দেশজুড়ে

পরশুরামে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি, ফুলগাজী-ছাগলনাইয়ায় অবনতি

পরশুরামে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি, ফুলগাজী-ছাগলনাইয়ায় অবনতি

ফেনীর পরশুরাম-ফুলগাজীতে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও ছাগলনাইয়া ও সদরে অবনতি হচ্ছে। এ দুই উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে প্রবেশ করছে বন্যার পানি। এতে আরও লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। তবে শুক্রবার থেকে জেলাজুড়ে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির সম্ভাবনা দেখছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

Advertisement

পানি উন্নয়ন বোর্ড, উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্র জানায়, মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনীয়া নদীর অন্তত ২১ স্থানে বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করছে। গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি কমে আসায় নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ফেনী-ফুলগাজী ও ফেনী-ছাগলনাইয়া আঞ্চলিক সড়কের ওপর দিয়ে ২ থেকে ৪ ফুট পর্যন্ত পানির প্রবাহ রয়েছে। তবে ফেনী শহরের প্রধান সড়কে যে জলাবদ্ধতা ছিল সেটি কেটে গেছে। শহর এলাকায় যান চলাচল স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে।

সকালে ফেনী-ছাগলনাইয়া সড়কের রেজুমিয়া থেকে পৌরসভা পর্যন্ত অংশে এক থেকে দুই ফুট ওপর দিয়ে পানি গড়িয়ে যেতে দেখা গেছে। এতে করে নতুনভাবে ছাগলনাইয়া উপজেলার পাঠাননগর, রাধানগর, ছাগলনাইয়া পৌরসভার অন্তত ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ফেনী সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ঢুকে পড়ছে। সন্ধ্যা পর্যন্ত বাঁধভাঙা পানি ঢুকে ফেনী সদর উপজেলার কাজিরবাগ, মোটবী, ছনুয়া, ফাজিলপুর ইউনিয়নের ২০টি গ্রাম নতুন ভাবে প্লাবিত করেছে।

Advertisement

মোটবী ইউনিয়নের তরুণ উদ্যোক্তা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘রাত থেকে ইজ্জতপুর গ্রামে পানি বাড়তে থাকে। বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত সড়কের কোথায়ও ৩ থেকে ৪ ফুট পর্যন্ত ডুবে গেছে। এলাকার সবগুলো পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। অনেকে গরু-ছাগল নিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছেন।’

ফেনীর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান বলেন, ‘সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ৫৮ দশমিক ৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ক্রমান্বয়ে বৃষ্টিপাত কমছে। তাই আগামীকাল শুক্রবার থেকে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতির সম্ভাবনা রয়েছে।’

ফেনী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুলতানা নাসরিন কান্তা জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের খালগুলো পরিষ্কার করা অবস্থায় রয়েছে। তারপরও বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রশাসকদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়ে নাগরিকদের সচেতন করতে বলা হয়েছে। কবলিতদের আশ্রয়কেন্দ্রে ওঠার জন্য নির্দেশনা দেওয়া আছে।’

পানি উন্নয়ন বোর্ড ফেনীর নির্বাহী প্রকৌশলী আকতার হোসেন মজুমদার বলেন, ‘মুহুরী নদীর পানি ১ দশমিক ৯৩ মিটার বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফুলগাজী এলাকার বন্যাকবলিত গ্রামগুলোতে পানির অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে। পানির চাপ কমে যাওয়ায় নতুন করে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভাঙার আশঙ্কা নেই। পানি কমে গেলেই ভাঙনকবলিত স্থানগুলো মেরামত করা হবে।’

Advertisement

ফেনী জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন,‘বন্যাকবলিত চার উপজেলার মধ্যে পরশুরামে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। ফুলগাজীতেও কিছুটা ভালোর দিকে রয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার বন্যার পানি ছাগলনাইয়ার প্রধান সড়ক গড়িয়ে বিভিন্ন নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। আশা করি শুক্রবার পর্যন্ত জেলাজুড়ে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি শুরু হবে। এখন পর্যন্ত ৫০টি আশ্রয়কেন্দ্রে চার উপজেলায় প্রায় ৭ হাজার মানুষ আশ্রিত রয়েছে। ২০ হাজারের ওপরে কবলিত জনসাধারণের মাঝে খাবার সরবরাহের জন্য প্রশাসনের সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতারাও কাজ করে যাচ্ছে।’

আবদুল্লাহ আল-মামুন/আরএইচ/জেআইএম