জাতীয়

সোহাগ হত্যার বিচার চেয়ে ব্যবসায়ীদের ৭ দিনের আলটিমেটাম

সোহাগ হত্যার বিচার চেয়ে ব্যবসায়ীদের ৭ দিনের আলটিমেটাম

পুরান ঢাকায় প্রকাশ্যে ভাঙারি ব্যবসায়ী মো. সোহাগকে নৃশংসভাবে হত্যার প্রতিবাদে মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতি ৬ দফা দাবি জানিয়েছে। এসব দাবি আগামী সাত দিনের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আলটিমেটাম দিয়েছেন তারা।

Advertisement

সোমবার (১৪ জুলাই) মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজি সৈয়দ মো. বশির উদ্দিন, সমিতির সাবেক সভাপতি ও গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাফেজ হাজি এনায়েতুল্লাহ, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক হাজি মো. গোলাম মাওলা, এফবিসিসিআই’র সাবেক পরিচালক হাফেজ হারুন, ব্যবসায়ী ঐক্য ফোরামের সভাপতি ও সাবেক ঢাকা চেম্বারের সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম, এফবিসিসিআই’র সাবেক পরিচালক আবুল হাশেম, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আলহাজ ফারুক আহমেদ, কৃষ্ণ সাহা, অরুণ সাহাসহ পুরান ঢাকার বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতা ও অসংখ্য ব্যবসায়ী।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত ৯ জুলাই মিটফোর্ড হাসপাতাল সংলগ্ন রাস্তায় প্রকাশ্যে পুরান ঢাকার ভাঙারি ব্যবসায়ী মো. সোহাগকে যেভাবে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে, তা গোটা ব্যবসায়ী সমাজকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। এ ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং পুরান ঢাকায় ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ছয় দফা দাবি উত্থাপন করা হয়।

Advertisement

তাদের দাবিগুলো হলো-

১. সোহাগ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে।২. ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা ও স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।৩. এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের সাতদিনের মধ্যে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে হবে।৪. পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী এলাকাগুলোতে সেনাবাহিনীর টহল বাড়াতে হবে।৫. সন্ত্রাস, কিশোর গ্যাং, চাঁদাবাজি ও মাদক নির্মূল করতে পুলিশের সক্রিয় ভূমিকা নিশ্চিত করতে হবে।৬. উপরোক্ত দাবিগুলো সাতদিনের মধ্যে কার্যকর না হলে দেশজুড়ে কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

বক্তারা আরও বলেন, দেশের অর্থনীতিতে পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীরা বিশাল ভূমিকা পালন করলেও তাদের নিরাপত্তা এখন হুমকির মুখে। ফলে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে দেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

হাজি এনায়েতুল্লাহ বলেন, প্রকাশ্যে পাথর মেরে হত্যার ঘটনা জঙ্গলেও হয় না। পাশেই ছিল আনসার বাহিনী। অস্ত্র ছিল, তারপরও তারা কিছুই করেনি। ঘটনা দুদিন পর প্রকাশ হলো। সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ না পেলে ব্যবসায়ী সোহাগকে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হতো। পরিবারের অভিযোগ, পুলিশ মামলা নিলেও অনেকে বাদ পড়েছে, অনেককে জড়ানো হয়েছে। কেন এমনটা হবে? তদন্তের আগে এমনটা হলে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ তদন্ত কীভাবে হবে?

Advertisement

তিনি বলেন, আমরা রাজস্ব দেই, সরকার দেশ চালায়। আমাদের রাজস্ব রক্ষায় দেশ চলবে আর সেখানে ব্যবসায়ীরা নিরাপদে থাকবে না এটা হতে পারে না। আমরা আর চাঁদাবাজি প্রশ্রয় দেবো না। বাঁশের লাঠি দোকানে রাখুন। আর চাঁদাবাজি নয়, সবাই ঐক্যবদ্ধ আছি থাকবো।

হাফেজ হারুন বলেন, ব্যবসায়ীরা প্রতিটি মুহূর্তে আতঙ্কিত। আমরা ৫০০ লোক বসবাস করি, সেখানে পাঁচজনের কাছে কেন জিম্মি হবো? আপনারা বাঁশের লাঠি রাখবেন। চাঁদাবাজের কোনো দল নেই, তাদের রুখে দিতে হবে। পাশাপাশি মৌলভীবাজার-চকবাজার এলাকায় সেনাবাহিনীর ক্যাম্প স্থাপনের আহ্বান জানাই।

ব্যবসায়ী নেতা আবুল হাশেম বলেন, পুরান ঢাকায় সারাদেশ থেকে হাজার হাজার মানুষ আসেন মালামাল নিতে। ব্যবসায়ীকে পাথর মেরে হত্যায় আমরা নিরাপত্তাহীনতায় আছি। ক্রেতারাও নিরাপদ নেই। আমরা এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখতে চাই না। আমরা চাই ব্যবসায়ীরা শান্তিতে ব্যবসা করবেন, এই নিরাপত্তা সরকারকে দিতে হবে।

শফিকুল ইসলাম মিলন বলেন, ব্যবসায়ীরা ঐক্যবদ্ধ আছে, কোনো অন্যায়কে আমরা প্রশ্রয় দেবো না। আমাদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনতিবিলম্বে এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই। আর কোনো চাঁদাবাজি বা হত্যা চাই না, ব্যবসার পরিবেশ চাই।

মহানগর দোকান মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীন মোহাম্মদ দীনু বলেন, আমার ব্যবসায়ীকে উলঙ্গ করে পাথর মেরে হত্যা কর হয়েছে, যা বর্বরতাকেও হার মানায়। আজ ব্যবসায়ীকে প্রকাশ্যে হত্যার মাধ্যমে কী বার্তা দেওয়া হলো? সোহাগ হত্যার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিচার চাই।

ইএআর/এএমএ/এমএস