অর্থনীতি

আবারও ৮ শতাংশের নিচে আমানতের প্রবৃদ্ধি

আবারও ৮ শতাংশের নিচে আমানতের প্রবৃদ্ধি

বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে ২০২৫ সালের মে মাসে আমানতের প্রবৃদ্ধি আবারও ৮ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে, যা চলতি বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন মাসিক প্রবৃদ্ধি।

Advertisement

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বলছে, মে মাস শেষে মোট আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ৩২ হাজার কোটি টাকা। যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭.৭৩ শতাংশ বেশি।

২০২৪ সালের জুনে আমানতের প্রবৃদ্ধি ছিল ৯.২৫ শতাংশ। কিন্তু এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে এই হার কমতে থাকে। বিশেষ করে ২০২৩ সালের আগস্টে প্রবৃদ্ধি নেমে এসেছিল ৭.০২ শতাংশে, যা ছিল আগের ১৮ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।

আস্থা ফিরলেও অর্থ জমছে না ব্যাংকে

Advertisement

গত মে মাসে প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স প্রবাহ এবং ব্যাংক খাতে কিছুটা আস্থা ফিরে আসা সত্ত্বেও আমানতের প্রবৃদ্ধি ঊর্ধ্বমুখী হয়নি। ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমলেও বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের ঘাটতি থাকায় মানুষের আয় বাড়ছে না। এর ফলে বাড়তি অর্থ সঞ্চয়ের সুযোগও থাকছে না।

আরও পড়ুন ব্যাংক আমানতে ঊর্ধ্বগতি, প্রবৃদ্ধি ছাড়ালো ৮ শতাংশ এক সপ্তাহে ডলারের দাম কমলো ২ টাকা ৯০ পয়সা

মে মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৯.১৭ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়ায় ৯.০৫ শতাংশে। আর জুনে তা আরও কমে হয় ৮.৪৮ শতাংশ। তবে বাস্তবে তা দেশের মজুরি বৃদ্ধির তুলনায় এখনো বেশি বলে মন্তব্য করেন একটি বেসরকারি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তার মতে, মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমলেও তা এখনো বাস্তব আয়ের চেয়ে বেশি। আয় না বাড়লে সঞ্চয়ও বাড়বে না। ফলে আমানতের প্রবৃদ্ধি স্বাভাবিকভাবেই কম।

ব্যাংকের বাইরে নগদ টাকা বেড়েছে এক মাসে ১৬,৪০০ কোটি টাকা

আলোচিত মে মাসে ব্যাংকের বাইরে নগদ টাকার পরিমাণ আবারও বেড়ে যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিল শেষে মানুষের হাতে নগদ ছিল ২.৭৭ লাখ কোটি টাকা, যা মে মাসে বেড়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ৯৪ হাজার কোটি টাকায়। অর্থাৎ, মাত্র এক মাসে বেড়েছে প্রায় ১৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮.৫৪ শতাংশ বেশি।

Advertisement

ঋণ প্রবৃদ্ধিতেও ধীরগতি

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০২৪ সালের মে মাসে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ৬.৯৫ শতাংশ, যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ৯.৮ শতাংশের তুলনায় অনেক কম। বিশ্লেষকরা এর জন্য রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট এবং অনাদায়ি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়াকে দায়ী করছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগ ও সীমাবদ্ধতা

তবে ব্যাংক খাতে আস্থাহীনতা কাটাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে কমপক্ষে ১৩টি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন, নামসর্বস্ব ঋণ বন্ধে পদক্ষেপ এবং লিকুইডিটি সাপোর্টসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

ফলে দুর্বল ব্যাংকগুলোর পরিস্থিতির আরও অবনতি না হলেও অবস্থা স্থিতিশীল হয়নি। এখন অনেক ব্যাংক আমানতের জন্য ১৪ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দিতে বাধ্য হচ্ছে, তবুও মানুষের হাতে জমানোর মতো বাড়তি অর্থ না থাকায় আমানতের প্রবৃদ্ধি থমকে আছে।

ইএআর/ইএ/এএসএম