শিক্ষা

২০৫০ সালের এসএসসির ফলাফল কেমন হবে?

২০৫০ সালের এসএসসির ফলাফল কেমন হবে?

কাজী মনজুর করিম

Advertisement

২০২৫ সালের জুলাইয়ে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হয়েছে আর এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে গত ১০ জুলাই। আমার একজন প্রাক্তন ছাত্র (ক্লাস এইটের পর তাকে আমি আর পড়াতে পারিনি) এবার এসএসসি পাস করেছে। ক্লাস নাইন-টেন সে তার স্কুলের শিক্ষকদের কাছে পড়েছে, তাকে পড়াবার মতো সময় আমি পাইনি, কারণ আমার একটি ব্যস্ততম চাকরি আছে। তার মা একজন চিকিৎসক।

তার এই জিপিএ ফাইভ নিয়ে আমরা আনন্দিত, কিন্তু উচ্ছ্বসিত হতে পারছি না। আশানুরূপ গ্রেড পাওয়া সত্ত্বেও তার প্রাপ্ত নম্বর আশানুরূপ নয়। সে আমার একমাত্র পুত্র, কাজী পৃথিবী ইসলাম (মেঘ)।

সে এখনো কিছুটা বিষণ্ন। তার জন্য টেলিটকের সিম কিনে আমরা ছয়টি বিষয়ের খাতা পুনর্মূল্যায়নের আবেদন করেছি। কারণ, সে বিশ্বাস করে, সে এত কম নম্বর পাওয়ার পাত্র নয়। কলেজ ভর্তির সময় এই নম্বর তার ভাগ্য নির্ধারণের সূচক।

Advertisement

এই যে অস্বাভাবিক কম নম্বর পেয়ে কেউ কেউ হতাশ, ফেল করে কেউ কেউ আত্মহত্যার চেষ্টা করছে, এর মূলে কী?

রুট কজ অ্যানালাইসিস করার জন্য অনলাইনে কিছু অনুসন্ধান করলাম। ফলাফল হতাশাব্যঞ্জক। দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসে বেশ কিছু সংবাদ আমার চোখে পড়লো। ভাল সংবাদ খুব কম।

প্রথম আলোর একটি প্রবন্ধে তিনটি কারণ পেলাম: প্রথমত, এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থীরা গত পাঁচ বছরের শিক্ষাজীবনে করোনা মহামারিসহ নানা কারণে বিদ্যালয়ে ক্লাস পেয়েছে কম। দ্বিতীয়ত, ‘প্রশ্ন কঠিন’ হওয়ায় এবার গণিতে পাসের হার কম। তৃতীয়ত, এবার উত্তরপত্র মূল্যায়নে অন্যান্য বছরের চেয়ে ‘কড়াকড়ি’ ছিল। (সূত্র: ‘তিন কারণে এসএসসির ফল খারাপ’, দৈনিক প্রথম আলো, ১১ জুলাই ২০২৫)।’

আমি আজ মনে মনে একটি টাইম মেশিন ভাড়া করে ২০৫০ সালে চলে গেলাম। দেখলাম, ২০২৪ সালের গণ-আন্দোলনে অংশ নেওয়া Gen-Z দেশ চালাচ্ছে। তারা কেউ সচিব, কেউ মন্ত্রী। তারা বাংলাদেশের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার খাতা নিরীক্ষণ পদ্ধতি বদলে ফেলেছে।

Advertisement

প্রত্যেকটি খাতা স্ক্যান করে দুইজন নিরীক্ষককে ই-মেইল করে পাঠানো হচ্ছে। কেউ কারো পরিচয় জানতে পারেন না। সেই দুইজন নিরীক্ষকের কাছ থেকে মূল্যায়ন আদায় করা হচ্ছে অনলাইনে, বোর্ডের ওয়েব পোর্টালে। সেখানে ডেডলাইলন এর মধ্যে মার্ক দেওয়া খাতা আপলোড করতে হয়। হার্ড কপি জমা হয় আরও পরে।

প্রধান নিরীক্ষক ছাড়া আর কেউ সেই তথ্য দেখতে পান না এবং দুই জনের দেওয়া নম্বরের মধ্যে তিনি বেশি নম্বরটি গ্রহণ করেন। যদি তিনি দুই নিরীক্ষকের প্রদত্ত নম্বরে ১০ শতাংশ এর বেশি ডেভিয়েশন পান, তাহলে তিনদিনের মধ্যে দুইজনের সঙ্গে অনলাইনে একটা মিটিং করেন, যেটির ভিডিও রেকর্ডিং স্বয়ংক্রিয়ভাবে শিক্ষামন্ত্রীর দপ্তরের একটি সার্ভারে আপলোড হয়ে যায়। সেই মিটিং-এই খাতা পুনর্মূল্যায়ন হয়ে যায় এবং চূড়ান্ত মার্কশিটে সেটি অন্তর্ভুক্ত হয়।

এছাড়াও যদি ফল প্রকাশের পর কোনো শিক্ষার্থী খাতা চ্যালেঞ্জ করে, সেই প্রধান নিরীক্ষককে মিডিয়ার সামনে লাইভে এসে সেই শিক্ষার্থীর খাতা দেখে চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করতে হয়।

অনলাইনে পেমেন্ট করে কোনো পরীক্ষার্থী চাইলে শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইট থেকে তার খাতা সার্চ করে দেখে নিতে পারে, চ্যালেঞ্জ করার প্রথম ধাপে। প্রাপ্ত নম্বর সঠিক মনে না হলে সে নিরীক্ষকের সঙ্গে অনলাইনে বসবে এবং সেটা মিডিয়ায় প্রচারিত হবে।

ফলে ২০৫০ সালের পরীক্ষায় ফেল করে কেউ আত্মহত্যা করে না, কেউ নম্বর পেয়ে বলে না, তার প্রতি অবিচার করা হয়েছে।যদি কোনো বিষয়ে কেউ ফেল করে, সেই বিষয়ে পরের মাসেই ‘সাপ্লিমেন্টারি’ পরীক্ষা দিয়ে পাস করে বেরিয়ে যায়। এক বিষয়ে ফেল করলে পরের বছর সকল বিষয়ে আবার পরীক্ষা দেওয়ার সেই অমানবিক ও প্রাচীন পদ্ধতি বিলুপ্ত হয়েছে।

২০৫০ সালের কোমলমতি কিশোর-কিশোরীদের কাছে এসব পরীক্ষা আর ভীতিকর নয়। (২০৫০ এর এই পদ্ধতি একজন সাধারণ অভিভাবক হিসেবে আমার কল্পনা। আমি আশা করি বাস্তবতা আরও সুন্দর ও স্বচ্ছ হবে)

লেখক: কাজী মনজুর করিম (মিতুল) প্রকৌশলী ও প্রাবন্ধিক

এমআরএম/জিকেএস