঠে গানটি শোনা গেছে।
ও আমার উড়াল পঙ্খীরেছবি: চন্দ্রকথা (২০০৩)এই গানটি যেন এক প্রেমভাঙা জোছনার গান। সুবীর নন্দীর কণ্ঠে ও ফেরদৌসের ঠোঁটে, গানটি হয়ে যায় এক আবেগী চিত্রকল্প। আজও এই গান মানে ভালোবাসা, হাহাকার আর দূরের আহ্বান।
Advertisement
চাঁদনী পসরে কে আমারে স্মরণ করেছবি: চন্দ্রকথাসেলিম চৌধুরীর কণ্ঠে ভাটিয়ালি ধারার এই গানটি এক অসাধারণ যন্ত্রণাময় আবহ তৈরি করে। মনে হয়, গান নয় যেন নদীর বুক থেকে উঠে আসা এক দীর্ঘশ্বাস।
আমার আছে জলছবি: আমার আছে জল (২০০৮)হাবিব ওয়াহিদের সুর ও কণ্ঠে এই গানটি এক আধুনিক রোমান্টিক কবিতা হয়ে উঠেছে। হুমায়ূনের নতুন প্রজন্মের পাঠকের জন্য এটি একটি অনুপ্রেরণার গান।
বাদলা দিনে মনে পড়ে ছেলেবেলার গানছবি: আমার আছে জলবর্ষা নিয়ে লেখা হুমায়ূনের আরেক মধুর সৃষ্টি। ছোটবেলার নস্টালজিয়া আর বিষণ্ণ আবহ মিলে গানটি শ্রোতার মনে রেখে দেয় দীর্ঘ প্রতিধ্বনি।
বাজে বংশীছবি: ঘেটুপুত্র কমলা (২০১২)শফি মণ্ডল ও ফজলুর রহমান বাবুর কণ্ঠে এই গানটি লোকসংগীতের ঘরানায় দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। গানটির ভেতরে আছে ময়মনসিংহের আঞ্চলিক গন্ধ ও সংস্কৃতির আবহ।
এলআইএ/এমএস