২০২৫ সালের সদ্য প্রকাশিত দাখিল পরীক্ষার ফলাফলে এক নজিরবিহীন কৃতিত্ব দেখিয়েছে কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার এক আলেম পরিবার। জেলা শহরের হয়বতনগর এ ইউ কামিল মাদরাসার মুজাব্বিদ বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে একই পরিবারের তিন বোন।
Advertisement
জমজ দুই বোন ফাওজিয়া তারান্নুম (১৪) ও তাহিয়া তাবাসসুম (১৪) এবং বড় বোন উম্মে আতিয়া উমামার (১৫) এই সাফল্য শুধু মাদরাসা নয়, পুরো এলাকায় সৃষ্টি করেছে উৎসাহ ও অনুপ্রেরণার জোয়ার। জমজ দুই বোন হতে চায় বিচারক, তাদের বিশ্বাস ন্যায়ের ভিত্তিতেই গড়ে উঠবে আদর্শ সমাজ। আর বড় বোন উম্মে আতিয়া উমামা স্বপ্ন দেখেন শিক্ষক হয়ে দেশের পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য আলোর দিশা হতে।
তাদের বাবা মাওলানা মো. আলীম উদ্দিন করিমগঞ্জ উপজেলার আলহাজ্ব রঙ্গু খান মেমোরিয়াল মহিলা আলিম মাদরাসায় সহকারী মাওলানা হিসেবে কর্মরত। মা নূরুন্নাহার একজন গৃহিণী।
তাদের বড় ভাই রাকিবুল হাসান পড়ছেন বিএসসি ইন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। বড় দুই বোন সুমাইয়া আক্তার ও উসরাত জাহান মারিয়া কামিল (মাস্টার্স) পর্যায়ে অধ্যয়নরত। ছোট ভাই নকবিল হোসাইন হেফজ শিক্ষার্থী।
Advertisement
এই ধারাবাহিকতা প্রমাণ করে, পরিবারটি যেন নিজেই একটি ছোট পরিসরের চলমান ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠান’।
হয়বতনগর এ ইউ কামিল মাদরাসার শিক্ষকরা জানান, এই তিন বোন শুরু থেকেই মেধাবী, বিনয়ী ও মনোযোগী। ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে তারা মাদরাসায় ভর্তি হয় এবং বছরের পর বছর ধরে কৃতিত্বের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে।
মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ আজিজুল হক বলেন, তিন বোনের মধ্যে যে পারস্পরিক সহমর্মিতা, স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা ও পারিবারিক মূল্যবোধের সমন্বয় রয়েছে তা আজকের শিক্ষার্থীদের মধ্যে খুবই বিরল। তাদের নিষ্ঠা, অধ্যবসায় ও ভদ্রতা আমাদের মুগ্ধ করেছে। এ সাফল্য শুধু আমাদের প্রতিষ্ঠানের নয়, পুরো এলাকার গর্বের বিষয়।
তাদের বাবা মাওলানা আলীম উদ্দিন বলেন, সন্তানদের ধর্মীয় ও আধুনিক শিক্ষায় গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। আজকে আমার তিন মেয়ের এই সাফল্য আমার জীবনের অন্যতম আনন্দময় অর্জন। তারা যেন দেশের জন্য কিছু করতে পারে এটাই আমাদের চাওয়া।
Advertisement
বড় ভাই রাকিবুল হাসান বলেন, তিন বোনের এমন কৃতিত্ব আমাদের পুরো পরিবারকে গর্বিত করেছে। তারা ছোটবেলা থেকেই লক্ষ্য নির্দিষ্ট ও পরিশ্রমী। আমি চাই তারা সমাজ ও দেশের গর্ব হয়ে উঠুক।
জমজ বোন ফাওজিয়া তারান্নুম ও তাহিয়া তাবাসসুম বলেন, আমরা সবসময় একসঙ্গে পড়াশোনা করেছি, একে অপরকে অনুপ্রাণিত করেছি। মা-বাবা কখনো হতাশ হতে দেননি। ভবিষ্যতে বিচারক হয়ে সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে চাই। জিপিএ-৫ পেয়ে আমরা খুব খুশি, তবে এটি আমাদের পরিবার ও শিক্ষকদের সম্মিলিত অর্জন।
বড় বোন উম্মে আতিয়া উমামা বলেন, আমি সবসময় শিক্ষক হতে চেয়েছি। কারণ একজন আদর্শ শিক্ষকই প্রজন্ম গড়তে পারেন। আমি চাই পিছিয়ে পড়া গ্রামের শিক্ষার্থীদের জন্য কিছু করতে। আমার এই সাফল্যের পেছনে বাবা-মায়ের উৎসর্গ ও শিক্ষকদের আন্তরিকতা কাজ করেছে।
এফএ/জিকেএস