দেশজুড়ে

ভরসার আসনে জামায়াত-এনসিপির সঙ্গে লড়াই হবে বিএনপির

ভরসার আসনে জামায়াত-এনসিপির সঙ্গে লড়াই হবে বিএনপির

কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলা নিয়ে গঠিত রংপুর-৪ আসন। প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত এই আসনে বিএনপি থেকে একবার এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। এছাড়া বাকি সময়টা দখলে ছিল আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির।

Advertisement

একটা সময় এই আসনকে জাতীয় পার্টির দুর্গ হিসেবে দেখা হলেও এখন সেই অবস্থা নেই। আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটগত নির্বাচনের সময় ২০১৮ ও ২০২৪ সালে উন্মুক্ত রাখা হয়েছিল এই আসন। এরমধ্যে ২০২৪ সালের নির্বাচনে ৪১ হাজার ভোট পেলেও ২০১৮ সালের ভোটে জামানত হারান জাতীয় পার্টির প্রার্থী।

এবার এই আসনে ভোট বেড়েছে ৪৭ হাজার, যার অধিকাংশই তরুণ। এদের একটা বড় অংশ তরুণ নেতৃত্বের দিকে হয়তো ঝুঁকতে পারে। তবে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলনকেও একেবারে বাদ দেওয়ার সুযোগ নেই। তাদেরও ভোটার-সমর্থক রয়েছেন।

এ অবস্থায় ৫ আগস্ট ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর থেকে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির অবর্তমানে বিজয়ের ফসল ঘরে তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।

Advertisement

এরইমধ্যে প্রার্থীরা তাদের নির্বাচনী এলাকায় বিভিন্নভাবে গণসংযোগ শুরু করেছেন। তবে বাম দলসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর তৎপরতা এখনো শুরু হয়নি।

আরও পড়ুন বিএনপির চ্যালেঞ্জ জামায়াত-ইসলামী আন্দোলন  জামায়াতের সামনে সুযোগের হাতছানি, বিএনপিও আশাবাদী 

বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে (তৎকালীন অবিভক্ত) আওয়ামী লীগ থেকে হামিদুজ্জামান সরকার, ১৯৭৯ সালের দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির রহিম উদ্দিন ভরসা, ১৯৮৬ সালের তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে (সীমানা পরিবর্তন) আওয়ামী লীগের আব্দুর রাজ্জাক, ১৯৮৮ ও ১৯৯১ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির শাহ আলম, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির করিম উদ্দিন ভরসা এবং ২০০৮ থেকে ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের টিপু মুনশি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

শেষ চার মেয়াদের নির্বাচনে একচেটিয়া প্রভাব বিস্তার করেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

দেশের বিশিষ্ট শিল্পপতি প্রয়াত রহিম উদ্দিন ও করিম উদ্দিন ভরসার নির্বাচনী এলাকা কাউনিয়া-পীরগাছা। অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে এই এলাকায় ভরসা পরিবারের যথেষ্ট অবদান রয়েছে। ওই পরিবার থেকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে এমদাদুল হক ভরসা মনোনয়ন পেতে পারেন।

Advertisement

২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রহিম উদ্দিন ভরসার ছেলে এমদাদুল হক ভরসা বিএনপির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। সেবার ১ লাখ চার হাজার ১৭০ ভোট পেয়ে নিজের জনপ্রিয়তার জানান দেন। যদিও ওই নির্বাচন ঘিরে নানান বিতর্ক ওঠে। ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে সেসময় টিপু মুনশি ১ লাখ ৯৯ হাজার ৯৭৩ ভোটে এমপি নির্বাচিত হন বলে জোর গুঞ্জন উঠেছিল।

এই আসনে ২০১৮ সালে জাতীয় পার্টির মোস্তফা সেলিম বেঙ্গল পেয়েছিলেন ৭ হাজার ৪৩ ভোট। মোট ভোটার সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ১২ হাজার ৫৮২।

কাঙ্ক্ষিত সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে জাতীয় নাগরিক পার্টি কেবল তরুণ সমাজের নয়, সব শ্রেণির মানুষের সমর্থন নিয়ে এগিয়ে যাবে। প্রত্যন্ত এলাকায় গিয়েও আমরা সাধারণ মানুষের অভূতপূর্ব সাড়া পাচ্ছি।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির কান্ডারি হিসেবে সামনের সারিতে আছেন এমদাদুল হক ভরসা। তাকে দিয়েই আসন পুনরুদ্ধারের আশা করছে বিএনপি। এখানে বাগড়া দিতে পারে জামায়াত-এনসিপি। এই আসনে ইসলামী আন্দোলনেরও ভোট আছে। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন নির্বাচন করবেন। এরইমধ্যে তাকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে এনসিপি। এদিকে জামায়াতে ইসলামীর রংপুর মহানগরের আমির উপাধ্যক্ষ মাওলানা এটিএম আজম খান ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী হিসেবে মাওলানা মুহাম্মাদ জাহিদ হাসানের নাম ঘোষণা করা হয়েছে।

আরও পড়ুন ৪২ শতাংশ সনাতন ধর্মাবলম্বী ভোটারই নির্ধারণ করবে জয়-পরাজয়  ফখরুলের প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াতের দেলাওয়ার, আছেন স্বতন্ত্ররাও 

কাউনিয়া উপজেলার হারাগাছ পৌর এলাকার ভোটার মিজানুর রহমান বলেন, দেশের বিশিষ্ট শিল্পপতি প্রয়াত রহিম উদ্দিন ও করিম উদ্দিন ভরসার নির্বাচনী এলাকা কাউনিয়া-পীরগাছা। অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে এই এলাকায় ভরসা পরিবারের যথেষ্ট অবদান রয়েছে। ওই পরিবার থেকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে এমদাদুল হক ভরসা মনোনয়ন পেতে পারেন বলে সাধারণ মানুষ আশা করছে। সেদিক বিবেচনায় এবার বিএনপির জন্য একটা ভালো সুযোগ এসেছে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ কর্মী-সমর্থকরাও এখন তাদের ভুল বুঝতে পেরেছে। সব মিলিয়ে বিবেকবান, দেশপ্রেমিক, খেটে খাওয়া মানুষসহ সব শ্রেণির মানুষের মাঝে জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে ব্যাপক একটা সাড়া জেগেছে। আশা করছি আগামী নির্বাচনে মানুষ তাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ে জামায়াতে ইসলামীকে সমর্থন দেবে।

জানতে চাইলে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী কাউনিয়া উপজেলার সভাপতি এমদাদুল হক ভরসা জাগো নিউজকে বলেন, ১৯৭৯ সালে আমার বাবা বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে এই আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপর আসনটি আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির দখলে চলে যায়। এতে এই এলাকার কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন কখনোই হয়নি।

এমদাদুল হক ভরসা বলেন, আওয়ামী লীগ বিনা ভোটে ক্ষমতা দখল করে ১৭ বছর আমাদের জীবন থেকে কেড়ে নিয়েছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে মাত্র দুই ঘণ্টায় লক্ষাধিক ভোট পেয়েছিলাম। ওইদিন মানুষ ভোট দেওয়ার সুযোগ পেলে আমার জয় নিশ্চিত ছিল। মানুষ এসব পরিবর্তনের সুযোগ খুঁজছিল। অবশেষে গত বছরের ৫ আগস্ট আমরা সেই সুযোগ পেয়েছি। আগামী নির্বাচন যদি সুষ্ঠু হয় তাহলে বিএনপির হারানো এই আসন পুনরুদ্ধার হবে বলে আশা করি।

জামায়াতে ইসলামীর রংপুর মহানগর আমির এটিএম আজম খান বলেন, সব শ্রেণির মানুষ জামায়াতকে একবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় দেখতে চায়। এতদিন জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের ওপর ভর করেছিল। ওই দলের অধিকাংশ নেতাকর্মী ইসলামপন্থি। আওয়ামী লীগের পেছনে থেকে তাদের অনেকের ক্ষতি হয়েছে-এটা এখন তারা বুঝতে পেরেছে। এছাড়া আওয়ামী লীগের সাধারণ কর্মী-সমর্থকরাও এখন তাদের ভুল বুঝতে পেরেছে। সব মিলিয়ে বিবেকবান, দেশপ্রেমিক, খেটে খাওয়া মানুষসহ সব শ্রেণির মানুষের মাঝে জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে ব্যাপক সাড়া জেগেছে। আশা করছি আগামী নির্বাচনে মানুষ তাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ে জামায়াতে ইসলামীকে সমর্থন দেবে।

জাতীয় নাগরিক পার্টির রংপুর জেলার প্রধান সমন্বয়কারী আসাদুল্লাহ আল গালিব বলেন, আমরা এখনো নির্বাচনমুখী প্রচারণা শুরু করিনি। ফ্যাসিবাদের বিচার, মৌলিক সংস্কার ও নতুন সংবিধানের দাবিতে আমাদের কর্মসূচি চলমান। আগে আমাদের দাবি পূরণ হবে তারপর নির্বাচনমুখী কার্যক্রম।

গালিব আরও বলেন, কাঙ্ক্ষিত সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে জাতীয় নাগরিক পার্টি কেবল তরুণ সমাজের নয়, সব শ্রেণির মানুষের সমর্থন নিয়ে এগিয়ে যাবে। প্রত্যন্ত এলাকায় গিয়েও আমরা সাধারণ মানুষের অভূতপূর্ব সাড়া পাচ্ছি।

আরও পড়ুন বিএনপি-জামায়াত লড়াইয়ের সম্ভাবনা  নতুন প্রার্থীদের ব্যাপক প্রচারণা 

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মাওলানা মুহাম্মাদ জাহিদ হাসান জাগো নিউজকে বলেন, নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। তারা এখন পরিবর্তন চায়। তারা চায় দেশের সব ইসলামি দল এক হয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করুক। একজন প্রার্থী হিসেবে ভোটারসহ সাধারণ মানুষের ভালোই সাড়া পাচ্ছি।

রংপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে মোট ভোটার ছিলেন ৪ লাখ ৭৮ হাজার ৩৮৩।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে ভোটার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ২৬ হাজার ২৪০। সেই হিসাবে ভোট বেড়েছে ৪৭ হাজার ৮৫৭।

পীরগাছা উপজেলার ভোটার স্কুল শিক্ষক আমিনুল ইসলাম বলেন, এবার এই আসনে ভোট বেড়েছে ৪৭ হাজার, যার অধিকাংশই তরুণ। এদের একটা বড় অংশ তরুণ নেতৃত্বের দিকে হয়তো ঝুঁকতে পারে। তবে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশকেও একেবারে বাদ দেওয়ার সুযোগ নেই। তাদেরও ভোটার-সমর্থক রয়েছেন।

জেডআইকে/এসএইচএস/এমএফএ/জিকেএস