বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী কিয়ারা আদভানি সম্প্রতি জীবনের এক নতুন পরিচয়ে আবির্ভূত হয়েছেন-তিনি এখন একজন মা। গ্ল্যামার ও ক্যামেরার আলো থেকে একটু দূরে, এখন তার জীবনের কেন্দ্রবিন্দু সেই ছোট্ট শিশুকন্যা। নতুন মা হিসেবে কিয়ারা যেমন আবেগে ভেসে যাচ্ছেন, তেমনি সন্তানের যত্নে নিচ্ছেন সব ধরনের সচেতন পদক্ষেপ।
Advertisement
তবে শুধু সেলিব্রিটি বলেই নয়, একজন সচেতন মায়ের মতোই তিনি মেনে চলছেন কিছু জরুরি নিয়ম, যা প্রতিটি নতুন মায়েরই জানা উচিত। মা হয়েছেন আপনি কিংবা হতে চলেছেন-এই পর্বে নবজাতকের যত্নে কী কী করণীয়, কী ভুলগুলো এড়িয়ে চলতে হবে, তা জানা থাকলে সহজ হবে মাতৃত্বের শুরুটা। কিয়ারা আদভানির অভ্যাস থেকে অনুপ্রেরণা নিয়েই থাকছে প্রয়োজনীয় কিছু দিকনির্দেশনা, যা আপনার মাতৃত্বের পথ চলাকে করবে আরও সহজ ও সুশৃঙ্খল।
বুকের সঙ্গে সরাসরি স্পর্শ (স্কিন-টু-স্কিন কেয়ার/ক্যাঙ্গারু কেয়ার)নবজাতকের সঙ্গে মায়ের সরাসরি ত্বকের সংস্পর্শ, বিশেষ করে জন্মের পরপরই, শিশুর জন্য অত্যন্ত উপকারী। এতে শিশুর শারীরিক তাপমাত্রা, হৃদস্পন্দন ও শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকে, একই সঙ্গে বন্ডিং গড়ে ওঠে। কিয়ারা নিয়মিত এই ‘স্কিন-টু-স্কিন’ কেয়ার মেনে চলছেন, যা নবজাতকের মানসিক শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। বাংলাদেশেও বিশেষজ্ঞরা এই পদ্ধতি অনুসরণের পরামর্শ দেন।
ঢাকার শিশু স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. তানিয়া রহমান মিতুল এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘নবজাতক জন্মের পর প্রথম সপ্তাহগুলোতে মায়ের গায়ের স্পর্শ শিশুর জন্য ওষুধের মতো কাজ করে। এতে বাচ্চা দ্রুত মানিয়ে নিতে পারে নতুন পরিবেশের সঙ্গে।’
Advertisement
আরও পড়ুন:
যে ৫ খাবার শিশুর শরীরের ক্ষতি করছে নীরবে মায়ের চুমু শুধু ভালোবাসা নয় বুকের দুধ খাওয়ানো ও খাওয়ার রুটিনবিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) প্রথম ছয় মাস শিশুকে শুধুমাত্র মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর পরামর্শ দেয়। কিয়ারা এই বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে মেনে চলছেন। শিশুর চাহিদা অনুযায়ী তিনি দুধ খাওয়াচ্ছেন, যা বাচ্চার রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
ঘুমের যত্ন ও নিরিবিলি পরিবেশনবজাতকের ঘুম যথেষ্ট ও শান্তিপূর্ণ হওয়া অত্যন্ত জরুরি। এজন্য ঘরের পরিবেশ রাখতে হবে শান্ত, অন্ধকার এবং ঠান্ডা। বাচ্চাকে সবসময় চিত করে শোয়ানো এবং বিছানায় অতিরিক্ত বালিশ, খেলনা বা কম্বল না রাখা; যা আন্তর্জাতিকভাবে নিরাপদ ঘুমের নিয়ম হিসেবে স্বীকৃত।
স্বাস্থ্যপরীক্ষা ও নিয়মিত ডাক্তার দেখানোজন্মের এক সপ্তাহের মধ্যে নবজাতকের প্রথম স্বাস্থ্যপরীক্ষা করা উচিত। কিয়ারা তার সন্তানের জন্য এই নিয়ম মেনে চলেছেন। সময়মতো টিকা নেওয়া, ওজন দেখা, প্রস্রাব-পায়খানা স্বাভাবিক কি না-এসব বিষয় নিয়মিত খেয়াল রাখতে হবে।
Advertisement
মাতৃত্বের প্রথম মাসগুলোতে শিশুর সঙ্গে কথা বলা, গুনগুন করে গান গাওয়া বা মৃদু হাসিমুখে তাকিয়ে থাকা-এসবই শিশুর মানসিক বিকাশে সহায়ক। কিয়ারা মেয়ের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন, মনের মতো গান গাইছেন, কখনো গল্প করছেন-যা শিশুর ভেতরে এক নিরাপদ আবেগ গড়ে তোলে।
যুক্তরাষ্ট্রের শিশু স্বাস্থ্য সংস্থার এক গবেষণায় দেখা গেছে, নবজাতকের সঙ্গে নিয়মিত কথা বললে তার ভাষা শেখার প্রক্রিয়া দ্রুত হয় এবং ভবিষ্যতে মানসিক বিকাশ ভালো হয়।
নিজের যত্নও জরুরিঅনেক মা সন্তান নিয়ে এত ব্যস্ত হয়ে পড়েন যে নিজের খাওয়া-দাওয়া, বিশ্রাম, ঘুম সবকিছু ভুলে যান। কিন্তু একজন সুস্থ মা-ই পারে সুস্থ সন্তান গড়তে। কিয়ারা প্রতিদিন হালকা ব্যায়াম, গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস ও নিয়মিত ঘুমের অভ্যাস বজায় রাখছেন। এতে তার শরীর যেমন সুস্থ থাকছে, তেমনি মানসিক চাপও কমে যাচ্ছে।
পরিচ্ছন্নতা ও নিরাপত্তানবজাতকের ত্বক খুবই সংবেদনশীল। তাই সাবান, লোশন বা পাউডার ব্যবহারে সাবধানতা জরুরি। কিয়ারা ব্যবহার করছেন প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি শিশুদের জন্য নির্ধারিত প্রসাধনী। তিনি নিয়মিত হাত ধুয়ে শিশুকে কোলে নিচ্ছেন এবং অন্যদের ক্ষেত্রেও এ নিয়ম অনুসরণ করছেন।
জেএস/এমএস