টেস্ট ক্রিকেটে অনেক গৌরবের ইতিহাস রচিত হয়েছে। কেউ রেকর্ড গড়েন তো কেউ সেই রেকর্ড ভাঙেন। এ ধারাবাহিকতায় অদ্যাবধি চলছে ক্রিকেটের পথচলা। কয়েকদিন আগেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার উইয়ান মুলডার খেলেন ৩৬৭ রানের অপরাজিত অসাধারণ এক ইনিংস।
Advertisement
এই বিশাল ইনিংসটি খেলার পথে অনেকগুলো রেকর্ড ভেঙেছেন তিনি। গড়েছেন নতুন রেকর্ড। সম্ভাবনা ছিল ব্রায়ান লারার ৪০০ রানের রেকর্ড ভাঙার। যদিও তার আগে নিজেকে গুটিয়ে নেন মুলডার।
স্বাভাবিকভাকেই পাঠকের মনে প্রশ্ন জাগে, ক্রিকেটের ইতিহাসে সর্বপ্রথম ট্রিপল সেঞ্চুরি করেছেন কে? কোন বোলারই বা সর্বপ্রথম ৩০০ উইকেট শিকার করেছিলেন?
সর্বপ্রথম ট্রিপল সেঞ্চুরিয়ান
Advertisement
আধুনিক ক্রিকেটের ইতিহাসের সূচনা হয়েছিল ১৮৭৭ সালে। মেলবোর্নে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম টেস্ট ম্যাচ। এরপর থেকে ১৪৮টি বছর পাড়ি দিয়েছে টেস্ট ক্রিকেট। যার ধারাবাহিকতায় এসেছে ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি, টি-টেন, হান্ড্রেডের মত ক্রিকেট ফরম্যাটগুলো (যদিও পরের দুটি এখনও অফিসিয়াল বা আইসিসি কর্তৃক স্বীকৃত না)।
তবে, ক্রিকেট ইতিহাসে সর্বপ্রথম ট্রিপল সেঞ্চুরির দেখা পেতে পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছে প্রায় ৫৮ বছর বা ১৯৩০ সাল পর্যন্ত। তখনকার সময়ে টেস্ট ম্যাচ শেষ হওয়ার জন্য কোনো সময় নির্ধারিত ছিল না। এটাকে বলা হতো টাইমলেস টেস্ট। এসব ম্যাচের মাঝে থাকতো রেস্ট ডে, কখনো কখনো কোনো দিন খেলাও হতো না।
জ্যামাইকার কিংসটনে, সাবিনা পার্কে ইংল্যান্ড এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যকার টেস্ট ম্যাচটি শুরু হয়েছিল ৩ এপ্রিল। শেষ হয়েছিল ১২ এপ্রিল। ১০দিন ধরে চলেছে টেস্ট ম্যাচটি। এর মধ্যে খেলা হয়েছে ৭দিন।
ওই ম্যাচেরই প্রথম ইনিংসে ৬৪০ বল মোকাবেলা করে ৩২৫ রানের অনবদ্য একটি ইনিংস খেলেন ইংলিশ ওপেনার অ্যান্ডি স্যান্ডহাম। ৬০০ মিনিট উইকেটে কাটিয়েছেন তিনি। বাউন্ডারি মেরেছিলেন ২৮টি। কোনো ছক্কার মার ছিল না।
Advertisement
টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে অ্যান্ডি স্যান্ডহামের ওই ইনিংসটাই প্রথম কোনো ট্রিপল সেঞ্চুরির ঘটনা। ওই ম্যাচে সেঞ্চুরি করেছিলেন লেস অ্যামেস। ১৪৯ রান করেন তিনি। ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংসে ২৫৮.২ ওভার ব্যাট করে সংগ্রহ করে ৮৪৯ রান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের টমি স্কট নেন ৫ উইকেট।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১১১.৫ ওভার ব্যাট করে অলআউট হয় ২৮8 রানে। ৫৬৩ রান এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ইংল্যান্ড ৯ উইকেট হারিয়ে ২৭২ রানে ইনিংস ঘোষণা করে। জয়ের জন্য ৮৩৬ রানের লক্ষ্য দাঁড়ায় ক্যারিবীয়দের সামনে। কিন্তু তারা ৫ উইকেটে ৪০৮ রান করার পর ম্যাচের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। অর্থ্যাৎ ম্যাচটি অমিমাংসিতভাবেই থেকে যায়।
১৯৩০ সালেই দ্বিতীয় ট্রিপল সেঞ্চুরির দেখা পায় ক্রিকেট বিশ্ব। ৩৩৪ রানের সেই অনবদ্য ইনিংসটি খেলেন স্যার ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যান। লিডসের হেডিংলিতে ৩৮৩ মিনিট ক্রিজে থেকে ৪৪৮ বল মোকাবেলা করে এই ইনিংস খেলেন ব্র্যাডম্যান। ওই ম্যাচটি ছিল ৫ দিনের। শেষ পর্যন্ত ম্যাচ ড্র হয়।
সেই থেকে সর্বশেষ ৬ জুলাই, ২০২৫ পর্যন্ত টেস্ট ক্রিকেট মোট ৩৩টি ট্রিপল সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছে। এর মধ্যে ২০০৪ সালের ১০ এপ্রিল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অপরাজিত ৪০০ রানের ঐতিহাসিক ইনিংসটি খেলেন ব্রায়ান লারা। তার আগে ২০০৩ সালে ম্যাথ্যু হেইডেন খেলেন ৩৮০ রানের ইনিংস। ১৯৯৪ সালে ব্রায়ান লারা খেলেছিলেন ৩৭৫ রানের আরেকটি ঐতিহাসিক ইনিংস।
সর্বপ্রথম ৩০০ উইকেট শিকারী বোলার
ট্রিপল সেঞ্চুরি যে কোনো একটি ইনিংসেই করে ফেলা সম্ভব। ব্যাটাররা সেই অসম্ভব কাজ ক্রিকেটের ইতিহাসে ৩৩বার করে দেখিয়েছেন। কিন্তু একজন বোলারের জন্য তো ৩০০ উইকেট এক ম্যাচে অর্জন করার কথা না। এর জন্য লম্বা সময় ধরে খেলতে হয়, দীর্ঘদিন খেলার পরই এই উচ্চতায় পৌঁছায় একজন বোলার।
তবে, টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে ক্যারিয়ারে ৮০০ উইকেট নেয়ার কৃতিত্ব এরই মধ্যে তৈরি হয়ে গেছে। শ্রীলঙ্কার মুত্তিয়া মুরালিধরন টেস্ট ক্রিকেটে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী বোলার। এরপর রয়েছেন শেন ওয়ার্ন। তিনি শিকার করেছেন ৭০৮টি উইকেট। জেমস অ্যান্ডারসন ৭০৪টি এবং ভারতের অনিল কুম্বলে শিকার করেন ৬১৯ উইকেট।
তবে ক্রিকেটের ইতিহাসে একজন বোলারের নামের পাশে ৩০০ যোগ করতে বেশ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে। ১৯৬৪ সালে সর্বপ্রথম ৩০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন ইংলিশ পেসার ফ্রেড ট্রুম্যান। লন্ডনের দ্য ওভালে অনুষ্ঠিত অ্যাশেজের শেষ টেস্টে একটি মাত্র ইনিংসে বোলিংয়ের সুযোগ পান ট্রুম্যান। ৮৭ রান দিয়ে নেন ৪ উইকেট। সে সঙ্গে ক্রিকেট বিশ্বে প্রথম বোলার হিসেবে স্পর্শ করেন ৩০০ উইকেটের মাইলফলক।
ট্রুম্যান অবশ্য এরপর আর বেশি টেস্ট খেলেননি। এরপর আর মাত্র ২টি টেস্ট খেলে ১৯৬৫ সালে ক্যারিয়ারের ইতি টানেন। মোট ৩০৭টি উইকেট শিকার করেন তিনি। ২০০৬ সালে ১ জুলাই, ৭৫ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন ট্রুম্যান।
সেই থেকে ক্রিকেট ইতিহাসে টেস্টেই ৩০০’র বেশি উইকেট নিয়েছেন ৪০ জন বোলার। সর্বশেষ ৩০০ উইকেট শিকারী বোলার হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার বর্তমান অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। তার উইকেট সংখ্যা এখন ট্রুম্যানের সমান, ৩০৭টি। তবে এর মধ্যে বাংলাদেশের কোনো বোলার এখনও যুক্ত হতে পারেননি।
এক ইনিংসে সর্বাধিক ৬৭বার পাঁচ উইকেট ও এক ম্যাচে ২২বার দশ উইকেট নেন মুত্তিয়া মুরালিধরন। এছাড়া অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ফাস্ট বোলার ডেনিস লিলি মাত্র ৫৬ টেস্ট খেলে ৩০০তম ক্লাবে যোগ দেন। অন্যদিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটার ম্যালকম মার্শাল সেরা বোলিং গড় হিসেবে উইকেট প্রতি ২০.৯৪ রান দিয়ে ৩৭৬ উইকেট লাভ করেছিলেন।
ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ল্যান্স গিবস ওভার প্রতি ১.৯৯ রান দিয়েছেন। দক্ষিণ আফ্রিকান বোলার ডেল স্টেইন প্রতি উইকেট নিতে গড়ে ৪২.৩ বল করেন। ভারতের অনিল কুম্বলে ১৯৯৯ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে সেরা বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন, ৭৪ রানে ১০ উইকেট নিয়ে। যা জিম লেকার অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১৯৫৬ সালে ৫৩ রান দিয়ে ১০ উইকেট নেয়ার পর দ্বিতীয় সেরা।
আইএইচএস/