সদ্য সমাপ্ত অর্থবছর ২০২৪-২৫ ও ২০২৪ সালে তৈরি পোশাক রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক। তবে ২০২৪ সালে কমেছে বৈশ্বিক রপ্তানি বাজারে বাংলাদেশের হিস্যা। বিশ্বের পোশাক রপ্তানি বাজারে বাংলাদেশের অংশীদারত্ব ২০২৪ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৯ শতাংশে, যা আগের বছর ছিল ৭ দশমিক ৩৮ শতাংশ।
Advertisement
বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ ভিয়েতনাম একই সময়ে বাজারে তার অবস্থান শক্তিশালী করেছে। ২০২৩ সালে ৫ দশমিক ৯৬ শতাংশ থেকে ২০২৪ সালে বেড়ে হয়েছে ৬ দশমিক ০৯ শতাংশ।
বাংলাদেশের মতো চীনের আধিপত্যও কমেছে। দেশটি ২০২৪ সালে ২৯ দশমিক ৬৪ শতাংশ বাজার ধরে রাখতে পেরেছে, যেখানে ২০২৩ সালে তাদের দখলে ছিল ৩১ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বৈশ্বিক তৈরি পোশাক রপ্তানি বাজারে তুরস্কের অংশীদারত্ব ৩ দশমিক ২১ শতাংশ। ভারতের দখলে রয়েছে ২ দশমিক ৯৪ শতাংশ। কম্বোডিয়ার বাজার অংশীদারত্ব ১ দশমিক ৭৭ শতাংশ, পাকিস্তানের ১ দশমিক ৬৬ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার ১ দশমিক ৫৭ শতাংশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের অংশ ১ দশমিক ২৬ শতাংশ।
Advertisement
আমাদের ঘনিষ্ঠ প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনাম এই সুযোগে বাজারে আরও বেশি অংশীদারত্ব দখল করে নিচ্ছে। বৈশ্বিক চাহিদা বাড়লেও আমরা সে অনুপাতে উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে পারিনি। এটিও আমাদের পিছিয়ে পড়ার আরেকটি বড় কারণ।- বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু
বৈশ্বিক পোশাক রপ্তানি বাজারে ৭ দশমিক ০৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে এবং চীনের আধিপত্য বজায় রয়েছে। বাংলাদেশও তার দ্বিতীয় স্থান ধরে রেখেছে। বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৮ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলারে, যা আগের বছরের তুলনায় ০ দশমিক ২১ শতাংশ বেশি।
আরও পড়ুনপাল্টা শুল্ক নিয়ে আলোচনার প্রস্তুতি সুচিন্তিত মনে হয়নিবাধা পেরিয়ে রপ্তানি আয় বেড়েছে, প্রত্যাশা ছুঁতে পারেনি প্রবৃদ্ধিবাংলাদেশের রপ্তানিতে অশনি সংকেত!বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ২০২৪ সালের তথ্য অনুযায়ী, বৈশ্বিক পোশাক রপ্তানি বাজারের আকার দাঁড়িয়েছে ৫৫৭ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলারে, যা আগের বছরের ৫২০ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলারের চেয়ে ৭ দশমিক ০৮ শতাংশ বেশি।
এ বাজারে চীন শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে। দেশটি ২০২৪ সালে ১৬৫ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে, যা ০ দশমিক ৩০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নির্দেশ করে।
Advertisement
ভিয়েতনাম শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। দেশটি ২০২৪ সালে ৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করে ৩৩ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে।
তালিকায় আরও আছে তুরস্ক, যার রপ্তানি হয়েছে ১৭ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার। ভারতের রপ্তানি দাঁড়িয়েছে ১৬ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলার, কম্বোডিয়া ৯ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন, পাকিস্তান ৯ দশমিক ২৮ বিলিয়ন, ইন্দোনেশিয়া ৮ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্র ৭ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করেছে।
বাংলাদেশের সামনে বাজার দখলের বিশাল সুযোগ রয়েছে। কারণ শীর্ষস্থানীয় দেশ চীন তাদের বাজার অংশীদারত্ব হারাচ্ছে, যা প্রধানত এশিয়ার দেশগুলোর দিকে সরে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশই এখন আমদানিকারক ও ব্র্যান্ডগুলোর জন্য সবচেয়ে আকর্ষণীয় গন্তব্য।- ড. জাহিদ হোসেন
তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু জাগো নিউজকে বলেন, ‘যদিও রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে, তবুও বাজারে আমাদের অংশীদারত্ব বাড়েনি। এর মূল কারণ দেশের দুর্বল অবকাঠামো এবং কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস পাওয়া। পাশাপাশি, ইউটিলিটি সেবার মূল্যবৃদ্ধি আমাদের প্রতিযোগিতামূলক সুবিধাকে খেয়ে ফেলেছে। ফলে বাজারে অংশীদারত্ব বাড়ার পরিবর্তে আমরা নেতিবাচক প্রভাবের মুখে পড়েছি।’
বাবু বলেন, ‘আমাদের ঘনিষ্ঠ প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনাম এই সুযোগে বাজারে আরও বেশি অংশীদারত্ব দখল করে নিচ্ছে। বৈশ্বিক চাহিদা বাড়লেও আমরা সে অনুপাতে উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে পারিনি। এটিও আমাদের পিছিয়ে পড়ার আরেকটি বড় কারণ।’
‘তবে আমরা নিরাশ নই, কারণ এখনো আমাদের জন্য বড় সুযোগ রয়েছে— কেননা বাজারে শীর্ষস্থানীয় দেশ চীন ধীরে ধীরে তার অংশীদারত্ব হারাচ্ছে।’
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘প্রথমত, আমাদের নজর দিতে হবে সাশ্রয়ী দামে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার দিকে। পাশাপাশি, বন্দর সেবার মান ও দক্ষতা উন্নত করাও জরুরি। আসল উদ্যোক্তাদের কাছে অর্থের প্রবাহ নিশ্চিত করতে হলে সরকারকে অর্থপাচারকারীদের ঋণ দেওয়া বন্ধ করতে হবে। যারা এ খাতে অনিয়ম করছে, তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।’
বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশের সামনে বাজার দখলের বিশাল সুযোগ রয়েছে। কারণ শীর্ষস্থানীয় দেশ চীন তাদের বাজার অংশীদারত্ব হারাচ্ছে, যা প্রধানত এশিয়ার দেশগুলোর দিকে সরে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশই এখন আমদানিকারক ও ব্র্যান্ডগুলোর জন্য সবচেয়ে আকর্ষণীয় গন্তব্য। এই মুহূর্তে আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন চীন থেকে সরে আসা ক্রেতাদের আকৃষ্ট করা এবং উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানো।’
তিনি আরও বলেন, ‘পণ্য ও বাজারের বৈচিত্র্যের দিকে অগ্রসর হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। চীন যেহেতু মধ্যম ও বেসিক পোশাক বাজার থেকে সরে যাচ্ছে, তাই আমাদের এখনই এ সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। পাশাপাশি উচ্চমূল্য সংযোজনযুক্ত পণ্য উৎপাদনের দিকে মনোযোগ দিতে হবে।’
আইএইচও/এএসএ/এমএফএ/জেআইএম