গাজীপুরে নদী দখল ও দূষণের অভিযোগে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানকে ‘গ্রিন ফ্যাক্টরি’ অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে পরিবেশবাদী সংগঠন ও সাধারণ মানুষের মাঝে সৃষ্টি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে নানা আলোচনা সমালোচনা।
Advertisement
গত ২৪ জুন রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বেশ কিছু কারখানাকে গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। এতে গাজীপুরের শ্রীপুরে লবলং নদী দখল ও দূষণের অভিযোগ থাকা এক্স সিরামিক কারখানা কর্তৃপক্ষ পেয়েছে এই অ্যাওয়ার্ড সম্মাননা। এরপর থেকেই জেলার বিভিন্ন সংগঠন ও সাধারণ মানুষ ফেসবুকে নানা প্রতিক্রিয়া জানানো শুরু করে। ওই কারখানাকে গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড প্রদানের ঘটনায় ১৫টি পরিবেশবাদী ও সামাজিক সংগঠন প্রতিবাদ জানিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শ্রীপুর পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বেড়াইদেরচালা গ্রামে ২০০৯ সালে ৭৫ বিঘা জমি নিয়ে গড়ে ওঠে এক্স সিরামিক কারখানা। নির্মাণের শুরুতে ঐতিহ্যবাহী লবলং নদী দখল করতে শুরু করে তারা। শুরুতে লবলংকে সামান্য ছাড় দিলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দখল করতে শুরু করে কারখানা কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে দখলের ফলে নদীটি খালে পরিণত হয়েছে। সাপের মতো এঁকেবেঁকে কারখানা কর্তৃপক্ষের ইচ্ছে মতো গতিপথ পরিবর্তন করেছে। খালের কয়েকটি পয়েন্টে তৈরি করেছে অস্থায়ী ব্রিজ। কারখানার ভেতর খালের ওপর কালভার্ট নির্মাণ করে দুই পাড়কে যুক্ত করে চলছে কারখানার বিভিন্ন গাড়ি। এর গতিপথ যত্রতত্র পরিবর্তনের ফলে জলাবদ্ধতারও সৃষ্টি হচ্ছে। কারখানার সকল তরল বর্জ্য ফেলা হচ্ছে সেখানে। এক্স সিরামিক কারখানার আগ্রাসনের ফলে অস্তিত্ব বিলীনের পথে নদীটি।
এক্স সিরামিক কারখানা কর্তৃপক্ষ লবলং নদীটিকে চারপাশ থেকে ঘিরে ধরার কারণে এটি রক্ষা করা নিয়ে শঙ্কিত পরিবেশ সংগঠনের কর্মীরা।
Advertisement
রিভার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মো. মনির হোসেন বলেন, যে কারখানা আমাদের প্রাণের নদী লবণলংকে গিলে ফেলেছে তাকে দেওয়া হয়েছে সম্মাননা। আমরা শ্রম মন্ত্রণালয়ের ওই অ্যাওয়ার্ড কমিটির বিতর্কিত সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
রিভার অ্যান্ড নেচার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম বলেন, এক্স সিরামিক কারখানা লবলং নদী দূষণ ও দখলকারী। এটা ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছে প্রমাণিত হয়েছে। এই এক্স সিরামিক নামক কারখানার কারণে উজানে শতাধিক বিঘা জমিতে দূষিত পানি জমে প্রায় এক যুগ যাবৎ চাষাবাদতো দূরের কথা, কৃষক জমিতেই নামতে পারে না। দিনদিন ভয়াবহতা বেড়েই চলেছে। যখন শুনলাম কারখানাটি এ বছর গ্রিন অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে, তখন একটু আশ্চর্য হলাম।
গাজীপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আরেফিন বাদল বলেন, যতদূর জানি গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড দিয়েছে শ্রম ও কর্মস্থান মন্ত্রণালয়। এটি আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আসার পরপরই পরিবেশ অধিদপ্তরের একটি প্রতিনিধি দল এক্স সিরামিক কারখানা পরিদর্শন করেছে। তাদের রিপোর্ট অনুযায়ী পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে রিপোর্ট পাঠানো হবে। এক্স সিরামিক কারখানার ছাড়পত্রের আবেদন রয়েছে।
এদিকে খাল দূষণকারী কারখানা এক্স সিরামিককে ‘গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড’ প্রদানের প্রতিবাদ জানিয়েছে ১৫টি পরিবেশবাদী ও সামাজিক সংগঠন। গত ৬ জুলাই পরিবেশবাদীরা এক বিবৃতিতে বলেন, ২০০৯ সালে ৭৫ বিঘা জমিতে গাজীপুর জেলার শ্রীপুর পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বেড়াইদেরচালা গ্রামে গড়ে ওঠা কারখানাটি নির্মাণের শুরুতে ঐতিহ্যবাহী লবলং নদীকে সামান্য ছাড় দিলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেটি গিলে খেতে শুরু করে। বর্তমানে লবলংকে ভরাট করে নালায় পরিণত করা হয়েছে। কারখানা কর্তৃপক্ষের ইচ্ছেমতো গতিপথ পরিবর্তন করেছে। এর কয়েকটি পয়েন্টে তৈরি করা হয়েছে অস্থায়ী ব্রিজ। কারখানার ভেতর লবলংয়ের ওপর কালভার্ট নির্মাণ করে দুই পাড়কে যুক্ত করেছে। গতিপথ যত্রতত্র পরিবর্তন করায় সে অঞ্চলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। কারখানার সব বিষাক্ত তরল বর্জ্য ফেলা হচ্ছে সেখানে। এক্স সিরামিক কারখানার আগ্রাসনের ফলে লবলংয়ের অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার পথে।
Advertisement
বাপা, বেলা, গ্রিন ভয়েস, নদীপক্ষ, উন্নয়ন ধারা ট্রাস্ট, বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ রিভার ট্রাভেলস নেটওয়ার্ক, এএসডিএস, তিস্তা নদী রক্ষা কমিটি, বাদাবন সংঘ, সিডিপি, সেইফটি ম্যানেজমেন্ট ফাউন্ডেশন, সিডাব্লিউএফ, ডাব্লিউ বিবি, পরিবেশ বার্তাসহ ১৫টি পরিবেশবাদী ও সামাজিক সংগঠনসমূহের পক্ষ থেকে এক্স সিরামিকস লিমিটেডকে দেওয়া ‘গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড’ প্রত্যাহারসহ নদীর দখলকৃত জায়গা ফেরত দেওয়া ও তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইন প্রয়োগ করে শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়। একইসঙ্গে ‘গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড’ প্রদানের ক্ষেত্রে নির্বাচন প্রক্রিয়া সঠিক ও স্বচ্ছ করার দাবি ওঠে।
এ বিষয়ে জানতে এক্স সিরামিকস কারখানার মানবসম্পদ কর্মকর্তা শামীম শেখ ও কারখানা কর্তৃপক্ষের যোগাযোগ করা হলে তারা গণমাধ্যমের সঙ্গে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
গাজীপুর জেলা প্রশাসক নাফিসা আরেফীন বলেন, বিষয়টি পরিবেশ অধিদপ্তর দেখছে। কোনো অভিযোগ থাকলে আইন অনুসরণ করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এফএ/এমএস