গত বছরের জুলাই গণঅভ্যুত্থান দমনে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার সেসময়ের কথোপকথনের ফাঁস হওয়া একটি অডিও রেকর্ডিং থেকে এই তথ্য জানা গেছে।
Advertisement
বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত মার্চ মাসে অনলাইনে ফাঁস হওয়া ওই অডিও রেকর্ডিং যাচাই করেছে বিবিসি আই। সেটি অনুসারে, বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে ‘প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার’ করার জন্য দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর প্রতি নির্দেশনা দেন শেখ হাসিনা।
নির্দেশনায় বলা হয়, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা আন্দোলনকারীদের ‘যেখানে পাবে, সোজা গুলি করবে।’
অজ্ঞাত একজন ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে শেখ হাসিনার কথোপকথনের ফাঁস হওয়া অডিওটি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ যে, তিনি সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের গুলি করার জন্য সরাসরি নির্দেশনা দিয়েছিলেন।
Advertisement
জাতিসংঘের তদন্তকারী দলের তথ্যমতে, গত জুলাই-আগস্টের ওই আন্দোলন ও সহিংসতায় অন্তত এক হাজার ৪০০ জন মানুষ প্রাণ হারান।
আরও পড়ুন জুলাইয়ে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা হাসিনার পতনের পরও যাত্রাবাড়ীতে ৫২ জনকে হত্যা করে পুলিশ হাসিনার নির্দেশেই গুলি, বিবিসির ভেরিফিকেশন বিচারে স্বচ্ছতা বাড়াবে কল রেকর্ড ট্রেলার মাত্র, অনেক কিছু এখনো বাকি: চিফ প্রসিকিউটরমানবতাবিরোধী অপরাধের একাধিক অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যে বিচার শুরু হয়েছে, সেখানে অডিও এই রেকর্ডিংটি গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করার পরিকল্পনা করছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটররা।
তবে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
‘টেপ রেকর্ডিংটি সত্য কি-না, তা আমরা নিশ্চিত করতে পারছি না,’ বিবিসিকে বলেন আওয়ামী লীগের একজন মুখপাত্র।
Advertisement
ফাঁস হওয়া অডিও রেকর্ডিংটি ‘শেখ হাসিনার বেআইনি কোনো উদ্দেশ্যের প্রতিফলন ঘটায় না’ বলেও মন্তব্য করেছেন তারা।
অডিও রেকর্ডিংটি যেভাবে যাচাই করেছে বিবিসিফাঁস হওয়া অডিওটি সম্পর্কে জানেন এমন একটি সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছে, গত বছরের ১৮ জুলাই নিজের সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে শেখ হাসিনা ওই ফোনালাপটি করেন।
চলতি বছরের মার্চের শুরুতে ফোনালাপের অডিওটি কে ফাঁস করেছে তা স্পষ্ট নয়। বিক্ষোভের পর থেকে হাসিনার কলের অসংখ্য ক্লিপ অনলাইনে প্রকাশিত হয়েছে যার অনেকগুলোই যাচাই করা হয়নি।
১৮ জুলাইয়ের ফাঁস হওয়া রেকর্ডিংয়ের কণ্ঠের সঙ্গে শেখ হাসিনার কণ্ঠস্বরের মিল শনাক্ত করেছে বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
বিবিসি আলাদাভাবে ইয়ারশটের অডিও ফরেনসিক এক্সপার্টদের দিয়ে এই রেকর্ডিংয়ের সত্যতা যাচাই করেছে এবং তারা এটিতে এডিট করার বা কোনো রকম পরিবর্তন করার কোনো প্রমাণ পায়নি।
অডিওটি কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হয়েছে এমন সম্ভাবনাও খুবই কম বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
মানবাধিকার বা পরিবেশ রক্ষার ইস্যুতে অডিও সংক্রান্ত তদন্তের কাজ করে অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ইয়ারশট।
আরও পড়ুন শেখ হাসিনাকে গণহত্যার জন্য অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ বৃহস্পতিবার শুধু হাসিনা নয়, আওয়ামী লীগেরও বিচার হওয়া উচিত: ফখরুল শেখ হাসিনার উপযুক্ত বিচার অবশ্যই হবে বাংলাদেশেতারা বলছে, ফাঁস হওয়া রেকর্ডিংটি সম্ভবত এমন একটি ঘরে ধারণ করা হয়েছিল যেখানে ফোন কলটি স্পিকারে বাজানো হয়েছিল। কারণ এতে স্বতন্ত্র টেলিফোনিক ফ্রিকোয়েন্সি এবং ব্যাকগ্রাউন্ডে কিছু শব্দ ছিল।
ইয়ারশটের বিশেষজ্ঞরা রেকর্ডিংজুড়ে ইলেকট্রিক নেটওয়ার্ক ফ্রিকোয়েন্সি বা ইএনএফ শনাক্ত করেছে, যে ফ্রিকোয়েন্সি অন্য একটি ডিভাইস থেকে অডিও রেকর্ডিংয়ের ক্ষেত্রে প্রায়ই উপস্থিত থাকে। এটি এমন এক সূচক যার মানে হলো অডিওটিতে হেরফের করা হয়নি।
তারা শেখ হাসিনার বক্তব্যে ছন্দ, স্বর এবং শ্বাসের শব্দ বিশ্লেষণ করেছে এবং ধারাবাহিক নয়েজের স্তরও শনাক্ত করেছে। অডিওতে কৃত্রিম কোনো পরিবর্তন আনার প্রমাণও খুঁজে পায়নি।
ব্রিটিশ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনজীবী টবি ক্যাডম্যান বিবিসিকে বলেছেন, ‘রেকর্ডিংগুলো তার (শেখ হাসিনার) ভূমিকা প্রমাণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এগুলো স্পষ্ট এবং সঠিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে এবং অন্যান্য প্রমাণ দ্বারা সমর্থিত।’
টবি ক্যাডম্যান বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) পরামর্শক হিসেবে কাজ করছেন যেখানে শেখ হাসিনাসহ অন্যদের বিরুদ্ধে মামলা চলছে। আইসিটি মোট ২০৩ জনকে অভিযুক্ত করেছে, যার মধ্যে ৭৩ জন গ্রেফতার রয়েছেন।
আন্দোলনে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও বাংলাদেশের আদালতে বিচার চলছে।
সূত্র: বিবিবি বাংলা
এমএমএআর/এএসএম