বিশ্ব যখন অ্যাপলের নতুন আইফোনের অপেক্ষায়, তখন প্রতিষ্ঠানটি চলতি সপ্তাহে এক নীরব কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা দিয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছে। অ্যাপলের বহুদিনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট অব অপারেশনস, সাবিহ খান হচ্ছেন প্রতিষ্ঠানের নতুন চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও)। চলতি বছরের জুলাই মাসের শেষদিকে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে এই দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।
Advertisement
৩০ বছরেরও বেশি সময় অ্যাপলের সঙ্গে যুক্ত থাকা সাবিহ খান এখন প্রযুক্তি জগতের নতুন ‘সাপ্লাই চেইন সুপারস্টার’। অ্যাপলের অভ্যন্তরীণ কার্যক্রমে তিনি এতটাই নিবিড়ভাবে জড়িত যে তাকে বলা যায় কোম্পানির বৈশ্বিক উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থার জিপিএস।
মোরাদাবাদ থেকে কুপারটিনো
সাবিহ খান ১৯৬৬ সালে ভারতের উত্তরপ্রদেশের মোরাদাবাদে জন্মগ্রহণ করেন। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় তার পরিবার সিঙ্গাপুরে চলে যায় ও পরে সেখান থেকে যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে।
Advertisement
তিনি টাফটস ইউনিভার্সিটি থেকে অর্থনীতি ও যান্ত্রিক প্রকৌশলে ডুয়াল ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জন করেন এবং পরবর্তীতে রেনসেলায়ার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন।
সাবিহ খানের পেশাগত জীবন শুরু হয়েছিল জেনারেল ইলেকট্রিকে, যেখানে তিনি অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার ও টেকনিক্যাল লিড হিসেবে কাজ করেন।
এরপর ১৯৯৫ সালে তিনি অ্যাপলের প্রোকিউরমেন্ট বিভাগে যোগ দেন। সেখান থেকে শুরু করে ধাপে ধাপে তিনি অ্যাপলের গ্লোবাল প্ল্যানিং, ম্যানুফ্যাকচারিং, সরবরাহ, এবং লজিস্টিকস বিভাগের মূল নকশাকারী হয়ে ওঠেন। ২০১৯ সালে টিম কুক তাকে সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট অব অপারেশনস পদে নিয়োগ দেন।
বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারি থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য উত্তেজনার মতো সংকটে অ্যাপলের সরবরাহ ব্যবস্থা সচল রাখা ও নিরবিচারে পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে তার অবদান অসামান্য।
Advertisement
অ্যাপলের বিদায়ী সিওও জেফ উইলিয়ামস সাবিহ খানকে দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে সহকর্মী হিসেবে পাশে পেয়েছেন। তিনি বলেছেন, সাবিহ খান পৃথিবীর সবচেয়ে প্রতিভাবান অপারেশনস এক্সিকিউটিভ।
পারিবারিক জীবন ও ব্যক্তিত্ব
সাবিহ খানের পারিবারিক বিষয়ে খুব কম তথ্যই প্রকাশ্যে রয়েছে। জানা যায়, তিনি ভারত থেকে সিঙ্গাপুর হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছেন। তবে তার স্ত্রী, সন্তান বা ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের সম্পর্কে খুব কমই জানা যায়। তিনি নিজেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতে পছন্দ করেন না, বরং নেপথ্যে থেকে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে যান।
অ্যাপলের প্রধান ইভেন্টগুলোতে তাকে খুব একটা দেখা যায় না, কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির পণ্য সরবরাহ ও উৎপাদন ব্যবস্থার নিরব কিন্তু দক্ষ চালক হিসেবে তার অবদান অস্বীকার করার উপায় নেই।
সম্পদের পরিমাণ
সাবিহ খানের সুনির্দিষ্ট নেট ওয়ার্থ প্রকাশ্যে আসেনি। তবে অনুমান করা হয়, তার দীর্ঘকালীন চাকরি ও অ্যাপলের উচ্চ পর্যায়ের নির্বাহী পদের কারণে তিনি একটি বিশাল সম্পদের মালিক। উদাহরণস্বরূপ, তার পূর্বসূরি জেফ উইলিয়ামসের শেয়ার মূল্য এক সময় ছিল প্রায় ৮ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলার। সে বিবেচনায় ধরে নেওয়া যায়, সাবিহ খানের আর্থিক মূল্যও সেই পর্যায়েই পৌঁছেছে বা পৌঁছাবে।
সামনে যেসব চ্যালেঞ্জ?
অ্যাপলের সিওও হিসেবে সাবিহ খানের সামনে থাকবে একাধিক গুরুতর চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে বিশ্বব্যাপী সরবরাহ ব্যবস্থার জটিলতা, ট্রেড ও ট্যারিফ নীতির অনিশ্চয়তা, পরিবেশবান্ধব ও টেকসই সরবরাহ নিশ্চিত উল্লেখযোগ্য। তবে প্রযুক্তি জগতের অনেকেরই বিশ্বাস, এসব চ্যালেঞ্জ সামাল দেওয়ার জন্য তিনিই সঠিক ব্যক্তি।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
এসএএইচ