বিদেশে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন অনেকেই দেখেন। তবে কেবল ভিসা ও কাগজপত্র ঠিক করলেই চলবে না। নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে হলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা শিখে রাখা জরুরি। নাহলে হঠাৎ করে নতুন ভাষা, সংস্কৃতি ও দায়িত্বের চাপে অনেকেই হতাশ হয়ে পড়েন।
Advertisement
বিদেশে পাড়ি জমানোর আগে কিছু মৌলিক দক্ষতা আয়ত্ত করলে একজন শিক্ষার্থীর পক্ষে নতুন পরিবেশে সহজে মানিয়ে নেওয়া, বন্ধু তৈরি করা এবং পড়াশোনার পাশাপাশি ব্যক্তিগতভাবে ভালোভাবে গড়ে ওঠা অনেক সহজ হয়।
নিচে এমন ১০টি অপরিহার্য দক্ষতা তুলে ধরা হলো, যা প্রত্যেক আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর থাকা উচিত—
১. যোগাযোগ দক্ষতাবিদেশে গিয়ে লেখাপড়া, ক্লাস উপস্থাপনা, গ্রুপ প্রজেক্ট বা চাকরির ইন্টারভিউ—সব ক্ষেত্রেই পরিষ্কার ও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কথা বলার দক্ষতা অত্যন্ত প্রয়োজন।
Advertisement
যদি স্থানীয় ভাষা বা ইংরেজি আপনার প্রথম ভাষা না হয়, তাহলে আগে থেকেই অনুশীলন করা দরকার। শুধু কথা বলাই নয়, ভালো শ্রোতা হওয়া এবং প্রেক্ষাপট বুঝে প্রতিক্রিয়া দেওয়াও ভালো যোগাযোগের অংশ।
আরও পড়ুন>>
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি বেড়েছে ২৬ শতাংশ, দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে বিদেশে উচ্চশিক্ষায় আমিরাতি শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন নিয়ম বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য দুয়ার খুলছে হংকং ২. সময় ব্যবস্থাপনানতুন দেশে গিয়ে সময়ের গুরুত্ব অনেক বেশি বোঝা যায়। ক্লাস, পার্ট-টাইম চাকরি, অ্যাসাইনমেন্ট আর ব্যক্তিগত জীবনের ভারসাম্য রাখতে সময় ব্যবস্থাপনা শিখে ফেলাই ভালো।
ডেইলি প্ল্যানার বা অ্যাপ ব্যবহার করে কাজের অগ্রাধিকার ঠিক করে চললে চাপ কমবে।
Advertisement
যদি এমন দেশে যেতে চান যেখানে ইংরেজি ছাড়া অন্য ভাষা প্রচলিত, তাহলে কিছু প্রাথমিক বাক্য মুখস্থ রাখা কাজে আসবে।
ইংরেজি ভাষার দেশ হলেও অ্যাকাডেমিক ইংরেজি এবং সাবলীলভাবে কথা বলার দক্ষতা জরুরি। ভাষার ওপর দখল আত্মবিশ্বাস এবং চাকরির ক্ষেত্রেও বাড়তি সুবিধা এনে দিতে পারে।
৪. মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতাবিদেশে যাওয়ার মানেই হলো—নতুন সংস্কৃতি, নতুন নিয়ম, নতুন মুখ। যারা পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেন, তারাই দ্রুত সফল হন।
স্থানীয় খাবার, শিক্ষার ধরন কিংবা বিভিন্ন দেশের সহপাঠীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব—সব কিছুতেই নমনীয় মনোভাব রাখা দরকার।
৫. অর্থ ব্যবস্থাপনাবিদেশে যাওয়ার পর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের একটি থাকে সঠিকভাবে টাকাপয়সা ব্যয় করা। বাড়িভাড়া, খাবার, যাতায়াত, বই-পত্র, এবং বিনোদন—সব খরচ মিলিয়ে একটা বাজেট করে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ।
স্থানীয় ব্যাংকিং ব্যবস্থা, মুদ্রার বিনিময় হার—এসব জেনে নেওয়াও দরকার।
৬. সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাবিদেশে গিয়ে ছোট থেকে বড়—সব সিদ্ধান্ত নিজেকেই নিতে হয়। কী খাবেন, কোন কোর্স নেবেন, কোথায় থাকবেন—এসব বিষয়ে নিজের বিচারবুদ্ধি প্রয়োগ করতে হবে।
সাহসিকতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিতে শিখলে আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠবেন দ্রুত।
৭. সমস্যা সমাধানের দক্ষতাবিদেশে জীবন সবসময় সহজ নয়। ইন্টারনেট চলে যাওয়া, ভাষার সমস্যা, বা রান্না না পারা—এসব ছোট ছোট বিষয়েও নিজের বুদ্ধি দিয়ে সমাধান বের করতে হয়।
প্যানিক না করে চিন্তাভাবনা করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারলে চাপ কমে যাবে।
৮. দলগত কাজের দক্ষতাবিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনেক সময় গ্রুপ প্রজেক্ট করতে হয়। বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করতে হলে শ্রদ্ধাশীল ও সহযোগী মনোভাব রাখতে হয়।
এই দক্ষতা ভবিষ্যতের কর্মজীবনেও বড় সাহায্য করবে।
৯. নেটওয়ার্কিং ও সামাজিক দক্ষতাবন্ধুত্ব, গবেষণার সুযোগ, পার্ট-টাইম চাকরি বা পরামর্শ পেতে হলে নেটওয়ার্কিং দরকার।
অপরিচিতদের সঙ্গে কথা বলা, কোনো ইভেন্টে অংশ নেওয়া, বা নতুন গ্রুপে যোগ দেওয়া—এসব ছোট ছোট বিষয় অনেক বড় সুযোগ এনে দিতে পারে।
১০. আত্মসচেতনতা ও আবেগ নিয়ন্ত্রণবিদেশে একা থাকলে নিজের অনুভূতি, দুর্বলতা ও শক্তি সম্পর্কে সচেতন হওয়া জরুরি।
হোমসিকনেস, স্ট্রেস কিংবা ব্যর্থতা—এসব সামলাতে আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা অনেক কাজে দেয়। এটি মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সূত্র: স্কলারশিপ রিজিওনকেএএ/