ফরাসি লাক্সারি ফ্যাশন হাউজ হারমেসের আইকনিক বারকিন ব্যাগকে বিশ্বজুড়ে মর্যাদা ও বিলাসিতার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে এবার ফ্যাশন ইতিহাসে নতুন রেকর্ড গড়েছে এই ব্যাগ। সর্বপ্রথম তৈরি হওয়া বারকিন ব্যাগটি নিলামে বিক্রি হয়েছে ১ কোটি ডলারে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ১২১ কোটি টাকারও বেশি। এটিই এখন পর্যন্ত নিলামে বিক্রি হওয়া সবচেয়ে দামি হ্যান্ডব্যাগ বা হাতব্যাগ।
Advertisement
কালো লেদারের এই হ্যান্ডব্যাগটি তৈরি করা হয়েছিলো ১৯৮৫ সালে, বিখ্যাত ব্রিটিশ-ফরাসি গায়িকা ও অভিনেত্রী জেন বারকিনের জন্য। এই ব্যাগের জন্ম এক মজার ঘটনাকে কেন্দ্র করে।
একবার জেন বারকিন হারমেসের তৎকালীন প্রধানের পাশে বসে উড়োজাহাজে ভ্রমণ করছিলেন। সে সময় তিনি তার ব্যাগটি ঠিকভাবে সামলাতে না পারায় ব্যাগের জিনিসপত্র নিচে পড়ে যায়। তখন তিনি পাশে বসা হারমেসের প্রধানকে বলেন, তারা কেন বড় ব্যাগ বানায় না?
বারকিনের কথা শুনে হারমেস প্রধান তখনই প্লেনে থাকা একটি কাগজের সিকব্যাগে (যেটি যাত্রীদের বমি বা অসুস্থতার ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য দেওয়া হয়) নতুন ব্যাগের নকশা আঁকেন।
Advertisement
আর উড়োজাহাজে বসে তৈরি হওয়া সেই ডিজাইনার ব্যাগটি বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) প্যারিসে নিলাম কোম্পানি সোদেবিসের নিলামে বিক্রি হয়ে যায়।
ব্যাগটি কিনেছেন একজন জাপানি সংগ্রাহক। ব্যাগটির বিক্রয়মূল্য এতটাই বেশি যে এটি আগের সব রেকর্ডকে পেছনে ফেলে দিয়েছে। এর আগে সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রিত ব্যাগটির মূল্য ছিল পাঁচ লাখ ১৩ হাজার মার্কিন ডলার।
নিলাম হাউজের পক্ষ থেকে জানানো হয়, নিলামের সময়টা ছিল টানটান উত্তেজনায় ভরা। প্রায় ১০ মিনিট ধরে নয়জন অ্যান্টিক কালেক্টর বা সংগ্রাহক ব্যাগটি কেনার জন্য বিড করেছেন। যারা দুষ্প্রাপ্য ও ঐতিহ্যবাহী জিনিস সংগ্রহ করেন, তাদেরকে বলা হয় অ্যান্টিক কালেক্টর।
কিন্তু এই ব্যাগটি কেন এত মূল্যবান?
Advertisement
সোদেবিসের হ্যান্ডব্যাগ ও ফ্যাশনের প্রধান মর্গ্যান হালিমি বলেন, এই চামড়ার ব্যাগটি এতটা মূল্যবান হয়ে ওঠার কারণ, একজন কিংবদন্তি ব্যক্তি এর ডিজাইন করেছিলেন। সেজন্যই এটি কিনতে অনেকেই আগ্রহী হন, নিলামে উত্তেজনাপূর্ণ প্রতিযোগিতা হয়, আর শেষ পর্যন্ত ব্যাগটি রেকর্ড দামে বিক্রি হয়।
তিনি আরও বলেন, বারকিন প্রোটোটাইপ (কোনো পণ্যের প্রথম মডেল) মানেই হচ্ছে একটি অসাধারণ গল্পের সূচনা বিন্দু, যা এটিকে এক আধুনিক প্রতীকে পরিণত করেছে। বারকিন ব্যাগ হলো পৃথিবীর সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত হাতব্যাগগুলোর একটি।
জেন বারকিনের জন্য ব্যাগটি তৈরি করার পর হারমেস এটিকে অন্যান্যদের কাছেও বাণিজ্যিকভাবে উপস্থাপন করে। পরবর্তী সময়ে এটি ফ্যাশন দুনিয়ায় এক বিশেষ গুরুত্ব পায় ও বিলাসিতার প্রতীক হয়ে ওঠে।
এই ব্র্যান্ডের কিছু ব্যাগের দাম হাজার হাজার ডলার ও কেউ কেউ একটি আসল বারকিন ব্যাগ কেনার জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষা করেন।
এ যাবৎকালে যেসব সেলিব্রিটির হাতে এই ব্যাগটি দেখা গেছে, তাদের মধ্যে আছেন কেট মস, ভিক্টোরিয়া বেকহ্যাম ও জেনিফার লোপেজ।
এই ব্যাগটির কিছু অনন্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন, এর সামনের ফ্ল্যাপে বা ঢাকনায় বারকিনের নামের আদ্যক্ষর ‘জে.বি.’ খোদাই করা আছে। আরও আছে স্থায়ীভাবে লাগানো কাঁধের স্ট্র্যাপ, বেল্টে লাগানো একটি নেইল ক্লিপার।
জেন বারকিন সরাসরি যুক্ত ছিলেন, এমন দাতব্য সংস্থার স্টিকারও রয়েছে ব্যাগটিতে। যেমন, ডক্টরস অব দ্য ওয়ার্ল্ড এবং ইউনিসেফ।
২০২৩ সালে ৭৬ বছর বয়সে জেন বারকিন মারা যান। তিনি এক দশক ধরে এই ব্যাগটিকে নিজের কাছে রেখেছিলেন। পরে ১৯৯৪ সালে এইডস রোগীদের সহায়তার জন্য তহবিল তুলতে তিনি ব্যাগটি নিলামে দান করেন।
এরপর প্যারিসের এক বিলাসবহুল বুটিকের মালিক ক্যাথেরিন বেনিয়ার এটি কিনে নেন। ২৫ বছর ধরে ব্যাগটি তার সংগ্রহে ছিল এবং এত বছর পর ফের এটি নিলামে ওঠে।
সূত্র: বিবিসি
এসএএইচ/টিটিএন