অর্থনীতি

টানা উত্থানে বাজার মূলধন বাড়লো ৪০ হাজার কোটি টাকা

টানা উত্থানে বাজার মূলধন বাড়লো ৪০ হাজার কোটি টাকা

পতন থেকে বের হয়ে দেশের শেয়ারবাজারে টানা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম। একই সঙ্গে বাড়ছে লেনদেনের গতি।

Advertisement

শেয়ারবাজারে গত সপ্তাহজুড়ে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান। ফলে বেড়েছে মূল্যসূচক। একই সঙ্গে বেড়েছে বাজার মূলধন। পাশাপাশি লেনদেনের গতিও বেড়েছে। এর মাধ্যমে টানা ছয় সপ্তাহ শেয়ারবাজারে মূল্যসূচক বাড়লো।

গত সপ্তাহে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন বেড়েছে সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকার ওপরে। আর প্রধান মূল্যসূচক বেড়েছে এক শতাংশের বেশি। দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে প্রায় তিনশো প্রতিষ্ঠান। আর দৈনিক গড় লেনদেন বেড়ে সাতশো কোটি টাকার কাছাকাছি হয়েছে। একই সঙ্গে ছয় সপ্তাহের টানা উত্থানে ডিএসইর বাজার মূলধন ৪০ হাজার কোটি টাকা বেড়ে গেছে।

গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেন হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ২৯০টির স্থান হয়েছে দাম বাড়ার তালিকায়। বিপরীতে দাম কমেছে ৮০টির। আর ২৪টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৮৭ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা। যা আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৬ লাখ ৭৬ হাজার ৭৩৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন বেড়েছে ১০ হাজার ৭৫৯ কোটি টাকা বা ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ।

Advertisement

এর আগে গত ঈদুল ফিতর বা রোজার ঈদের পর থেকে শেয়ারবাজারে টানা ৮ সপ্তাহ দরপতন হয়। টানা ৮ সপ্তাহের পতনে ডিএসইর বাজার মূলধন কমে ২৬ হাজার ৮৮২ কোটি টাকা। আর প্রধান মূল্যসূচক কমে ৫৮২ পয়েন্ট। টানা ৮ সপ্তাহ পতনের পর ঈদুল আজহার ছুটি শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহে শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মিলে।

ওই সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন বাড়ে ৩ হাজার ৬০৭ কোটি টাকা এবং ঈদের পর প্রথম সপ্তাহে বাজার মূলধন বাড়ে ১৫২ কোটি টাকা। তার পরের সপ্তাহে বাড়ে ১০ হাজার ৮২২ কোটি টাকা। এর পরের সপ্তাহে বাড়ে ৪ হাজার ৪৪১ কোটি টাকা। আর গত সপ্তাহের আগের সপ্তাহে বাড়ে ১০ হাজার ৭৩৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ টানা ছয় সপ্তাহের উত্থানে ডিএসই’র বাজার মূলধন বাড়লো ৪০ হাজার ৫১৪ কোটি টাকা।

বাজার মূলধন বাড়ার পাশাপাশি গত সপ্তাহে প্রধান মূল্যসূচকও বেড়েছে। ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স গত সপ্তাহে বেড়েছে ৬৪ দশমিক ৪৪ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ২৭ শতাংশ। আগের সপ্তাহের সূচকটি বাড়ে ১৭৩ দশমিক ৯৭ পয়েন্ট বা ৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

তার আগের চার সপ্তাহে বাড়ে ৬১ দশমিক ২৪ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ২৭ শতাংশ, ৭৮ দশমিক ৪২ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৬৫ শতাংশ, ৪৫ দশমিক ৩২ পয়েন্ট বা দশমিক ৯৬ শতাংশ এবং ৭১ দশমিক ১৭ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৫৩ শতাংশ। এতে ছয় সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক বাড়লো ৪৯৪ পয়েন্ট।

Advertisement

অপর দুই সূচকের মধ্যে ইসলামী শরিয়াহভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক গত সপ্তাহজুড়ে বেড়েছে ১৮ দশমিক ৮৪ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৭১ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ৩৫ দশমিক ৫৭ পয়েন্ট বা ৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ। তার আগের চার সপ্তাহের বাড়ে ৬ দশমিক ২৯ পয়েন্ট বা দশমিক ৫৯ শতাংশ, ২১ দশমিক ৪০ পয়েন্ট বা ২ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ, ৮ দশমিক ৮০ পয়েন্ট বা দশমিক ৮৬ শতাংশ এবং ১৭ দশমিক ৫৪ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৭৩ শতাংশ।

আর বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক গত সপ্তাহজুড়ে বেড়েছে ২৮ দশমিক শূন্য ৪ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৪৭ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ৭২ দশমিক ৫০ পয়েন্ট বা ৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ।

তার আগের চার সপ্তাহে বাড়ে ১৬ দশমিক শূন্য ২ পয়েন্ট বা দশমিক ৮৮ শতাংশ, ৩৭ দশমিক ৯০ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ১৩ শতাংশ, ১৯ দশমিক ৮৩ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ১৩ শতাংশ এবং ৩২ দশমিক ৭৪ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৮৯ শতাংশ।

সবকটি মূল্যসূচক বাড়ার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের গতিও বেড়েছে। সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৬৮১ কোটি ৬২ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৬৩৬ কোটি ২১ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন বেড়েছে ৪৫ কোটি ৪১ লাখ টাকা বা ৭ দশমিক ১৪ শতাংশ।

সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ার। কোম্পানিটির শেয়ার প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ২০ কোটি ৬২ লাখ টাকা, যা মোট লেনদেনের ৩ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা সি পার্ল বিচ রিসোর্টের শেয়ার প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ১৭ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। প্রতিদিন গড়ে ১১ কোটি ৮৯ লাখ টাকা লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ।

এছাড়া লেনদেনের শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ, মিডল্যান্ড ব্যাংক, লাভেলো আইসক্রিম, বিচ হ্যাচারি, ইস্টার্ন লুব্রিকেন্ট, মাগুরা মাল্টিপ্লেক্স এবং অগ্নি সিস্টেম।

এমএএস/এমকেআর/এএসএম