আন্তর্জাতিক

চাকরিহারা শিক্ষকদের বিক্ষোভে উত্তাল পশ্চিমবঙ্গ

চাকরিহারা শিক্ষকদের বিক্ষোভে উত্তাল পশ্চিমবঙ্গ

স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত অথচ পরবর্তীতে চাকরি হারানোদের আন্দোলনে ফের উত্তাল পশ্চিমবঙ্গের রাজপথে। চাকরি ফিরে পাওয়ার দাবিতে সোমবার (১৪ জুলাই) সকাল থেকে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী রাজ্য সচিবালয় নবান্নের সামনে জড়ো হতে শুরু করেন। এতে রাজ্যের প্রশাসনিক কেন্দ্রের সামনে চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।

Advertisement

এদিন সকাল থেকেই হাওড়া স্টেশন চত্বর থেকে মিছিল শুরু করেন চাকরিহারা শিক্ষকরা। নবান্ন অভিমুখে এই প্রতিবাদী মিছিল হাওড়া ময়দান অতিক্রম করে পৌঁছালে মল্লিক ফটোকের কাছে তাদের আটকে দেয় বিশাল পুলিশ বাহিনী। রাজ্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে বঙ্কিম সেতুর নিচ থেকে নবান্ন পর্যন্ত অঞ্চলজুড়ে তৈরি করা হয় নিরাপত্তা বেষ্টনী। ব্যারিকেড, গার্ডরেল ও কমব্যাট ফোর্স মোতায়েন করে সুনির্দিষ্টভাবে নবান্ন যাওয়ার পথ অবরুদ্ধ করা হয়।

মিছিলে অংশগ্রহণকারী বিক্ষোভকারীদের দিকে লক্ষ্য রেখে চালানো হয় ড্রোন নজরদারি। পুলিশের পক্ষ থেকে মাইকিং করে একাধিকবার অনুরোধ জানানো হয় যাতে কেউ আইন হাতে তুলে না নেয়। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা ব্যারিকেড ভেঙে নবান্নের দিকে এগোতে চাইলে শুরু হয় ধাক্কাধাক্কি, উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় ও ধস্তাধস্তি।

চাকরি ফিরে পাওয়ার দাবিতে ক্ষুব্ধ এক শিক্ষক বলেন, দুর্নীতির মাধ্যমে যারা চাকরি পেয়েছে, সরকার তাদের পাশেই দাঁড়াচ্ছে। অথচ আমরা যারা প্রকৃত যোগ্য, মেধার ভিত্তিতে চাকরি পেয়েছিলাম, তাদেরই আজ বঞ্চিত করা হচ্ছে।

Advertisement

মিছিলে এক চাকরিহারা শিক্ষক কয়েদির পোশাকে অংশ নেন। তার বুকে ঝোলানো পিচবোর্ডে লেখা ছিল, ‘মগজেতে আছে আমার কুশিক্ষার মন্ত্র, মেরুদণ্ড ভাঙবো মেধার, শিকার ষড়যন্ত্র।’ এ এক প্রতীকী প্রতিবাদ যা গোটা আন্দোলনের মর্মবাণীকে ফুটিয়ে তোলে।

আরও এক শিক্ষক বলেন, যারা আমাদের ক্লাসরুম থেকে রাস্তায় নামতে বাধ্য করেছে, তাদের জবাব দিতেই আমরা নবান্ন যাচ্ছি। অথচ আমাদেরই পথ রুখতে এত প্রস্তুতি! আমরা কি অপরাধ করেছি? তিনি জানান, তাদের একটি প্রতিনিধিদল রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থের সঙ্গে দেখা করবে।

শেষ পর্যন্ত পুলিশের সহায়তায় কিছু শিক্ষক মুখ্যসচিব মনোজ পন্থের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে তারা স্পষ্ট জানিয়ে দেন, যারা যোগ্য, সেইসব চাকরিচ্যুতদের যেন পুনরায় নিয়োগ দেওয়া হয় ও তা যেন কোনো পুনরায় পরীক্ষার প্রক্রিয়া ছাড়াই হয়।

উল্লেখ্য, ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ২০১৬ সালের এসএসসি প্যানেল বাতিল করার পর প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী চাকরি হারান। সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, যারা যোগ্য, তাদের জন্য পুনরায় নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে বলা হয়েছে। এরই মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ সরকার সে অনুযায়ী নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করেছে। তবে চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের একাংশ সেই পরীক্ষায় বসতে নারাজ।

Advertisement

এই পরিপ্রেক্ষিতেই এই ‘নবান্ন অভিযান’- চাকরি ফেরত পাওয়ার মরিয়া দাবিতে রাজপথে নেমে আসা হাজার হাজার শিক্ষকের গর্জন যেন রাজ্য সরকারের দিকেই ছুঁড়ে দেওয়া এক স্পষ্ট বার্তা, ‘মেধার প্রতি অবিচার চলবে না।’

ডিডি/এসএএইচ