জাতীয়

ভারতীয় নাগরিক ও রোহিঙ্গাদেরও ঠেলে দিচ্ছে বিএসএফ: বিজিবি ডিজি

ভারতীয় নাগরিক ও রোহিঙ্গাদেরও ঠেলে দিচ্ছে বিএসএফ: বিজিবি ডিজি

পুশ ইন বা পুশ ব্যাক যেটাই বলেন এটা প্রতিনিয়ত হচ্ছে। হয়তো মাঝেমধ্যে দু-একদিন বন্ধ থাকছে। কিন্তু চূড়ান্ত প্রক্রিয়াটা পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। কিছু ক্ষেত্রে ভারতীয় নাগরিক ও রোহিঙ্গাদেরও ঠেলে দিচ্ছে বিএসএফ, যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। আমরা বিএসএফকে কড়া প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

Advertisement

বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) চট্টগ্রামে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ১০৩তম রিক্রুট ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিজিবি মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, বিএসএফের কাছে প্রতিনিয়ত কড়া প্রতিবাদ দিচ্ছি। আমরা নিয়ম মাফিকভাবে হ্যান্ডওভার করতে বলেছিলাম। শুধু বাংলাদেশিদেরই পুশ ব্যাক করানো হচ্ছে না, কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভারতীয় নাগরিককে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে, কিছু কিছু রোহিঙ্গা নাগরিককেও পাঠিয়ে দিচ্ছে, যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল হওয়ায় আমরা কড়া প্রতিবাদ করছি। জাতীয় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত খবর প্রকাশিত হয়েছে।

আরও পড়ুন আন্তর্জাতিক আইন ভেঙেও ভারত কেন এত নির্বিকার? মৌলভীবাজার সীমান্ত দিয়ে আরও ৪৮ জনকে পুশ ইন

এদিন চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার বায়তুল ইজ্জতে অবস্থিত বিজিবির ঐতিহ্যবাহী প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজের (বিজিটিসিঅ্যান্ডসি) বীর উত্তম মজিবুর রহমান প্যারেড গ্রাউন্ডে এ কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। এসময় বিজিটিসিঅ্যান্ডসির কমান্ড্যান্ট ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গাজী নাহিদুজ্জামানসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

Advertisement

এক প্রশ্নের জবাবে বিজিবির ডিজি বলেন, আমরা নিয়মতান্ত্রিক হস্তান্তর চেয়েছিলাম। যদি আমাদের কোনো বাংলাদেশি অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশ করে তাহলে আমরা বিএসএফকে বুঝিয়ে মিটিংয়ের মাধ্যমে সমঝোতা করে তাদের ফিরিয়ে আনা নিশ্চিত করছি। কিছু ক্ষেত্রে তারা আমাদের কাছে অফিসিয়ালি হ্যান্ডওভার করছে। কিন্তু সবক্ষেত্রে বিএসএফ সেটি করছে না। কিছু জায়গায় পুশ ব্যাক বা পুশ ইন এখনো চলছে।

তিনি বলেন, বিএসএফকে বলার পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একাধিকবার লিখিতভাবে ভারতীয় হাইকমিশনে এ বিষয়গুলো জানানো হয়েছে। বাংলাদেশ দূতাবাসেও লেখা হয়েছে। বাংলাদেশে ভারতীয় দূতাবাসের হাইকমিশনারের সঙ্গে আমি যোগাযোগ রাখছি। আমরা এটি প্রতিহত করার চেষ্টা করছি। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যারা আসছেন তারা বাংলাদেশি, যারা আগে ভারতে গিয়েছিলেন।

অন্য এক প্রশ্নে মেজর জেনারেল আশরাফুজ্জামান আরও বলেন, জনবলের সংকট রয়েছে। এটি আপেক্ষিক একটি বিষয়। আমাদের জনবল সব মিলে প্রায় ৫৭ হাজার। আমাদের চার হাজার ৪২৭ কিলোমিটারের দীর্ঘ বর্ডার। বিভিন্ন ধরনের প্রতিকূল ভূমিও আছে। সে তুলনায় জনবল আরও বাড়ানো প্রয়োজন। এ প্রক্রিয়াও চলছে।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কিছুদিন আগে উখিয়ায় একটি ব্যাটালিয়ন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় আরও কিছু ব্যাটালিয়ন চালুর প্রক্রিয়া চলছে। নতুন নতুন বিওপি বাড়ানো হচ্ছে। অচিরেই আরও পাঁচ হাজারের মতো জনবল বাড়ানোর আশ্বাস বর্তমান সরকার আমাদের দিয়েছে। অচিরেই আমরা হয়তো এ রিক্রুটমেন্ট ও ট্রেনিং শেষ করতে পারবো।

Advertisement

আরও পড়ুন ভারত থেকে পুশ ইন ঠেকানো সম্ভব নয়: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ২ হাজারেরও বেশি ব্যক্তিকে বাংলাদেশে ‘পুশ ইন’ করেছে ভারত

বিজিবি ডিজি বলেন, গতকালই (বুধবার) প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আমাদের এ বিষয়ে বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে পর্যাপ্ত আলোচনা হয়েছে। শুধু বিজিবি নয়, অন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জনবলসহ অন্যান্য সংকট দূর করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে জনবল বৃদ্ধি সময় সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল একটি ব্যাপার। এটি চলমান প্রক্রিয়া।

জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। নির্বাচন ঘিরে বিজিবিকে সুনির্দিষ্ট কোনো প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে কি না- জানতে চাইলে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, সীমান্ত রক্ষা বা নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পরই বাকি জনবল আমরা জাতীয় নির্বাচনে সাপোর্ট হিসেবে দিতে পারবো।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সীমান্তের আট কিলোমিটার এলাকায় ভোটকেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তা ও সুষ্ঠু ভোটগ্রহণে বিজিবি স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নিয়োজিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে নির্বাচন কমিশন বা সরকার যেভাবে দায়িত্ব দেয় আমরা সেভাবে কাজ করবো। শুধু বিজিবি নয়, নির্বাচনী যে কোনো বিশৃঙ্খলা এড়ানো ও জনজীবনের নিরাপত্তায় আনসার, কোস্টগার্ডসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সব বাহিনীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

কেআর/এমকেআর/এএসএম