স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ও তার সহযোগী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষকদের বিচার দাবি করেছে জাতীয়তাবাদী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল।
Advertisement
রোববার (১৩ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে জুলাই অভ্যুত্থানে মারণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশদাতা শেখ হাসিনা এবং গণভবনে গিয়ে স্বৈরাচারের মদদদাতা শিক্ষকদের বিচারের দাবিতে এক মানববন্ধনে তারা এ দাবি জানান।
এ সময় তারা গণহত্যায় মদদদানকারী এবং দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত ইমেরিটাস অধ্যাপকদের দ্রুত অপসারণ ও ফ্যাসিস্টদের চিরতরে দমন করতে দেশের স্বার্থে সবাইকে একতাবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।
মানববন্ধনে ঢাবি সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান বলেন, আমাদের আজকের প্রোগ্রামের দুটি অ্যাজেন্ডা, খুনি হাসিনার যে রেকর্ড ফাঁস হয়েছে তার বিচার দাবি এবং তার সঙ্গে যারা উৎসাহ প্রদান করেছে; বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক তৎকালীন সরকারকে ব্ল্যাঙ্ক চেক দিয়েছিল যে আপনারা গুলি চালান। এখন সেই আওয়ামীপন্থি শিক্ষকেরা অন্তর্বর্তী সরকারের বিপক্ষে বিবৃতি দিয়েছে। এখন আমার প্রশ্ন হলো, যেইদিন আমাদের সন্তানদের ওপর গায়ে হাত তোলা, অত্যাচার করা এবং হত্যা হুকুম করা হয়েছিল, সেইদিন আপনাদের বিবেক কই ছিল? সেইদিন তো আপনারা বিবৃতি দেননি! আমি পরিষ্কারভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসব শিক্ষকদের বিচার দাবি করছি। এখানে কোনো লুকোচুরি নেই, তারা সেই সময়ে গণভবনে গিয়েছে এবং ভিডিও ফুটেজ ও ইলেকট্রনিক্স প্রিন্ট মিডিয়াতে তার প্রমাণ রয়েছে। সেই সকলের ওপর ভিত্তিতে সরকার ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান জানাবো এদের বিচার করার জন্য। আজকে আমাদের একটা মূল অ্যাজেন্ডা খুনি হাসিনার বিচার এবং তার সহযোগী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিচার দাবি করছি। ফ্যাসিস্টরা দেশের বাহিরে থেকে ষড়যন্ত্র করে চলছে, আমরা যেন ফ্যাসিস্টদের চিরতরে দমন করতে পারি, সেজন্য সবাই দেশের স্বার্থে এক ও একতাবদ্ধ থাকব।
Advertisement
কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান খান বলেন, আপনারা দেখেছেন কীভাবে জুলাইয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর মারণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছিল খুনি শেখ হাসিনা। বিবিসি তাদের অত্যাধুনিক যন্ত্র দিয়ে নিশ্চিত করেছে—এটি ছিল খুনি হাসিনারই নির্দেশনামা। জাতিসংঘের তথ্য অনুসন্ধানকারী দল তাদের রিপোর্টে জানিয়েছে, জুলাইয়ের অভ্যুত্থানে খুনি হাসিনার নির্দেশে গণহত্যা চালানো হয়েছে। শেখ হাসিনা পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে বিভিন্ন অডিও-ভিডিও বার্তায় সাধারণ নেতাকর্মীদের উসকে দিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই অভ্যুত্থানের পর তিনি তার নেতাকর্মীদের বিপদের মুখে ঠেলে দিয়ে পরিবারসহ পালিয়ে গেছেন। এই হলো ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার চরিত্র। তার দোসররা যেন দেশে অস্থিতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে জুলাই অভ্যুত্থানকে নস্যাৎ করতে না পারে, সে বিষয়ে সরকারের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, এই অভ্যুত্থান চলাকালীন নিজেদের বুদ্ধিজীবী হিসেবে পরিচয় দেওয়া একদল শিক্ষক হাসিনাকে গণহত্যায় উদ্বুদ্ধ করেছে। ৩ আগস্ট গণভবনে গিয়ে তারা শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালানোর প্রতি সমর্থন নয় বরং উৎসাহ দিয়েছে। আমরা সবাই জানি তারা কারা। অথচ এখনো পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি। দ্রুত তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি।
ঢাবি সাদা দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আবুল কালাম সরকার বলেন, যত দ্রুত শেখ হাসিনার বিচার নিশ্চিত করা হবে, এটাই হবে এদেশে সবচেয়ে বড় সংস্কার। স্বল্প সময়ের মধ্যে শেখ হাসিনার বিচার সম্পন্ন করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার জোর দাবি জানাচ্ছি।
ঢাবি সাদা দলের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. আল-আমিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যখন রক্তাক্ত হয় তখন আওয়ামীপন্থি শিক্ষকরা এগিয়ে আসেনি। আমরা যখন প্রতিবাদের দাঁড়িয়ে ছিলাম আমাদের ছবি তুলে নেওয়া হয়েছে, বিভিন্ন এজেন্সি থেকে কল করা হয়েছিল। আন্দোলন দমনে তারা মাকসুদ কামালের বাসাকে অস্থায়ী কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করতো। একদিনে ফ্যাসিস্ট জন্ম নেয়নি, অন্যান্য শ্রেণির পাশাপাশি শিক্ষকদের ভূমিকা ছিল। ৩ আগস্ট বুদ্ধিজীবীরা নির্বিচারে গুলি চালানোর বুদ্ধি দিয়ে আসে। এই তথ্য গণমাধ্যমেও এসেছে। সুস্পষ্ট তথ্য প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও এতো গড়িমসি কেন?
Advertisement
তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমাদের তিনটি তালিকা আমাদের হাতে আছে। একটি তালিকায় ৭৮ জন শিক্ষককে শিক্ষার্থীরা বয়কট করেছে। ৭১ জন শিক্ষকের বিবৃতিতে যারা আছেন বেশিরভাগ বয়কটকৃত। সাধারণ শিক্ষকের নামে নতুন প্ল্যাটফর্ম আনতে চায় যার মাধ্যমে ফ্যাসিবাদকে সার্ভ করতে চায়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আহ্বান তাদের কঠোর হাতে দমন করুন। যাদের রক্তের অবদানে আমরা আজকের অবস্থানে এসেছি তাদের স্পিরিটকে ধারণ করতে হবে।
মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাবি আইবিএ’র অধ্যাপক ড. মহিউদ্দিন, মার্কেটিং বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এবিএম শহীদুল ইসলাম, চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. শেখ আজহারুল ইসলাম, জীব বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এনামূল হক, চারুকলা সাদা দলের আহ্বায়ক শিল্পী ইসরাফিল রতন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমদ, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, অধ্যাপক ড. নুরল আমিন, পি জে হার্টস ইন্টারন্যাশনাল হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক এম এ কাওসার, অধ্যাপক শফিউল্লাহ, অধ্যাপক ড. আসাদ চৌধুরী, হাফিজ উদ্দিন ভুইয়া, অধ্যাপক আব্দুস সালাম, অধ্যাপক শাহ শামিম, অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলামসহ শতাধিক শিক্ষক।
এফএআর/এমআরএম/এএসএম