চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। প্রায় ৬ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং প্রায় ১০৯ কোটি টাকা সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য উদঘাটন করে তার বিরুদ্ধে এই মামলা করে দুদক।
Advertisement
রোববার (১৩ জুলাই) দুদক চট্টগ্রামের প্রধান কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক মো. নিজাম উদ্দিন এ মামলা দায়ের করেন।
দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-১ এর উপপরিচালক সুবেল আহমদ বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ভারতে পালানোর পথে ১২ সেপ্টেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া সীমান্তের আবদুল্লাহপুর এলাকা থেকে এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীকে গ্রেফতার করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। বর্তমানে তিনি কারাগারে।
Advertisement
দুদকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, ফজলে করিম চৌধুরী অনিয়ম-দুর্নীতি করে ২৪ কোটি ৮ লাখ ৩০ হাজার ২৩২ কোটি টাকার সম্পদ অর্জন করেন। এর মধ্যে ১১ কোটি ৯৫ লাখ ২২ হাজার ৬০৭ টাকার স্থাবর সম্পদ এবং ১২ কোটি ১৩ লাখ ৭ হাজার ৬২৫ টাকার অস্থাবর সম্পদ। এর বিপরীতে তার কোনো দায়-দেনার তথ্য দুদক পায়নি।
আরও পড়ুনজুলাই আন্দোলনের হত্যা মামলা: সাবেক এমপি ফজলে করিম ট্রাইব্যুনালেকিন্তু আয়কর নথি পর্যালোচনায় দুদক ফজলে করিমের ১৮ কোটি ১৩ লাখ ৩৭ হাজার ৪৬০ টাকার বৈধ ও গ্রহণযোগ্য আয় পেয়েছে। আয়কর দেওয়া বৈধ সম্পদের চেয়ে তার অর্জিত সম্পদ ৫ কোটি ৯৪ লাখ ৯২ হাজার ৭৭২ টাকার বেশি পেয়েছে দুদক, যা তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধভাবে অর্জন এবং ভোগদখল করছেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়া দুদকের অনুসন্ধানে এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর বিরুদ্ধে ১২টি ব্যাংক হিসাবে ১০৮ কোটি ৬৪ লাখ ৮৫ হাজার ৭৯০ টাকা সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য পাওয়া যায়। এর মধ্যে ৫৪ কোটি ৩৯ লাখ ১৩ হাজার ৭২ টাকা জমা ও ৫৪ কোটি ২৫ লাখ ৭২ হাজার ৭১৮ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।
দুদকের মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ‘দুর্নীতি ও ঘুসের’ মাধ্যমে অর্জিত সম্পদের অবৈধ উৎস গোপন বা আড়াল করার উদ্দেশ্যে ১২টি ব্যাংক হিসেবে এ অস্বাভাবিক লেনদেন হয়েছে। এর মাধ্যমে এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
Advertisement
মামলায় আসামি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর বিরুদ্ধে ২০০৪ সালের দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের ২৭(১) এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ৪(২) ও ৪(৩) এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, রাউজানে এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী ছিলেন সাধারণ মানুষের আতঙ্ক। ক্ষমতার অপব্যবহার করে গুম-খুনের রাজনীতি করে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের এলাকা ছাড়া করেন। নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী গড়ে তুলে বিরোধীমতের মানুষের ওপর নির্মম নির্যাতন করদেতন তিনি। সরকারি-বেসরকারিসহ মানুষের ব্যক্তিগত জায়গা দখলসহ বিস্তর অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত এক ডজনেরও বেশি মামলা হয়েছে।
রফিক হায়দার/ইএ/জেআইএম