গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে উৎকোচ নেওয়ার মাধ্যমে কৃষকদের নামে ভুয়া অ্যাকাউন্ট দেখিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ধান ক্রয়ের অভিযোগ উঠছে। তালিকাভুক্ত হয়েও ধান নিয়ে গেলে ফিরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন কৃষকরা। এ নিয়ে চারজন নারী কৃষক লিখিত অভিযোগ করেছেন।
Advertisement
জানা যায়, কৃষকদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিতে প্রতিবছর কৃষকদের নিকট থেকে ধান সংগ্রহ করে সরকার। এ জন্য অনলাইনে আবেদন করেন কৃষকরা। আবদেনকৃত কৃষকদের মধ্যে করা হয় লটারি। নির্বাচিত কৃষকদের নিকট থেকে জনপ্রতি ৩৬ টাকা কেজি হিসেবে ৩ টন ধান সরকারিভাবে ক্রয় করে থাকে খাদ্য গুদাম। কিন্তু এতসব প্রক্রিয়া অনুসরণ করার পর কৃষক নির্বাচিত হলেও গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ খাদ্যগুদামে ধান দিতে পারেননি উপজেলার পূর্ব ছাপড়হাটির কোহিনুর, রোসনা, আমিনা ও খামার পাঁচগাছির আনোয়ারা বেগম নামের ৪ কিষাণী। তারা গুদামে ধান নিয়ে গেলেও তা ফেরত দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মাহাফুজুর রশিদ।
চার কৃষাণীর অভিযোগ, ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন তাদের নামে বরাদ্দকৃত ধান আগেই নেওয়া হয়েছে। তাদের দাবি, তারা এর আগে কোনো ধান দেননি এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের শাখায় এর আগে কোনো একাউন্টসও খোলেননি তারা। পরে তারা খাদ্যগুদামের ধান সংগ্রহে অনিয়মের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেন।
উপজেলা খাদ্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় চলতি বছর বোরো ইরি ধান ৮ মে থেকে সংগ্রহ শুরু হয়। সরকারিভাবে ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১৩ শত ৯ মেট্রিক টন। ২৯ জুনের মধ্যে ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা শেষ করা হয়।
Advertisement
ভুক্তভোগী কহিনুর বেগম জাগো নিউজকে বলেন, ‘কৃষক প্রতি ৩ টন করে ধান খাদ্য গুদামে বিক্রির জন্য লটারিতে নাম উঠেছে আমাদের। ধান নিয়ে গেলে গুদাম অফিসার বলেন, আপনাদের ধান নেওয়া হয়ে গেছে। অনেক অনুরোধ করার পরেও তিনি ধান নেননি। ফেরত দিয়েছেন। টাকাও নাকি ব্যাংকে দিয়েছে। এখন আমাদের কথা, গুদাম অফিসার উৎকোচের বিনিময়ে আমাদের ধান কার কাছ থেকে নিলেন? আর ব্যাংকেও আমাদের কোনো অ্যাকাউন্ট নেই। এই অ্যাকাউন্ট কে খুললো? এর ন্যায্য বিচার চাই।’
অভিযোগ রয়েছে, সুন্দরগঞ্জ এলএসডি গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মাহাফুজুর রশিদ বাইরের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সমন্বয় করে তাদের কাছ থেকে ধান ক্রয় করছেন। এদিকে তালিকাভুক্ত কয়েকজন কৃষক খাদ্যগুদামে একাধিকবার ধান বিক্রি করতে গেলে বরাদ্দের ধান কেনা শেষ বলে জানিয়ে দেওয়া হয়।
এমন অভিযোগ মণ্ডলের হাট এলাকার ঈসমাইলের। তার ভাষ্য, ‘ধান নিয়ে গেলে ধান কেনা শেষ বলে বিদায় করে দেওয়া হয়েছে। অথচ নিজেই দেখছি, রাতে গাড়িতে করে আসা ধান কিনছেন। তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও ধান দিতে পারি নাই। কৃষকের ধান ছাড়াই গুদাম ভরে গেলো। এর বিচার কাকে দিব।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুন্দরগঞ্জ খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মাহাফুজুর রশিদ বলেন, ‘অভিযোগের বিষয়টি মিটমাট হওয়ার কথা। আমাকে খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে, কৃষকরা এমন অভিযোগ দিয়েছে কিনা।’
Advertisement
ইউএনও রাজ কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। গত বৃহস্পতিবার খাদ্য কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে তদন্তের জন্য দায়িত্ব দিয়েছি। তদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী অভিযুক্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে ‘
আনোয়ার আল শামীম/এমএন/জিকেএস