রাজনীতি

‘নিজ খরচে সমাবেশে এসেছি, খাবার-পানিও পকেটের টাকায়’

‘নিজ খরচে সমাবেশে এসেছি, খাবার-পানিও পকেটের টাকায়’

‘আমরা শুকনো খাবার ও পানি সঙ্গে নিয়ে এসেছি। প্রত্যেকের ব্যাগে জায়নামাজ আছে। সবাই মিলে একসঙ্গে গাড়িতে এলেও নিজেরাই ভাড়ার খরচ বহন করেছি, সংগঠন থেকে দিতে হয়নি। বরং আমাদের অনেকে স্বেচ্ছায় ১০-২০ জনের খরচ বহন করেছে৷’

Advertisement

জামায়াতের সমাবেশে যোগ দিতে কুমিল্লা থেকে আসা আহমদ ইবনে আহসান নামের একজন কথাগুলো বলছিলেন জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপচারিতায়। তিনি বলেন, ‘আমরা গত রাতেই রওনা করে এসেছি। ফজরের আগেই পৌঁছে গেছি। আলহামদুলিল্লাহ। নির্দেশনা মোতাবেক সমাবেশ শেষ হওয়া পর্যন্ত থাকবো। ইনশাআল্লাহ।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু আহমদ ইবনে আহসান নন, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জামায়াতের সমাবেশে আসা বহু লোক এভাবেই নিজের পকেটের টাকা খরচ করে ঢাকায় এসেছেন। তারা নিজের টাকায় খাবার কিনে খাচ্ছেন। ফিরবেনও পকেটের পয়সায়। তাদের অনেকে জানিয়েছেন, এরকম রাজনীতিতেই তারা দুনিয়া ও আখিরাতের সুখ খুঁজে পাচ্ছেন।

শনিবার (১৯ জুলাই) ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জামায়াতের জাতীয় সমাবেশের মূল পর্ব শুরু হবে দুপুর ২টায়। এদিন ভোর থেকেই সমাবেশস্থল পূর্ণ হতে শুরু করে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সমাবেশস্থল ছাড়িয়ে লোকসমাগম বিস্তৃত হয় আশপাশের সড়ক ও রমনা পার্ক পর্যন্ত।

Advertisement

সমাবেশে আসা নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা একেকজন দেশের একেক এলাকা থেকে এসেছেন। তাদের যাতায়াত ও খাবারে সংগঠনের ব্যয় নেই। নিজের খরচে এসেছেন। অনেকে সঙ্গে খাবার নিয়েও এসেছেন।

জামায়াতে ব্যক্তি বা নেতার বিশেষ প্রাধান্য বা পূজা নেই। দলীয় প্রতীক, লোগো বা দলের নামের বাইরে কোনো নেতার ছবি সংবলিত প্ল্যাকার্ড, ব্যানার বা ফেস্টুন নেই।

সমাবেশে আসা ফরিদপুর জজ কোর্টের আইনজীবী মোসাদ্দেক আহমেদ বশির জাগো নিউজকে বলেন, ব্যক্তি পূজা বা পরিবারতন্ত্র বাদ দিয়ে কীভাবে একটি দল চলতে পারে, জামায়াতের দিকে না তাকালে তা বোঝা কঠিন। এত বড় একটা সমাবেশ, তারপরও জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা মওদুদী, গোলাম আযম বা বর্তমান আমির ডা. শফিকুর রহমানের কারও একটা ছবি নেই।

তিনি বলেন, ‘নেতাকর্মীরা অনেকে নিজের টাকায় রুটি, মুড়ি, চিড়া, গুড় নিয়ে সমাবেশে এসেছেন। উৎসবমুখর পরিবেশে তারা সমাবেশে যোগ দিচ্ছেন। রাস্তায় নেই কোনো বিশৃঙ্খলা। নেতৃত্ব নিয়ে নেই কোনো কোন্দল। সত্যিই আশ্চর্য লাগে!’

Advertisement

সমাবেশে আসা একাধিক বয়োবৃদ্ধ কর্মীর ছবি দিয়ে সাংবাদিক মিজানুর রহমান লিখেছেন, ‘নিজের টাকায়, নিজের খাওয়ায় সমাবেশে আসার মজাই আলাদা। এ ফিলিংস সবাই পাবে না।’

সমাবেশস্থলে কথা হলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমার জেলা ঝালকাঠি থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী এসেছেন লঞ্চে। নির্দেশনা অনুযায়ী বাড়ি থেকে খাবার নিয়ে এসেছেন। লঞ্চে কোনো হইহুল্লোড় বা বিশৃঙ্খলা ছিল না। খাবার নিয়ে হট্টগোল ছিল না। সিগারেটের কোনো ধোঁয়া ছিল না। মাদক ও জুয়ার আসারও ছিল না। খোঁজ নিয়ে জানলাম, প্রত্যেকে নিজ খরচে সমাবেশে এসেছেন। লঞ্চে একত্রে এলেও প্রত্যেকে নিজেরা ভাড়া বহন করছেন।’

তিনি বলেন, ‘ঘুমানোর জায়গার কমতি ছিল। অনেকে নিজে জেগে বসে থেকে অন্য ভাইকে ঘুমানোর সুযোগ করে দিয়েছে। ইসলামী দলগুলোর সৌন্দর্য এখানেই। সবার মধ্যে এমন শৃঙ্খলা ফিরুক এবং সবাই নিজ দেশের নাগরিকদের কল্যাণে রাজনীতি করুক, এটিই চাওয়া।’

সমাবেশে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য রাখবেন। সমাবেশ থেকে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড, সংস্কার ও বিচারসহ বেশ কিছু দাবি উঠে আসতে পারে। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে গুরুত্বপূর্ণ বার্তাও দিতে পারেন নেতারা।

জানা গেছে, বাংলাদেশের ক্রিয়াশীল সব রাজনৈতিক দলকেই জাতীয় সমাবেশে আমন্ত্রণ জানিয়েছে জামায়াত।

এসইউজে/এমকেআর/এএসএম