দেশে কয়েকদিন ধরেই মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। এতে বেড়ে গেছে ছাতা ও রেইনকোটের মতো বৃষ্টি প্রতিরোধী সরঞ্জামের চাহিদা। ঢাকায় বিভিন্ন মার্কেট ও ফুটপাতে এসব পণ্যের ব্যাপক পসরা ও বাড়তি চাহিদা লক্ষ্য করা গেছে।
Advertisement
এদিকে ক্রেতা-বিক্রেতারা বলছেন, বাড়তি চাহিদার কারণে এসব পণ্যের দামে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা রয়েছে। বাজারে প্রতিটি ছাতার দাম আগের চেয়ে ৫০-১০০ টাকা ও রেইনকোটের দাম ৫০-৫০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
খুচরা বিক্রেতাদের দাবি, বৈরী আবহাওয়া শুরু হলেই কোম্পানিগুলো এসব পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। যদিও কোম্পানিগুলো বলছে, হুট করে বাড়তি চাহিদার কারণে সরবরাহ কিছুটা কমেছে। যে কারণে পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে।
ছাতার হালচালরাজধানীর বেশ কিছু মার্কেট ও পল্টন-গুলিস্থান এলাকার ফুটপাত ঘুরে দেখা গেছে, বর্ষার এ মৌসুমে বাজারে বাহারি রকমের ছাতা পাওয়া যাচ্ছে, যা দেখতে খুবই সুন্দর এবং সহজেই বহনযোগ্য। এছাড়া, ভালো মানের ফ্যাশনেবল ফোল্ডিং ছাতাও বাজারে অনেক পাওয়া যাচ্ছে এখন।
Advertisement
বাজারে সাধারণত সুইচওয়ালা (টিপ ছাতা), অটো ক্লোজ সিস্টেম ও লম্বা হাতলযুক্ত- এই তিন ধরনের ছাতা পাওয়া যায়। আগে হাতলযুক্ত ছাতার চল বেশি হলেও বর্তমানে টিপ ছাতার চলই বেশি। দুই ফোল্ডিং ও তিন ফোল্ডিংয়ের ছাতা অত্যন্ত স্বল্প সময়ের মধ্যে ক্রেতা সাধারণের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সহজে হাতব্যাগে পরিবহনের সুবিধার কারণে।
এসব ছাতার দাম নির্ভর করছে কয়টি শিক দিয়ে তৈরী এর ওপর। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ৮ শিকের টিপ ছাতা ৩০০-৩৫০ টাকা এবং ১০ শিকেরগুলো ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া কিছু দোকানে বিদেশি চার ফোল্ডের পার্স ছাতা দেখা গেছে। সেগুলো ৮-১২ শিকের, যার দাম সবচেয়ে বেশি। এসব ছাতার দাম শুরুই হয় ৫০০ টাকা থেকে। আবার বাজারে ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টাকারও কিছু ছাতা রয়েছে। যদিও একই ধরনের নিম্নমানের কপি ছাতাও রয়েছে কম দামে।
পল্টনের ছাতা বিক্রেতা বিলাল হোসেন বলেন, ছাতার কোয়ালিটির শেষ নেই। ব্র্যান্ড বা নাম নয়, কাপড় ও লোহার ফ্রেমের কোয়ালিটির ওপর ছাতার দাম নির্ভর করে।
Advertisement
ভারত, চীন, কোরিয়া, জাপানসহ বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশে তৈরি ছাতার বাজারের প্রায় পুরোটাই দখলে নিয়েছে। এদের মধ্যে চীন থেকেই বেশিরভাগ ছাতা আমদানি করা হয়।
বর্তমান বাজারের নানা স্টাইলিশ ছাতার প্রভাবে এক সময়ের জনপ্রিয় শরীফ ও বায়েজিদ ছাতা বাজার থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে বলেও জানান দোকানিরা। এখন অ্যাটলাস, ইউনিক, অলিম্পিক, ফিলিপস, চেরি, ফুজি প্রভৃতি বিদেশি ব্র্যান্ডের ছাতার বেশ চাহিদা দেখা গেছে।
এদিকে, ছাতার দামের পার্থক্য দেখা গেছেবাজারভেদেও। তবে পুরান ঢাকা, নিউমার্কেট, গাউছিয়া মার্কেট এলাকায় ছাতা পাওয়া যায় সুলভমূল্যে।
গুলিস্থান মার্কেটের ছাতা আমদানিকারক ও পাইকারি বিক্রেতা এমএম ট্রর্ডার্সের বুলবুল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে কয়েকদিনে ছাতার চাহিদা বেড়েছে তিন-চার গুণ। যেখানে গত বছর বৃষ্টি ছিল না, ছাতার বিক্রি হয়নি। এখন চাহিদার কারণে দাম কিছুটা বাড়িয়ে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। তবে কোম্পানিগুলো আগের দামেই সরবরাহ করছে।
রেইনকোটের বাজারঢাকায় সবচেয়ে বড় রেইনকোটের বাজার নিউমার্কেট, বংশাল ও বাংলামোটর। এছাড়াও বিভিন্ন এলাকার বাইক ও বাইকের পার্টস বিক্রি হয় এমন দোকানে রেইনকোট মিলছে বেশি।
কারণ বর্ষার সময় বাইকারদের জন্য রেইনকোট অতি দরকারি অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে। এছাড়া কাজকর্মে বাহিরে বের হওয়া, বাচ্চাদের স্কুল-কলেজ-ভার্সিটির যাতায়াতের জন্য সঙ্গে অনেকে রেইনকোট কিনছেন।
বাজারে ছেলে-মেয়ে ও বাচ্চাদের জন্য অনেক ধরনের রেইনকোট পাওয়া যায়। বর্তমান ফ্যাশনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সব বয়সীদের জন্যই বাজারে রেইনকোট রয়েছে। মূলত মেয়েদের জন্য ওভারকোট বেশি চলে। এগুলো ৩৫০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হতে দেখা গেছে। বাচ্চাদের রেইনকোট বিক্রি হচ্ছে ২৫০-৫০০ টাকার ভেতর।
তবে, বাইকারদের টেকসই রেইনকোটের দাম বেশি। ছেলেদের ফ্রি সাইজ রেইনকোটের দাম পড়ছে ৫৫০-১০০০ টাকার মতো। কোরিয়ান সিঙ্গেল রেইন ওভারকোট ৪৫০-১২০০ টাকা, ডাবল পার্ট রেইনকোটের দাম পড়ছে ১৫০০-২৫০০ টাকার মতো। সব বয়সী ছেলেমেয়ের জন্য চায়নিজ প্লাস্টিকের কিছু রেইনকোট বিক্রি হচ্ছে ২০০-৩০০ টাকার মধ্যে। আবার আরও কম দামে কিছু সিঙ্গেল ইউজ রেইনকোটও মিলছে ফুটপাতে।
এনএইচ/এএমএ/জিকেএস