মামলার বিচার হয়নি, সাজাও হয়নি। তারপরও কারাগারে কেটেছে ৩০ বছর ২ মাস ১৯ দিন। এবার মুক্ত আকাশে ফিরেছেন কানু মিয়া।
Advertisement
মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) দুপুরে হবিগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি। কানু মিয়ার বাড়ি হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার সিংহগ্রাম গ্রামে। তার বাবা মৃত চিনি মিয়া।
যুবক বয়সে কানু মিয়া ছিলেন মানসিক রোগী। কারা ফটক থেকে দুই ভাই তাকে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে লিগ্যাল এইড আইনজীবী এম এ মজিদ। তিনি বলেন, ‘এটি অত্যন্ত অমানবিক। কোনো বিচার ছাড়া একজন মানুষকে ৩০ বছর কারাগারে আটকে রাখা হয়। তাও আবার মানসিক রোগী। এটি কীভাবে একটি সভ্য সমাজে চিন্তা করা যেতে পারে?’
Advertisement
আইনজীবী এম এ মজিদ বলেন, কানু মিয়া মুক্তি পাওয়ায় আমি খুবই আনন্দিত। একজন মানুষ ন্যায়বিচার পেয়েছেন। এর চেয়ে বড় আনন্দ আর কী হতে পারে!
হবিগঞ্জের সরকারি কৌঁসুলি আব্দুল হাই বলেন, ৩০ বছরেরও বেশি সময় পর একজন মানসিক রোগী আসামির জামিনের উদ্যোগ নেওয়া একটি মহতী উদ্যোগ।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৫ সালের ২৫ মে ঘুমের ঘোরে মা মেজেষ্টর বিবিকে কোদাল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন কানু মিয়া। পরে গ্রামবাসী তাকে আটক করে পুলিশে দেয়। পরের দিন ৩ লাইনের একটি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন কানু মিয়া। তখন থেকেই তিনি কারাগারে বন্দি ছিলেন।
এক দুই বছর নয়, একাধারে ৩০ বছর ২ মাস ১৯ দিন কেটেছে কারাগারে। প্রথমে ভাই এবং স্বজনরা কানু মিয়াকে দেখতে কারাগারে গেলেও একটা সময় পর আর যাননি। পরিবারের অনেক সদস্য ভুলেই গিয়েছিলেন কানু মিয়া জীবিত না মারা গেছেন।
Advertisement
সম্প্রতি কানু মিয়ার বিনা বিচারে আটক থাকার বিষয়টি নজরে আসে হবিগঞ্জের জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার (সিনিয়র সহকারী জজ) মুহম্মাদ আব্বাছ উদ্দিনের। তিনি কানু মিয়ার আইনগত প্রতিকার পাওয়ার উদ্যোগ নেন। মেজেষ্টর বিবি হত্যা মামলার বাদী নিহতের ছেলে মনু মিয়ার সন্ধান পান তিনি। একইসঙ্গে মনু মিয়ার আরেক ভাই নাসু মিয়ার খোঁজখবর নিয়ে তাদের লিগ্যাল এইড অফিসে নিয়ে আসেন সিনিয়র সহকারী জজ মুহাম্মদ আব্বাছ উদ্দিন।
কানু মিয়ার জামিনের জন্য সরকারিভাবে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে জেনে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন মনু মিয়া ও নাসু মিয়া। তারা কানু মিয়ার মুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন। হত্যা মামলার একমাত্র আসামি কানু মিয়া মানসিক রোগে আক্রান্ত হওয়ায় হাইকোর্টের নির্দেশে মামলার বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়।
মানসিক রোগে আক্রান্ত আসামির জামিন মঞ্জুর হলে তার নিরাপত্তা, তার দ্বারা আর যাতে কেউ আক্রান্ত না হন তার প্রাথমিক নিশ্চয়তা, খাদ্য-বাসস্থানের নিশ্চয়তা, আদালতের নির্দেশমতো হাজির করা ইত্যাদি বিষয় সম্পৃক্ত থাকায় বিষয়টি নিয়ে লিগ্যাল এইডের প্যানেলভুক্ত আইনজীবী এম এ মজিদের সঙ্গে কথা বলেন লিগ্যাল এইড অফিসার মুহম্মাদ আব্বাছ উদ্দিন।
সার্বিক দিক বিবেচনায় সোমবার (১৪ জুলাই) হবিগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ আদালতে কানু মিয়ার জামিন আবেদন করেন লিগ্যাল এইডের আইনজীবী এম এ মজিদ। জেলা ও দায়রা জজ জেসমিন আরা বেগম জামিন মঞ্জুর করেন। এতে দীর্ঘ ৩০ বছরেরও বেশি সময় পর কারাগার থেকে জামিনে মুক্তির সুযোগ তৈরি হয় কানু মিয়ার।
সৈয়দ এখলাছুর রহমান খোকন/এসআর/জেআইএম