পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতাল এলাকায় ভাঙারি ব্যবসায়ী লালচাঁদ ওরফে সোহাগ (৩৯) হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন আসামি মো. টিটন গাজী।
Advertisement
শনিবার (১২ জুলাই) বিকেলে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসিব উল্লাহ গিয়াসের আদালতে শুনানিতে বিচারকের জিজ্ঞাসাবাদে এ দাবি করেন তিনি।
শুনানিতে বিচারক আসামি টিটন গাজীকে জিজ্ঞাসা করেন আপনি কিছু কি বলতে চান? তখন তিনি বলেন- জি স্যার, আমার কোনো আইনজীবী নেই। আপনি (বিচারক) যে ভাইরাল হওয়া ভিডিও দেখেছেন, সেখানে আমাকে দেখা যাচ্ছে। আমি কাউকে আঘাত করিনি। আমাকে মোবাইলে ফোন করে ডাকা হয়েছিল। ফোন পেয়ে সেখানে যাই। আমি কাউকে আঘাত করিনি। ভিকটিমকে আঘাত করার জন্য হুকুমও দেইনি। আমি শুধু দাঁড়িয়ে ছিলাম। আমি নির্দোষ স্যার। বিচারক শুনানি শেষে আসামির পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
শুনানি শেষে ভাঙারি ব্যবসায়ী লালচাঁদ ওরফে সোহাগ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেফতার টিটন গাজীকে পাঁচদিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। এছাড়া অস্ত্র আইনে আরেক মামলায় তারেক রহমান রবিন আদালতে দোষ স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
Advertisement
বিকেলে শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসিব উল্লাহ গিয়াসের আদালত এ আদেশ দেন। এদিন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার পুলিশ পরিদর্শক মো. নাসির উদ্দিন আসামি টিটন গাজীকে আদালতে হাজির করে সাতদিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। একই ঘটনাকে কেন্দ্র করে অস্ত্র আইনের মামলায় দুদিনের রিমান্ড শেষে আসামি তারেক রহমান রবিনকে আদালতে হাজির করেন আরেক মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (উপপরিদর্শক) মো. মনির হোসেন জীবন। এরপর রবিন স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মতি হওয়ায় তা রেকর্ড করার আবেদন করেন এ তদন্তকারী কর্মকর্তা।
রবিনের জবানবন্দি রেকর্ড শেষে বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটের দিকে এজলাসে ওঠেন বিচারক।
আদালতে প্রথমে ভাঙারি ব্যবসায়ী হত্যা মামলায় গ্রেফতার টিটন গাজীর সাতদিনের রিমান্ড বিষয়ে শুনানি করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। এরপর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী প্রসিকিউটর কাইয়ুম হোসেন নয়ন ও এম কাওসার আহমেদ রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন।
শুনানিতে তারা বলেন, ভিকটিম সোহাগকে পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা করা হয়েছে। এরই মধ্যে সেই ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। সারাদেশে এ ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। অনেক আলোচনার জন্ম নিয়েছে। মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ারও সৃষ্টি হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আসামির সর্বোচ্চ রিমান্ডের দাবি জানাচ্ছি। তবে এদিন আসামি পক্ষের কোনো আইনজীবী ছিল না।
Advertisement
বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে সিএমএম হাজতখানা থেকে টিটন গাজীকে এজলাসে ওঠানোর সময় সাংবাদিকদের বলেন, আমাকে রাস্তা থেকে ধরে নিয়ে গেছে। আমি কিছুই জানি না। আমি নির্দোষ।
এদিকে অস্ত্র আইনের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক মো. মনির হোসেন জীবন বলেন, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় যে অস্ত্রটা উদ্ধার করা হয়েছে সেই বিষয়ে আসামি দোষ স্বীকার করেছেন। আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেন, এ অস্ত্রটি আমার। আমাকে অস্ত্রসহ র্যাব কর্মকর্তারা গ্রেফতার করেন। ঘটনার সময় এ অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে।
গত ৯ জুলাই সন্ধ্যা ৬টার দিকে মিটফোর্ড হাসপাতালের তিন নম্বর গেটের সামনে পাকা রাস্তার ওপর প্রকাশ্যে লালচাঁদ ওরফে সোহাগকে পাথর ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করে হত্যা করে একদল দুর্বৃত্ত। খবর পাওয়ার পরপরই কোতোয়ালি থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। নিহতের লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।
ওই ঘটনায় নিহতের বড় বোন মঞ্জুয়ারা বেগম ১৯ জনের নাম উল্লেখ করে কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় আরও ১৫ থেকে ২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
নিহত সোহাগ কেরানীগঞ্জ মডেল থানার পূর্ব নামাবাড়ি গ্রামের ইউসুফ আলী হাওলাদারের ছেলে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে চার নম্বর রজনী ঘোষ লেনে ভাঙারির ব্যবসা করে আসছিলেন।
এমআইএন/এমএএইচ/জেআইএম