রাজধানীর দৃষ্টিনন্দন হাতিরঝিল এলাকা যেন রাজধানীবাসীর একটু দম নেওয়ার জায়গা। সেখানকার সংযোগ সড়কগুলো ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম এলাকাগুলো যুক্ত করেছে। অথচ সেখানকার একমুখী সড়কের বেশ কিছু অংশে বড় আকারের গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। এতে ঝিলের একমুখী সড়কে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে যান চলাচলে। যানবাহনের ধীরগতি তৈরি করছে যানজট। কিন্তু বারবার নজরে আনার পরও সড়ক মেরামতে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)।
Advertisement
নগরবাসীর অভিযোগ, চলতি বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকেই হাতিরঝিল একমুখী সড়কের বিভিন্ন অংশে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়। এসব গর্তে বৃষ্টির পানি জমে থাকে। যানবাহন চালকেরা গর্তের পরিমাণ বুঝতে পারেন না। এতে গর্তে চাকা আটকে দুর্ঘটনা যেমন ঘটছে, জনসাধারণের চলাচলেও বাড়ছে ভোগান্তি।
দৃষ্টিনন্দন হাতিরঝিল রাজউকের সম্পত্তি। এ ঝিলের চারপাশে একমুখী প্রায় ১৬ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। রোববার (১৩ জুলাই) সরেজমিনে দেখা যায়, হাতিরঝিলের তেজগাঁওয়ের কুনিপাড়া অংশের সড়কে পিচঢালাই, ইট, খোয়া উঠে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। এসব গর্তে আবার বৃষ্টির পানি জমে রয়েছে। ফলে দূর থেকে গর্তের পরিমাণ বোঝা যায় না।
আরও পড়ুন অচল ‘রঙিন পানির নৃত্য’, জৌলুস হারাচ্ছে হাতিরঝিল গুলশান-বনানী লেকে নৌ চলাচল কবে?তারা বলছেন, এ কারণে মগবাজার, এফডিসি, সাতরাস্তা হয়ে আসা যানবাহনের চাকা গর্তে পড়ছে। বিশেষ করে মোটরসাইকেল ও ব্যক্তিগত গাড়িগুলো সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ছে। এতে যানবাহন চলছে ধীরগতিতে, ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা।
Advertisement
একইভাবে হাতিরঝিলের এম্ফি থিয়েটার, পুলিশ প্লাজা, দক্ষিণ বাড্ডা, রামপুরার বিভিন্ন অংশেও অসংখ্য গর্ত দেখা গেছে। এ কারণে সিএনজি অটোরিকশা, মোটরসাইকেল ও অন্য গাড়িগুলো হঠাৎই থেমে যাচ্ছে। চালকেরা হেলেদুলে রাস্তায় চলাচল করছেন। কিছু ক্ষেত্রে গর্তে দ্রুতগামী গাড়ির চাকা পড়ে তৈরি হচ্ছে মারাত্মক দুর্ঘটনার ঝুঁকি।
হাতিরঝিলের চারপাশের সড়কে বৃত্তাকার পথে যাত্রী পরিবহন করে চক্রাকার বাস। এ বাসে যাত্রী ওঠা-নামার জন্য রয়েছে বেশ কয়েকটি স্টপেজ। যাত্রীরা তাদের সুবিধা অনুযায়ী যে কোনো স্টপেজে ওঠানামা করতে পারেন। এর মধ্যে তেজগাঁওয়ের কুনিপাড়ায়ও একটি স্টপেজ রয়েছে।
এই স্টপেজ থেকে যাত্রী তুলছিলেন চক্রাকার বাসের চালক আনোয়ার হোসেন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘হাতিরঝিলে সব স্টপেজ থেকে যাত্রী নিয়ে এক চক্কর দিতে গড়ে ৩০ মিনিট সময় লাগে। কিন্তু কুনিপাড়া এলাকায় সড়কে গর্তের কারণে নিয়মিত যানজট হচ্ছে। এ কারণে অনেক সময় এই গর্তের অংশ পাড় হতেই ১৫-২০ মিনিট সময় লেগে যায়।’
‘ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটরসাইকেলের চাকা খুব সাবধানে চালাতে হয়। সামান্য অসাবধানতায় চাকা গর্তে আটকে যাচ্ছে। বিষয়টি রাজউক সংশ্লিষ্টদের অনেকবার জানানো হয়েছে। কিন্তু তারা সড়ক সংস্কার করছেন না। দিন যত যাচ্ছে, হাতিরঝিলের সড়কে গর্তের সংখ্যাও বাড়ছে’- যোগ করেন তিনি।
Advertisement
হাতিরঝিলে বেঞ্চে বসে সময় কাটাচ্ছিলেন কুনিপাড়ার প্রবীণ বাসিন্দা শাহীন আলম। আলাপকালে তিনি বলেন, ‘হাতিরঝিলের কুনিপাড়ায় প্রতি বর্ষায় একই স্থানে গর্তের সৃষ্টি হচ্ছে। যখন মিডিয়ায় এ নিয়ে লেখালেখি হয়, তখন রাজউক সড়ক সংস্কার করে। না হলে রাজউকের দেখা পাওয়া যায় না। অথচ এ কারণে সড়কে তীব্র যানজট হচ্ছে।’
পুলিশ প্লাজার পূর্ব পাশেও হাতিরঝিল সড়কে বেশ কয়েকটি বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এসব গর্তেও পানি জমে রয়েছে। ফলে এ এলাকায়ও যানবাহনের ধীরগতি দেখা গেছে।
হাতিরঝিলের দক্ষিণ বাড্ডার বাসিন্দা ফরিদুল ইসলাম। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াতে তিনিও নিয়মিতই চক্রাকার বাসে যাতায়াত করেন। পুলিশ প্লাজা স্টপেজে কথা হলে ফরিদুল ইসলাম বলেন, আগে হাতিরঝিলের চারপাশের সড়ক খুবই সুন্দর ছিল। কোথাও কোনো ভাঙা ছিল না। এখন নগরীর অন্য এলাকার মতো হাতিরঝিলের রাস্তাও ভেঙে যাচ্ছে। কিন্তু রাজউক মেরামত করছে না।
আরও পড়ুন আগের মতো দর্শনার্থী আসে না হাতিরঝিলে ছুটির দিনে প্রাণবন্ত হাতিরঝিলহাতিরঝিল রাজধানীর একটি ব্যস্ততম পর্যটন এলাকা। ২০১৩ সালে জনসাধারণের চলাচলের জন্য এটি তৈরি করা হয়েছে। হাতিরঝিলের সড়ক তেজগাঁও, গুলশান, বাড্ডা, রামপুরা, মৌচাক, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার ও মগবাজারকে যুক্ত করেছে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়ন ও তদারকি করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। ফলে প্রকল্পটি উদ্বোধনের প্রায় ১০ বছর পর্যন্ত তা তদারকি করেছে সেনাবাহিনী। এরপর তা রাজউকের কাছে হস্তান্তর করা হয়। মূলত এর পর থেকেই হাতিরঝিলে সড়কে গর্তসহ অব্যবস্থাপনা তৈরি হয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
জানতে চাইলে রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী মো. নুরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘হাতিরঝিলের সড়কে বড় গর্ত হয়ে জনদুর্ভোগের সুযোগ নেই। দ্রুত সময়ে তা সংস্কার করা হবে। বিষয়টি রাজউকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জানানো হচ্ছে।’
এমএমএ/এমকেআর/জিকেএস