রাশিয়ার সঙ্গে এখনো জটিল ও দ্বিধান্বিত সম্পর্ক বজায় রেখেছে মধ্য এশিয়ার দেশগুলো। সম্প্রতি কিরগিজস্তানের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর ওশ-এ ভ্লাদিমির লেনিনের একটি বিশাল ভাস্কর্য অপসারণ করা হয়। যদিও স্থানীয় কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, কেবল নান্দনিক কারণে এটি সরানো হয়েছে এবং পরে অন্যত্র স্থাপন করা হবে। অনেক রুশ নাগরিক ও বিশ্লেষক বিষয়টিকে রুশ ঐতিহাসিক উত্তরাধিকার থেকে সরে যাওয়ার লক্ষণ বলে মনে করছেন।
Advertisement
সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের তিন দশক পরও মধ্য এশিয়ার পাঁচটি সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্র–কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান ও উজবেকিস্তান––রাশিয়ার ছায়াতেই রয়ে গেছে। যদিও ধীরে ধীরে তারা নিজেদের জাতীয় পরিচয় গড়ে তোলার চেষ্টা করছে।
ইউক্রেন যুদ্ধ ও সন্দেহ-সংশয়ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন মধ্য এশিয়ার দেশগুলোকে আরও সতর্ক করে তুলেছে। তারা প্রকাশ্যে যুদ্ধকে সমর্থন না করলেও খোলাখুলি সমালোচনাও করছে না, যাতে মস্কোর বিরাগভাজন না হয়। এই দ্বৈত কূটনৈতিক অবস্থান রাশিয়ায় খারাপভাবে গৃহীত হয়েছে। অনেক রুশ রাজনীতিক ও প্রচারমাধ্যম একে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখছে।
আরও পড়ুন>>
Advertisement
সম্প্রতি কিরগিজস্তানে একটি রুশ সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এক নাগরিককে ইউক্রেনে ভাড়াটে যোদ্ধা সংগ্রহের অভিযোগে আটক করা হলে তা নিয়েও উত্তেজনা ছড়ায়। এর জবাবে রুশ পার্লামেন্টের এক সদস্য কিরগিজ অভিবাসীদের রেমিট্যান্স বন্ধের হুমকি দেন।
উল্লেখ্য, কিরগিজস্তানের জিডিপির প্রায় এক-পঞ্চমাংশই রেমিট্যান্স, যার ৯৩ শতাংশ যায় রাশিয়া থেকে।
বিকল্প শক্তির খোঁজে মধ্য এশিয়ামধ্য এশিয়ার দেশগুলো এখন রাশিয়ার বিকল্প হিসেবে পশ্চিমা শক্তির সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করছে। সম্প্রতি উজবেকিস্তানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে এক শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়, যাতে মধ্য এশিয়ার সব প্রেসিডেন্ট অংশ নেন। এরপরই রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ সেখানে গিয়ে ইইউ’র কর্মকাণ্ডকে ‘হস্তক্ষেপ’ বলে নিন্দা করেন।
এছাড়া, একটি ছোট বিষয়ও বড় প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। তাসখন্দে একটি যুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভে রুশ ভাষা অনুপস্থিত থাকার কারণে ল্যাভরভ ক্ষোভ প্রকাশ করেন। জবাবে এক উজবেক ভাষ্যকার বলেন, ‘আমরা ওদের উপনিবেশ নই।’
Advertisement
তারপরও মধ্য এশিয়ার দেশগুলো নিরাপত্তা, অর্থনীতি ও ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় এখনো রাশিয়ার ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল।
কাজাখস্তানের ৯৫ শতাংশ তেল রপ্তানি ও ইন্টারনেট ট্র্যাফিক যায় রাশিয়ার মাধ্যমে। রাশিয়াই সেখানে প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে তুলতে যাচ্ছে। কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান ও তাজিকিস্তানের সঙ্গে রাশিয়ার নিরাপত্তা চুক্তি রয়েছে। কিরগিজস্তান ও তাজিকিস্তানে রুশ সামরিক ঘাঁটিও রয়েছে।
ভবিষ্যতের দোদুল্যমান বাস্তবতারাশিয়া আজও মধ্য এশিয়ার ভূ-রাজনীতিতে এক বিশাল ছায়া বিস্তার করে আছে। বাণিজ্য, নিরাপত্তা ও অভিবাসন—সব ক্ষেত্রেই এই সম্পর্ক টিকে রয়েছে, যদিও সেখানে একধরনের টানাপোড়েন ও সামঞ্জস্যের চেষ্টা স্পষ্ট। অর্থাৎ, মধ্য এশিয়ার দেশগুলো একদিকে নিজেদের স্বকীয়তা জাহির করছে, অন্যদিকে রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাও স্বীকার করে নিচ্ছে—এ এক জটিল সহাবস্থানের চিত্র।
কেএএ/