দেশজুড়ে

আগুনে শেষ পুরো পরিবার, ‘আল্লাহ ছাড়া আর কেউ নেই’ জরিনা বেগমের

আগুনে শেষ পুরো পরিবার, ‘আল্লাহ ছাড়া আর কেউ নেই’ জরিনা বেগমের

ঢাকায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীর একটি পরিবার। আগুনে দগ্ধ হয়ে একে একে প্রাণ হারালেন স্ত্রী, দুই ছেলে ও দেড় বছরের কন্যা। সর্বশেষ শুক্রবার (১৮ জুলাই) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান পরিবার প্রধান রিপন প্যাদা (৩৫)। এক সপ্তাহের ব্যবধানে নিঃশেষ হয়ে গেল পাঁচ সদস্যের পরিবারটি।

Advertisement

এই মর্মান্তিক ঘটনায় শোকে স্তব্ধ পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার যুগিরহাওলা গ্রাম। শোকে পাথর হয়ে গেছেন রিপনের বৃদ্ধা মা জরিনা বেগম।

পরিবারটির গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার সদর ইউনিয়নের যুগিরহাওলা গ্রামে। জীবিকার খোঁজে প্রায় ৭ বছর আগে ঢাকা যান রিপন প্যাদা। ভ্যান চালিয়ে জীবন নির্বাহ করতেন। তিন বছর আগে স্ত্রী চাঁদনী বেগম (৩০), দুই ছেলে তামিম (১৬) ও রোকনকে (১৩) ঢাকায় নিয়ে যান। দেড় বছর আগে তাদের সংসারে জন্ম নেয় ফুটফুটে কন্যা আয়েশা।

জানা গেছে, ঢাকার সূত্রাপুরের কাগজি টোলায় একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন রিপন ও তার পরিবার। গত ১১ জুলাই রাত আনুমানিক ১টার দিকে তাদের বাসায় ঘটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড। সবাই তখন ঘুমিয়েছিলেন। আগুনে দগ্ধ হন পরিবারের সবাই। দগ্ধ অবস্থায় তাদের ভর্তি করা হয় জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে।

Advertisement

চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৪ জুলাই মারা যায় দেড় বছরের আয়েশা। ১৬ জুলাই মারা যায় দুই ছেলে তামিম ও রোকন। ওইদিনই ছেলেদের মরদেহ নিয়ে গ্রামের পথে অ্যাম্বুলেন্সে ফেরার সময় মৃত্যুবরণ করেন মা চাঁদনী বেগম। ছেলেদের রিপন প্যাদ্যার বাড়িতে দাফন শেষে সামুদাবাদ গ্রামে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয় চাঁদনীকে। এরপর ১৮ জুলাই রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রিপন প্যাদা। শুক্রবার (১৮ জুলাই) বিকেল ৩টায় জানাজা শেষে যুগিরহাওলা গ্রামে দুই ছেলের পাশেই দাফন করা হয় তাকে।

এক পরিবারের পাঁচ সদস্যের এমন করুণ মৃত্যুর খবরে কান্নায় ভেঙে পড়ে গোটা গ্রাম। বাড়ির আঙিনায় পাথর হয়ে বসে আছেন বৃদ্ধা মা জরিনা বেগম। চোখের পানি শুকিয়ে গেলেও হৃদয়ের কান্না থামছে না। বারবার বিলাপ করে বলছেন, ‘আল্লাহ ছাড়া আমার আর কেউ নেই। আমার সব শেষ হয়ে গেল।’

নিহত রিপনের ফুফাতো ভাই সিরাজ হোসেন জানান, সূত্রাপুরের কাগজি টোলায় পাঁচতলা ভবনের নিচতলার একটি কক্ষে ভাড়া থাকতেন তারা। ঘুমন্ত অবস্থায় আগুনে দগ্ধ হন সবাই। একে একে সবাই মারা যান। এখনো কেউ জানে না আগুন কীভাবে লাগলো।

মাহমুদ হাসান রায়হান/এফএ/এএসএম

Advertisement