জাতীয়

পল্লবীতে ৫ কোটি টাকা চাঁদা দাবি: ঘটনার শুরু ও শেষ যেভাবে

পল্লবীতে ৫ কোটি টাকা চাঁদা দাবি: ঘটনার শুরু ও শেষ যেভাবে

• ৪ খুন ও ২২ মামলার আসামি জামিল• সাত মামলায় একদিনে পান জামিন• চাঁদা না দিলে আসে হত্যার হুমকি• ভারাটে লোকদের দিয়ে চলে ‘সন্ত্রাসী’ কর্মকাণ্ড• রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের প্রশ্রয় দেখছেন ব্যবসায়ীরা

Advertisement

মাত্র দুদিনের ব্যবধানে রাজধানী ঢাকার দুটি ঘটনা চাঞ্চল্য তৈরি করেছে সারাদেশে। গত বুধবার ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব ও পূর্ব শত্রুতার জেরে মিটফোর্ড হাসপাতালের ৩ নম্বর গেটের সামনে কংক্রিট বোল্ডার দিয়ে শরীর ও মাথা থেতলে হত্যা করা হয় ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে। এর দুদিন না যেতেই গত শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর পল্লবীতে ‘পাঁচ কোটি টাকা চাঁদা দাবিতে’ একটি আবাসন প্রতিষ্ঠানের কার‌্যালয়ে হামলা ও গুলির ঘটনা ঘটে।

পল্লবীর ঘটনায় মূলহোতা হিসেবে নাম এসেছে জামিল নামে এক ব্যক্তির নাম। এরপরই কৌতুহল বাড়ে, কে এই জামিল? কী তার পরিচয়? গত শুক্রবার বিকেলে একদল লোক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আবাসন প্রতিষ্ঠান এ কে বিল্ডার্সের কার‌্যালয়ে হামলা চালায়। হামলাকারীরা চারটি গুলি করে বলে পুলিশ জানায়। দুর্বৃত্তদের গুলিতে শরিফুল ইসলাম নামে প্রতিষ্ঠানটির একজন কর্মকর্তা আহত হন। পরে তাকে ভর্তি করা হয় কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে।

এ ঘটনায় এরই মধ্যে পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৪। গ্রেফতারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে র‌্যাব বলছে, তারা (গ্রেফতাররা) জনৈক জামিলের প্ররোচনায় এ হামলায় অংশ নেয়। জামিল পল্লবী এলাকার চাঁদাবাজ চক্রের ‘গড-ফাদার’ হিসেবে পরিচিত। সম্প্রতি পল্লবীর ওই গোলাগুলির ঘটনায় চাঁদাবাজ হিসেবে তার নাম সামনে এলেও অতীতে তার বিরুদ্ধে চার চারটি খুনের অভিযোগও রয়েছে।

Advertisement

আগের চারটি খুনের মামলাসহ মোট ২২ মামলায় সাজাভুক্ত আসামি জামিল একদিনেই পেয়েছেন সাত মামলায় খালাস। সুতরাং কাদের ছত্রছায়ায় তারা নিয়ন্ত্রিত হয় ও বিপদে উদ্ধার হচ্ছেন তা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। স্থানীয় ভুক্তভোগীদের ধারণা, বর্তমান সময়ে ক্ষমতাধর রাজনৈতিক দলগুলোর প্রভাবশালী নেতাদের ছত্রছায়ায় তারা এ ধরনের কর্মকাণ্ড করছেন। অপরাধ করলেও যাদের শাস্তির মুখোমুখি হতে হচ্ছে না।

শুধু জামিল নন, তার ভাই মামুনও শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময়ে যিনি ছিঁচকে চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। কিন্তু সেই মামুন নাটকীয়ভাবে শীর্ষ সন্ত্রাসী হয়ে ওঠেন ২০০২ সালে

বলা যায় কেঁচো খুঁড়তে বেরিয়ে এসেছে সাপ। র‌্যাব জানিয়েছে, শুধু জামিল নন, তার ভাই মামুনও শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময়ে যিনি ছিঁচকে চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। কিন্তু সেই মামুন নাটকীয়ভাবে শীর্ষ সন্ত্রাসী হয়ে ওঠেন ২০০২ সালে। তখন পুলিশের হাতে আটক এক মাদককারবারিকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় পল্লবী থানায় সশস্ত্র হামলা চালান মামুন ও তার বাহিনী। প্রায় দুই ঘণ্টা কথিত বন্দুকযুদ্ধের পর অস্ত্রসহ ধরা পড়েন মামুন। দুপক্ষের গোলাগুলিতে আহত হন তার এক সহযোগী।

এরপর বছরখানেক কারাভোগের পর প্রভাবশালী একজন রাজনৈতিক নেতার যোগসাজশে একদিনে সাতটি মামলায় জামিন নিয়ে ২০০৪ সালে তিনি পাড়ি জমান ভারতে। আর এ ঘটনাটিও নেপথ্যে থেকে মামুন ও তার সহযোগীদের মাধ্যমে ঘটিয়েছিলেন জামিল।

Advertisement

পল্লবীতে ‘পাঁচ কোটি টাকা চাঁদা দাবিতে’ আবাসন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও গুলির ঘটনা নিয়ে গত রোববার এ কে বিল্ডার্সের চেয়ারম্যানের ছেলে আমিনুল এহসানের সঙ্গে কথা হয় জাগো নিউজের। তিনি বলেন, ‘আমরা এখানে অন্তত ২০ বছর বসবাস করছি। যখন থেকে আমরা এখানে বসবাস শুরু করি তখন এই এলাকায় পানি ছিল। আমরাসহ আরও কয়েকটা আবাসন কোম্পানি এখানে এসে আবাসন প্রকল্পের কাজ শুরু করি। তারপর থেকে এলাকাটি ধীরে ধীরে বাসযোগ্য হয় এবং মানুষ বসবাস শুরু করে।’

আরও পড়ুন

পল্লবীতে ৫ কোটি টাকা ‘চাঁদা না পেয়ে’ হামলার ঘটনায় গ্রেফতার আরও ৫ পল্লবীতে ৫ কোটি টাকা ‘চাঁদা না পেয়ে’ হামলা-গুলি ৫ কোটি টাকা চাঁদা দাবি: ৩ আসামির রিমান্ড নামঞ্জুর

‘বিগত ২০ বছরে একবারের জন্যও কোনো ধরনের গুলির ঘটনা তো দূরের কথা চাঁদাবাজির কোনো ঘটনাও ঘটেনি। এ এলাকার স্থানীয় সবাই কোঅপারেটিভ ছিল। আমরা সবাই মিলে একসঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করছিলাম।’

‘চার-পাঁচ মাস আগে এলাকার অন্য যে কোম্পানিগুলো আছে সবার সঙ্গে চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটছিল। বড় কোনো ঘটনা ঘটেনি। সবাই চাঁদা দিয়ে সমঝোতা করে। গত ২৭ জুন আমাদের কাছে একটি ফোনকল আসে। ওপাশ থেকে বলা হয়- ‘আমি জামিল। আমি কে একটু খোঁজখবর নিয়ে দেখেন, জানতে পারবেন। আপনারা তো এখানে ব্যবসা-বাণিজ্য করেন। এক সপ্তাহের মধ্যে পাঁচ কোটি টাকা দিতে হবে।’ আমরা আর ওই লোকের কথায় তেমন গুরুত্ব দিইনি।’

আমিনুল এহসান বলছিলেন, ‘ওই ব্যক্তি চাঁদা চাওয়ার ৩-৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৫-২০ জন লোক পাঠিয়ে দেন। তারা এসে আমাদের অফিসের ইঞ্জিনিয়ারের মাথায় পিস্তল তাক করে মারধর ও হেনস্তা করে। অফিস ভাঙচুর করে। লেবারসহ যতজন ছিল সবার ফোন নিয়ে যায় (আনুমানিক ১৪টি ফোন)। যাওয়ার সময় বলে যায়, বড় ভাইয়ের সঙ্গে (ওই ব্যক্তির সঙ্গে) কথা বলেন।’

ওইদিনও শুক্রবার হওয়ায় আমরা অফিস খুলেই সবাইকে বলে দিয়েছিলাম একটু সতর্ক থাকার জন্য। আসরের নামাজের পর ৫-৬টি অটোরিকশায় ২৫-৩০ জন চলে আসে। তিন-চারটি মোটরসাইকেলেও বেশ কয়েকজন আসে। পিস্তল উঁচু করে বাসিন্দাদের উদ্দেশে গালাগাল দিয়ে বলতে থাকে, ‘যাদের জানের মায়া আছে তারা ঘরে ঢুকে যা, দোকান বন্ধ কর’।- আমিনুল এহসান

‘এরপর আমরা ওই ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করি। কিন্তু তাদের ডিমান্ড শুনে আমরা জানাই এতো সম্ভব না। আমরা তাদের একটা অ্যামাউন্ট বলি। আমাদের আর তাদের চাওয়ার মধ্যে পার্থক্য অনেক। তাদের সঙ্গে এসব বিষয়ে আলোচনা চলছিল। অথচ পরের শুক্রবারে আবারও লোকজন পাঠানো হয়। এবার তারা আরও ভয়ানকভাবে হামলা করে। তারা এসে একজনকে চাপাতি দিয়ে কোপ দেয়, কিন্তু গায়ে না লেগে পাইপে লাগে আর পাইপ কেটে যায়। অফিসে যতগুলো কম্পিউটার সবগুলোর হার্ডডিস্কসহ কনস্ট্রাকশন সাইটের যত যন্ত্রপাতি ছিল সব লুট করে নিয়ে যায়।’

‘আমরা আতঙ্কে সাইটের কাজ সাময়িক বন্ধ করে দিয়ে সবাইকে ছুটিতে পাঠিয়ে দিই। এরপর চাঁদা চাওয়া ব্যক্তিদের সঙ্গে সমঝোতার জন্য কথাবার্তা বলতে থাকি। যেহেতু সব কাজ বন্ধ ছিল, আমরাও দ্রুত মীমাংসা চাচ্ছিলাম। কিন্তু বারবারই চাঁদার পরিমাণ জটিলতা তৈরি হচ্ছিল। একপর‌্যায়ে আমরা বলতে বাধ্য হই যে, আমরা এত পরিমাণ চাঁদা দিতে পারছি না ভাই, আপনারা যা পারেন করেন।’

ঘটনার বর্ণনা করে আমিনুল এহসান বলেন, ‘আমরা ধারণা করতে পেরেছিলাম যে, যেহেতু সমঝোতা হচ্ছে না অফিস খুললেই তারা হয়তো আক্রমণ করবে। তাই আমরা বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) থানায় একটি জিডি করি। ঠিক তার পরদিন অফিস খুলতেই ঘটনাটি ঘটে। যেহেতু তারা আগের দুই শুক্রবার এসেছে, তাই ওইদিনও শুক্রবার হওয়ায় আমরা অফিস খুলেই সবাইকে বলে দিয়েছিলাম একটু সতর্ক থাকার জন্য। আসরের নামাজের পর ৫-৬টি অটোরিকশায় ২৫-৩০ জন চলে আসে। তিন-চারটি মোটরসাইকেলেও বেশ কয়েকজন আসে। এসে রাস্তায় টহল ও রেকি করা শুরু করে। কিছুটা দূরে গিয়ে তারপর সবাই এক জায়গা সংগঠিত হয়। এরপর পিস্তল উঁচু করে বাসিন্দাদের উদ্দেশে গালাগাল দিয়ে বলতে থাকে, ‘যাদের জানের মায়া আছে তারা ঘরে ঢুকে যা, দোকান বন্ধ কর’।’

‘আমাদের কর্মীদের অনেকে তখন নামাজ পড়তে গেছে। আমরা পাঁচ-ছয়জন ছিলাম। আমরা ওদেরকে প্রতিহত করতে রাস্তায় গিয়ে দাঁড়াই। ওরা ভয় দেখানোর জন্য পিস্তল বের করে উপরের দিকে ফাঁকা গুলি করে। আমরা ভয় না পেয়ে এগিয়ে গিয়ে ওদের ধাওয়া করি। ওরা কিছুা পিছু হটে। আমাদের একজন রড কাটছিল, সে তিনটা রড নিয়ে প্রথমে ধাওয়া করে। এরপর ওরা এলোপাতাড়ি গুলি করতে থাকে। আমাদের একজন কর্মচারীর পায়ে গুলি লাগে। তাকে উদ্ধার করতে আমাদের লোকজন লাঠিসোঁঠা নিয়ে ধাওয়া করি। পরে তারা পালিয়ে যায়।’

আমিনুল এহসান বলছিলেন, ‘আজও (১৩ জুলাই) তারা (চাঁদাবাজ জামিল) ফোন করেছিল। বলে- ‘বিষয়টাতো মীমাংসা করলেন না’। আমরা এলাকার ব্যবসায়ীরা আতঙ্কে আছি।’

এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, জামিল বা তার সহযোগীদের জেলখানায়ও বেশি দিন আটকে রাখা যায় না। এর আগেও জামিলের অনেক অপরাধের বিষয় সামনে এসেছে। সাত মামলা থেকে একদিনে খালাস পেয়ে কারামুক্তি পাওয়ার আসামি সে। ২০০২ সালে পুলিশের হাতে আটক মাদককারবারিকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় প্রায় দুই ঘণ্টা ‘বন্দুকযুদ্ধে’ পল্লবী থানায় সশস্ত্র হামলা চালানোর অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

হামলাকারীরা ওই এলাকার স্থানীয় কি না জানতে চাইলে আমিনুল এহসান বলেন, ‘তারা একজনও এই এলাকার স্থানীয় না। আশেপাশের এলাকারও না। ছোট ছোট ছেলেপেলে, বয়সও খুব বেশি না। তাদের দেখে সন্ত্রাসী টাইপেরও মনে হয়নি। দেখে মনে হয়েছে, কিছু টাকার বিনিময়ে তারা হয়তো এভাবে সশস্ত্র হামলা চালাতে চলে এসেছে।’

শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নামে মাঝেমধ্যেই বেনামি নম্বর থেকে বিভিন্নজনের ফোনকল আসে। চাঁদার জন্য কোথাও কোথাও হামলা হয়। তবে হামলাকারীদের গ্রেফতারের পর দেখা যায়, তারা খুবই সাধারণ মানুষ। টাকার বিনিময়ে তাদের ভাড়া করা হয়েছে।- শাহিদুল ইসলাম

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একজন ব্যবসায়ী জাগো নিউজকে বলেন, ‘আজও (১৩ জুলাই) তাদের ৭/৮ জন এখানে এসে ঘোরাঘুরি করেছে। কিছুক্ষণ আগেই তাদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম। আমরা সবাই আতঙ্কে আছি।’

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পল্লবী এলাকার সহকারী কমিশনার শাহিদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নামে মাঝেমধ্যেই বেনামি নম্বর থেকে বিভিন্নজনের ফোনকল আসে। চাঁদার জন্য কোথাও কোথাও হামলা হয়। তবে হামলাকারীদের গ্রেফতারের পর দেখা যায়, তারা খুবই সাধারণ মানুষ। টাকার বিনিময়ে তাদের ভাড়া করা হয়েছে।

তিনি বলেন, একসময় ‘ফেনসিডিলের স্বর্গ’ হিসেবে চিহ্নিত ছিল পল্লবীর ধ-ব্লক ও সাংবাদিক কলোনি। সেখানকার মাদক সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা ছিলেন মামুন। মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী ইব্রাহিম, সাহাদাত, তাজগীরের রামরাজত্বের মধ্যেই নাটকীয় উত্থান ঘটে মামুনের। চাঁদা না পেয়ে ২০০৮ সালে পল্লবীতে নজরুল ইসলাম চৌধুরী মন্টু নামে এক ঝুট ব্যবসায়ীকে খুন করার মামলার অন্যতম আসামি মামুন। ২০১২ সালে তার বাহিনীর হাতে খুন হন পোশাক ব্যবসায়ী রমজান। এ হত্যা মামলায় মামুনকে প্রধান আসামি হিসেবে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ।

‘শুধু তা-ই নয়, ১৯৯৬ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত মামুনের বিরুদ্ধে পল্লবী ও মোহাম্মদপুর থানায় হত্যা, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধে ২৭টি মামলা হয়’- জানান শাহিদুল ইসলাম।

পুলিশ জানায়, ২০০১ সালে কিছুদিন কারাভোগের পর ২০০৪ সালে ভারতে পালিয়ে যান। মামুনের আপন বড় ভাই মজিবর রহমান জামিল পলাতক আরেক হেভিওয়েট সন্ত্রাসী। ছোট ভাই মশিউর রহমান মশু গাজীপুরের সাবেক সংসদ সদস্য আহসান উল্লাহ হত্যা মামলার ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি। তিন ভাই মিলে দীর্ঘদিন ধরে ভারতে অবস্থান করে মিরপুরের আন্ডারওয়ার্ল্ডের বড় একটা অংশ নিয়ন্ত্রণের ছক করেন। ভারতে নিজের অবস্থান শক্তিশালী করতে ত্রিপুরায় তখনকার ক্ষমতাসীন দলের এক এমএলএ’র ভাইয়ের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলে গোপনে তার বোনকে বিয়ে করেন।

আরও পড়ুন

দ্বিগুণ হলো আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স ফি, চাইলেই মিলবে না অস্ত্র

ভারতীয় পরিচয় নিয়ে একটি পাসপোর্ট তৈরি করে নিয়মিত ব্যাংকক, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও নেপাল ভ্রমণ করেন। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর ওই এমএলএ মামুনকে অবৈধ অনুপ্রবেশসহ আরেকটি অপরাধের সংশ্লিষ্টতা দেখিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেন। ২০১৮ সালে পশ্চিমবঙ্গের জেল থেকে মুক্ত হয়ে পালিয়ে যান নেপাল। সেখানে আশ্রয় নেন ধানমন্ডি-হাজারীবাগ এলাকার পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী লেদার লিটনের কাছে। ওই শীর্ষ সন্ত্রাসীর পরামর্শেই মামুন ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ঢাকায় আসে এক রাজনৈতিক নেতাকে কিলিংয়ের মিশন নিয়ে। কেউ কেউ বলছেন, ওই সন্ত্রাসীর ফাঁদে পা দেওয়াই কাল হয় মামুনের।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) ২০২১ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি সকাল পৌনে সাতটায় রাজধানীর পল্লবীর বাইতুন নুর জামে মসজিদ এলাকা থেকে মামুনকে গ্রেফতার করে। রাষ্ট্রবিরোধী একটি সন্ত্রাসী চক্র টার্গেট কিলিং ও ব্যাপক সহিংসতা সৃষ্টির মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করার উদ্দেশে চোরাবাজার থেকে অবৈধভাবে আগ্নেয়াস্ত্র সংগ্রহের চেষ্টা করছে- এমন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযানে গিয়ে পল্লবীর বাইতুন নুর জামে মসজিদের পাশের রাস্তা থেকে সন্দেহজনক হিসেবে মফিজুর রহমান মামুনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে পুলিশ।

তাকে গ্রেফতারের পর ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, আটক ব্যক্তি শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুন মর্মে জানা যায়। তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, খুন, মাদক, অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার ও ডাকাতির অভিযোগে পল্লবী থানায় ২৭টি মামলা, ১৫টি গ্রেফতারি পরোয়ানা ও দুটি সাজা পরোয়ানার তথ্য পাওয়া যায়।

পল্লবী থানায় নথিপত্র পর‌্যালোচনায় জানা যায়, ২০০৫ সালে ৫ নভেম্বর মোহাম্মদপুর থানায় দায়েরকৃত মামলায় মামুনের পাঁচ বছরের জেল, পল্লবী থানার ২০০৭ সালের ১০ অক্টোবরের মামলায় যাবজ্জীবন এবং ১৯৯৬ সালের ৬ এপ্রিলের মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি মামুন। ২০২১ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি গ্রেফতারের মাত্র ৪৫ দিনের মাথায় জামিনে মুক্ত হয়ে পালিয়ে ভারতে পাড়ি জমান মামুন।

কেআর/এমকেআর/এমএস