খেলাধুলা

রিচার্ড হ্যাডলির জন্মদিন ও ভারতের হৃদয়ভাঙা পরাজয়

রিচার্ড হ্যাডলির জন্মদিন ও ভারতের হৃদয়ভাঙা পরাজয়

আধুনিক ক্রিকেটের ইতিহাস প্রায় দেড়শ বছরের বেশি। দীর্ঘ এই সময়ে ক্রিকেটের ইতিহাসে জমা হয়েছে কত শত ঘটনা, কত শত কথা। সময়ের ধারাবাহিকতায় আজ, ১০ জুলাই ক্রিকেটের ইতিহাসে বেশ কিছু ঘটনার সৃষ্টি হয়েছে। কারও কারও জন্মদিনও ছিল। জাগোনিউজের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো বিরল সেই ঘটনাবলী।

Advertisement

১৯৯০: টেস্টে রিচার্ড হ্যাডলির শেষ দিন, ইংল্যান্ডের বিরল সিরিজ জয়

ক্রিকেট ইতিহাসে বিরলতম যে ক’জন পেস বোলিং অলরাউন্ডার ছিলেন, তাদের মধ্যে অন্যতম নিউজিল্যান্ডের রিচার্ড হ্যাডলি। যার আগমণ নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটকেই বদলে দিয়েছিল।

১৯৯০ সালের এই দিনেই কিংবদন্তি এই কিউই ক্রিকেটার টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নেন। একই দিনে ইংল্যান্ড পাঁচ বছর পর নিজেদের মাটিতে প্রথমবারের মতো সিরিজ জয়ের উৎসব করে।

Advertisement

বার্মিংহ্যামে নিউজিল্যান্ডকে ১১৪ রানে হারায় ইংল্যান্ড। মূলত এ জয়ের পিছনে ছিলো ডেভন ম্যালকম ও এডি হেমিংস জুটি। তারা দু’জন মিলে নিয়েছিলেন ১৫টি উইকেট।

হ্যাডলি তার শেষ ম্যাচে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখান। দ্বিতীয় ইনিংসে বোলিং করতে গিয়ে ৫৩ রান দিয়ে নেন ৫ উইকেট। যার ফলে নিউজিল্যান্ড প্রথম ইনিংসে ১৮৬ রানে পিছিয়ে থেকেও জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়ে তোলে। ক্যারিয়ারের শেষ বলেও তিনি উইকেট নেন, ডেভন ম্যালকমকে শূন্য রানে এলবিডব্লিউ করে।

দুই ইনিংসেই ম্যালকমকে শূন্য রানে আউট করেন। হ্যাডলি নিজেও দ্বিতীয় ইনিংসে আউট হন ম্যালকমের বলে।

১৯৪৯: সুনিল গাভাসকারের জন্মদিন

Advertisement

আজ ১০ জুলাই, ১৯৪৯ সালে বোম্বেতে (বর্তমানে মুম্বাই) জন্মগ্রহণ করেন ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ওপেনার সুনিল গাভাসকার। নিখুঁত কৌশল এবং অসাধারণ মনোযোগের জন্য বিখ্যাত গাভাসকার ১৯৭০-৭১ মৌসুমে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে স্মরণীয় টেস্ট অভিষেক করেন।

ওই সিরিজে ১৫৪-এর অবিশ্বাস্য গড়ে চার টেস্টে চারটি সেঞ্চুরি এবং ৭৭৪ রান করেন তিনি। এটি ছিল তার ক্যারিবিয়ান প্রেমের শুরু। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১৩ টেস্টে সাতটি সেঞ্চুরি এবং ৭০-এর বেশি গড় রয়েছে তার।

তবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে গড় ছিল মাত্র ৩৮, যা তার সর্বনিম্ন। তিনি রেকর্ড ৩৪টি টেস্ট সেঞ্চুরি করেন, যার ২২টি ম্যাচ ড্র হয়। গাভাসকারের অন্যতম সেরা ইনিংস ছিল ১৯৮৬-৮৭ সালে ব্যাঙ্গালুরুতে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে ঘূর্ণি পিচে ৯৬ রান, যদিও ভারত মাত্র ১৬ রানে হেরে যায়।

১৯৭৯ সালে ওভালে ৪৩৮ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ডাবল সেঞ্চুরি করেন তিনি। যা ভারতকে জয়ের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যায়; কিন্তু ৯ রানের জন্য হেরে যায় তারা।

ক্যারিয়ারে কিছু হতাশার মুহূর্তও ছিল- ১৯৭৫ সালে লর্ডসে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে ধীরগতির ব্যাটিং, টেস্টে রেকর্ড তিনবার প্রথম বলে আউট এবং বোলিং গড় ২০৬। তবে তার একমাত্র উইকেট ছিল জহির আব্বাসের মতো বড় নাম।

১৯৭৬: ব্রায়ান ক্লোজ ও জন এড্রিচের ৮০ মিনিটের ভয়াবহ পরীক্ষা

১৯৭৬ সালে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে ক্যারিবীয় বোলারদের সামনে এক ভয়াবহ পরীক্ষার সম্মুখিন হন ইংল্যান্ডের ব্রায়ান ক্লোজ এবং জন এড্রিচ। ওয়েস্ট ইন্ডিজ পেসার অ্যান্ডি রবার্টস, মাইকেল হোল্ডিং ও ওয়েইন ড্যানিয়েলের আগুনে বোলিংয়ের সামনে ৮০ মিনিটের এক ভয়ঙ্কর পরীক্ষার মুখোমুখি হন দুই ওপেনার।

দ্বিতীয় ইনিংসে ইংল্যান্ডের সামনে ছিল ৫৫২ রানের বিশাল লক্ষ্য, সময় ছিল দুই দিনের কিছু বেশি। জবাব দিতে নেমে দুই ওপেনার ব্রায়ান ক্লোজ এবং জন এড্রিচ এবারও ভয়াবহ পরীক্ষার সম্মুখিন । এই সময়টি টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে ভীতিকর পর্বগুলোর একটিতে পরিণত হয়।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের উদ্দাম গতির বোলিং আক্রমণ, প্রায় প্রতিটি বল নিজেদের পিচের অর্ধেকে ফেলে এবং বিশেষ করে বডিলাইনে ক্যারিবীয়রা বোলিং শুরু করলে ব্যাটারদের বেশ কয়েকটি মারাত্মক আঘাত সহ্য করতে হয়। তবে ৪৫ বছর বয়সী ক্লোজ এবং ৩৯ বছর বয়সী এড্রিচ, যারা তাদের শেষ টেস্ট ইনিংস খেলছিলেন, দিনের শেষ পর্যন্ত অটল থাকেন।

এড্রিচের ২৪ রান ওই ম্যাচে ইংল্যান্ডের যে কোনো খেলোয়াড়ের সর্বোচ্চ স্কোর ছিল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক ক্লাইভ লয়েড পরে বলেন, ‘আমাদের ছেলেরা উত্তেজনায় ভেসে গিয়েছিল।’

২০১৯ বিশ্বকাপ: ভারতের হৃদয়ভাঙা পরাজয়

২০১৯ সালের বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ড রোমাঞ্চকর জয়ে টানা দ্বিতীয়বার ফাইনালে পা রাখে। ম্যাচের শেষ মুহূর্তে মার্টিন গাপটিলের সরাসরি থ্রোতে মহেন্দ্র সিং ধোনির রানআউট ২৪০ রানের লক্ষ্য তাড়া করার ক্ষেত্রে ভারতের ব্যাটিংয়ের মেরুদণ্ড ভেঙে দেয়।

রিজার্ভ ডে-তে চতুর্থ ওভার শেষে ম্যাট হেনরি এবং ট্রেন্ট বোল্টের নিখুঁত লাইন ও সুইংয়ের কাছে ভারত ৫ রানে ৩ উইকেট হারায়। (প্রথমদিন বৃষ্টির কারণে নিউজিল্যান্ডের ইনিংস অসমাপ্ত ছিল।) রিশাভ পান্ত এবং হার্দিক পান্ডিয়া সাময়িক প্রতিরোধ গড়লেও, রবিন্দ্র জাদেজার ৫৯ বলে নির্ভিক, যদিও ঝুঁকিপূর্ণ ৭৭ রান ভারতকে লড়াইয়ে ফেরায়।

তার পাশে থেকে ধোনি তার স্বভাবসুলভ ধীরস্থিরভাবে ম্যাচ টেনে নেন। কিন্তু ৪৮তম ওভারে জাদেজার আকাশে ভাসা ক্যাচের পর ভারতের জয়ের জন্য দরকার ছিল ৩২ রান। চারবল পর ধোনি দ্বিতীয় রান নিতে গিয়ে রানআউট হন এবং এতেই ম্যাচ শেষ হয়ে যায়।

আগের দিন নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং ভরসা কেন উইলিয়ামসন টুর্নামেন্টে তার চতুর্থ ৫০-এর বেশি রানের ইনিংস খেলেন এবং রস টেলরের সহায়তায় এমন একটি স্কোর গড়েন, যা প্রথমে ভারতের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপের কাছে অপ্রতিরোধ্য মনে হলেও শেষ পর্যন্ত যথেষ্ট প্রমাণিত হয়।

১৯৪০: অস্ট্রেলিয়ার নির্ভীক ওপেনার কিথ স্ট্যাকপোলের জন্মদিন

১৯৪০ সালে ভিক্টোরিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি ওপেনার কিথ স্ট্যাকপোল। নতুন বলের প্রতিরোধ হিসেবে তিনি হুক ও কাট শটে বলের প্রাণ বের করে দিতেন। আশ্চর্যজনকভাবে, তার টেস্ট ক্যারিয়ার শুরু হয় নম্বর ৮ ব্যাটসম্যান হিসেবে।

১৯৭০-৭১ অ্যাশেজ সিরিজের ব্রিসবেনে প্রথম টেস্টে তিনি ২০৭ রানের এক বিধ্বংসী ইনিংস খেলেন। যদিও ১৮ রানে তাকে রানআউট হতে পারতেন তিনি।

স্ট্যাকপোল ৪৩ টেস্টে সাতটি সেঞ্চুরি করেন এবং তিনি যখনই সেঞ্চুরি করেছেন, অস্ট্রেলিয়া কখনো হারেনি। তবে, তার টেস্ট ক্যারিয়ার শেষ হয় ১৯৭৪ সালে অকল্যান্ডে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জোড়া শূন্য দিয়ে। এর আগের ৭৮ ইনিংসে তিনি মাত্র তিনবার শূন্য রানে আউট হয়েছিলেন।

২০১৭: শ্রীলঙ্কার মাটিতে জিম্বাবুয়ের ঐতিহাসিক সিরিজ জয়

২০১৭ সালে র‍্যাংকিংয়ে ১১তম স্থানে থাকা জিম্বাবুয়ে শ্রীলঙ্কার মাটিতে ৩-২ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজ জিতে ইতিহাস গড়ে। এটি ছিল আইসিসির কোনো পূর্ণ সদস্য দেশের বিপক্ষে ১৬ বছর পর তাদের প্রথম দ্বি-পাক্ষিক সিরিজ জয়। ২০০৯ সালে কেনিয়ার বিপক্ষে জয়ের পর প্রথম বিদেশের মাটিতে সিরিজ জয়।

হাম্বানতোতায় সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে অলরাউন্ডার সিকান্দার রাজা ২১ রানে ৩ উইকেট নিয়ে শ্রীলঙ্কাকে ২০৩ রানে আটকে দেন এবং পরে ছক্কা মেরে লঙ্কানদের রান তাড়া করে ঐতিহাসিক জয় এনে দেন জিম্বাবুয়েকে। শ্রীলঙ্কার জন্য এটি ছিল টানা তৃতীয় সিরিজ পরাজয়, তবে নিজেদের মাটিতে পিছিয়ে থাকা র‍্যাংকিং দলের কাছে এটিই প্রথম হার।

আইএইচএস/