ধর্ম

আল্লাহ তাআলার গুণবাচক নামসমূহ

আল্লাহ তাআলার গুণবাচক নামসমূহ

আল্লাহ তাআলার সুন্দর গুণবাচক নামগুলো জানলে আল্লাহকে জানা যায়, চেনা যায়। তার সাথে অন্তরের সম্পর্ক বাড়ে। কোরআনে আল্লাহ তাআলা তাকে তার সুন্দর নামসমূহের মাধ্যমে ডাকতে বলেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, আর আল্লাহর জন্য রয়েছে সুন্দরতম নামসমূহ। তোমরা তাঁকে সেসব নামে ডাক। আর তাদেরকে বর্জন কর তাদের যারা তাঁর নামে বিকৃতি ঘটায়। তারা যা করত অচিরেই তাদেরকে তার প্রতিফল দেয়া হবে। (সুরা আ’রাফ: ১৮০)।

Advertisement

কোরআনের প্রখ্যাত ব্যাখ্যাকার আল্লামা শাওকানি (রহ.) বলেন, এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা নিজের গুণবাচক নামসমূহের কথা বলেছেন। তার শ্রেষ্ঠ ও সুন্দর নাসমূহের মাধ্যমে তাকে ডাকার নির্দেশ দিয়েছেন। এই নামসমূহের মাধ্যমে দোয়া করলে দোয়া কবুল হয়। (ফতহুল কাদির)

নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর উত্তম নামসমূহ জানতে এবং সেগুলো মুখস্ত করতে উৎসাহ দিয়েছেন এবং এর বিনিময়ে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আল্লাহর রয়েছে নিরানব্বইটি নাম, এক কম একশ—যে এগুলো মুখস্ত করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (সহিহ বুখারি)

ইমাম নববি (রহ.) এ হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন, ওলামায়ে কেরাম একমত যে, এই হাদিসে আল্লাহর নামসমূহের সংখ্যা নির্দিষ্ট করা হয়নি, অর্থাৎ তাঁর নাম নিরানব্বইয়ে সীমাবদ্ধ করা হয়নি। তার আরও নাম রয়েছে। এই হাদিসে বলা হয়েছে, আল্লাহর নিরানব্বইটি নাম যে মুখস্ত করবে, সে জান্নাতে যাবে। আল্লাহর মোট নাম নিরানব্বইটি—এ রকম কথা এখানে বলা হয়নি। অন্য হাদিসে এসেছে, নবিজি (সা.) দোয়ায় বলতেন, ‘আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করছি ওই সব নামে যেসব নাম আপনি নিজেকে দিয়েছেন অথবা গোপন রেখেছেন আপনার অদৃশ্য জ্ঞানের ভাণ্ডারে।’ (শরহু মুসলিম লিননববি)

Advertisement

অর্থাৎ নবিজির (সা.) এ কথা থেকে বোঝা যায় আল্লাহর নাম নিরানব্বইয়ে তো সীমাবদ্ধ নয়ই, তার সব নাম মানুষের জানাও নেই, আল্লাহর এমন অনেক নাম আছে যা তিনি তার অদৃশ্য জ্ঞানভাণ্ডারে গোপন রেখেছেন।

সুনানে তিরমিজিতে আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আরেকটি হাদিসে এসেছে, নবিজি (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলার গুণবাচক নামগুলো হলো:

১. আল্লাহ (আল্লাহ)

২. আর-রহমান (মহান দয়ালু)

Advertisement

৩. আর-রহীম (অসীম করুণাময়)

৪. আল-মালিক (সর্বকর্তৃত্বময়, অধিপতি, মালিক)

৫. আল-কুদ্দুস (মহাপবিত্র)

৬. আস-সালাম (শান্তিদাতা)

৭. আল-মু’মিন (নিরাপত্তাদানকারী)

৮. আল-মুহাইমিন (পরিপূর্ণ রক্ষণাবেক্ষণকারী)

৯. আল-আযীয (মহাপরাক্রমশালী)

১০. আল-জাব্বার (মহাশক্তিধর)

১১. আল-মুতাকাব্বির (মহাগৌরবান্বিত)

১২. আল-খালিক (স্রষ্টা)

১৩. আল-বারি’ (সৃজনকর্তা)

১৪. আল-মুসওয়ির (অবয়বদানকারী)

১৫. আল-গাফফার (ক্ষমাকারী)

১৬. আল-কাহহার (শাস্তিদাতা)

১৭. আল-ওয়াহ্হাব (মহান দাতা)

১৮. আর-রাযযাক (রিজিকদাতা)

১৯. আল-ফাত্তাহ (মহাবিজয়ী)

২০. আল-আলীম (মহাজ্ঞানী)

২১. আল-কাবিয (হরণকারী)

২২. আল-বাসিত (সম্প্রসারণকারী)

২৩. আল-খাফিয (অবনতকারী)

২৪. আর-রাফি’ (উন্নতকারী)

২৫. আল-মু’ইয্‌য (সম্মানদাতা)

২৬. আল-মুযিল (সম্মান হরণকারী)

২৭. আস-সামি’ (শ্রবণকারী)

২৮. আল-বাছীর (মহাদ্রষ্টা)

২৯. আল-হাকাম (মহাবিচারক)

৩০. আল-আদল (মহান্যায়পরায়ণ)

৩১. আল-লাতীফ (সূক্ষ্মদর্শী)

৩২. আল-খাবীর (মহা সংবাদরক্ষক)

৩৩. আল-হালীম (মহাসহিষ্ণু)

৩৪. আল-আযীম (মহান)

৩৫. আল-গাফুর (মহাক্ষমাশীল)

৩৬. আশ-শাকুর (কৃতজ্ঞতাপ্রিয়)

৩৭. আল-আলী (মহা উন্নত)

৩৮. আল-কাবীর (অতীব মহান)

৩৯. আল-হাফীজ (মহারক্ষক)

৪০. আল-মুকীত (মহাশক্তিদাতা)

৪১. আল-হাসীব (হিসাব গ্রহণকারী)

৪২. আল-জালীল (মহামহিমান্বিত)

৪৩. আল-করীম (মহাঅনুগ্রহশীল)

৪৪. আর-রাকীব (মহাপর্যবেক্ষক)

৪৫. আল-মুজীব (দোয়া কবুলকারী)

৪৬. আল-ওয়াসি’ (মহাবিস্তারক)

৪৭. আল-হাকীম (মহাবিজ্ঞ)

৪৮. আল-ওয়াদূদ (পরম স্নেহশীল)

৪৯. আল-মাজীদ (মহাগৌরবান্বিত)

৫০. আল-বা’ইস (পুনরুজ্জীবিতকারী)

৫১. আশ-শাহীদ (সর্বদ্রষ্টা)

৫২. আল-হাক্ক (মহাসত্য)

৫৩. আল-ওয়াকীল (মহাপ্রতিনিধি)

৫৪. আল-কাওয়ী (মহাশক্তিধর)

৫৫. আল-মাতীন (দৃঢ় শক্তির অধিকারী)

৫৬. আল-ওয়ালী (মহাঅভিভাবক)

৫৭. আল-হামীদ (মহাপ্রশংসিত)

৫৮. আল-মুহসী (পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব রক্ষাকারী)

৫৯. আল-মুবদি’ (সৃষ্টির সূচনাকারী)

৬০. আল-মু’ঈদ (পুনরায়-সৃষ্টিকর্তা)

৬১. আল-হাইয়্যু (চিরঞ্জীব)

৬২. আল-কাইয়ূম (চিরস্থায়ী)

৬৩. আল-মুহয়ী (জীবনদাতা)

৬৪. আল-মুমীত (মৃত্যুদাতা)

৬৫. আল-ওয়াজিদ (ইচ্ছামাত্র সম্পাদনকারী)

৬৬. আল-মাজিদ (মহাগৌরবান্বিত)

৬৭. আল-ওয়াহিদ (এক ও একক)

৬৮. আস-সামাদ (স্বয়ংসম্পূর্ণ)

৬৯. আল-কাদির (সর্বশক্তিমান)

৭০. আল-মুকতাদির (মহাক্ষমতাবান)

৭১. আল-মুকাদ্দিম (অগ্রসরকারী)

৭২. আল-মুআখখির (বিলম্বকারী)

৭৩. আল-আওয়াল (অনাদি)

৭৪. আল-আখির (অনন্ত)

৭৫. আয-যাহির (প্রকাশ্য)

৭৬. আল-বাতিন (লুকায়িত)

৭৭. আল-ওয়ালী (অধিপতি)

৭৮. আল-মুতাআলী (চিরউন্নত)

৭৯. আল-বার্‌র (কল্যাণদাতা)

৮০. আত-তাওয়াব (তাওবা কবুলকারী)

৮১. আল-মুনতাকিম (প্রতিশোধ গ্রহণকারী)

৮২. আল-আফুউ (ক্ষমাকারী, উদারতা প্রদর্শনকারী)

৮৩. আর-রউফ (অতিদয়ালু)

৮৪. মালিকুল মুলক (সার্বভৌমত্বের মালিক)

৮৫. যুল-জালালি ওয়াল ইকরাম (গৌরব ও মহত্বের অধিকারী)

৮৬. আল-মুকসিত (ন্যায়বান)

৮৭. আল-জামি’ (সমবেতকারী)

৮৮. আল-গানী (ঐশ্বর্যশালী)

৮৯. আল-মুগনী (ঐশ্বর্যদাতা)

৯০. আল-মানি’ (প্রতিরোধকারী)

৯১. আয-যার্‌র (অনিষ্টকারী)

৯২. আন-নাফি’ (উপকারকারী)

৯৩. আন-নূর (আলো)

৯৪. আল-হাদী (পথপ্রদর্শক)

৯৫. আল-বাদী’ (সূচনাকারী)

৯৬. আল-বা’কী (চিরবিরাজমান)

৯৭. আল-ওয়ারিস (স্বত্বাধিকারী)

৯৮. আর-রাশীদ (সৎপথে চালনাকারী)

৯৯. আস-সাবূর (মহাধৈর্যশীল)

ওএফএফ/এমএস