জাতীয়

২৫ ক্যাডারের সুপারিশ পাশ কাটিয়ে জনপ্রশাসন সংস্কার ফলপ্রসূ হবে না

২৫ ক্যাডারের সুপারিশ পাশ কাটিয়ে জনপ্রশাসন সংস্কার ফলপ্রসূ হবে না

জনপ্রশাসনে ২৫ ক্যাডারের সুপারিশ পাশ কাটিয়ে জনপ্রশাসন সংস্কার ফলপ্রসূ হবে না—‘জনপ্রশাসন সংস্কার: প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’ শীর্ষক এক সেমিনারে এমন মন্তব্য করেছেন বক্তারা।

Advertisement

মঙ্গলবার (৮ জুলাই) রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি)-এর সেমিনার হলে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের উদ্যোগে এ সেমিনারে বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার ব্যক্তিরা জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন বিষয়ে তাদের মতামত তুলে ধরেন।

সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের সমন্বয়ক ড. মুহম্মদ মফিজুর রহমান বলেন, স্বাধীনতার ৫৩ বছরে দেশে ইতোপূর্বে আরও ২৬টি জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন বা কমিটি গঠিত হয়েছিল। অন্য সব কমিশন থেকে এবারের কমিশন ভিন্ন হবে- এমনটি প্রত্যাশা করেছিলাম। আগের কমিশনগুলোর ব্যর্থতার কারণ উল্লেখ করে, সে ভুল পুনরায় না করতে সরকারকে আগেই লিখিত প্রস্তাব দিয়েছিল আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ।

আরও পড়ুন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ঘিরে জনপ্রশাসনে ফের অসন্তোষ একই ক্যাডারে দুইবার সুপারিশ, স্বপ্ন ভেঙেছে অনেকের

‘কিন্তু এবারও অতীতের মতো পক্ষপাতদুষ্ট কমিশন গঠনের মাধ্যমে প্রত্যাশিত জনআকাঙ্ক্ষা পূরণে কাঙ্ক্ষিত সিভিল সার্ভিস গঠনে ব্যর্থ হতে যাচ্ছে দেশ। ‘জনমুখী, জবাবদিহিমূলক, দক্ষ ও নিরপেক্ষ জনপ্রশাসন গড়ে তোলার লক্ষ্যে’ কমিশন গঠিত হলেও তা অতীতের মতো ‘কাগুজে জনমুখী’ হতে যাচ্ছে বলে পরিষদ মনে করে।’

Advertisement

মফিজুর রহমান আরও বলেন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনে ২৫টি ক্যাডারের পক্ষ থেকেই পেশাভিত্তিক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা এবং উপসচিব পদে কোটা বাতিলের প্রস্তাব করা হয়েছিল। সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকেও সিভিল সার্ভিসে পেশাদারত্বকে গুরুত্ব দিতে আহ্বান করা হয়েছে। অথচ, জনদাবিকে উপেক্ষা করে সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে ক্ষমতাধর একটি গোষ্ঠীর নিরঙ্কুশ ক্ষমতা আরও বাড়ানোর প্রয়াস লক্ষ্য করা গেছে। সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট পুরোপুরি বাস্তবায়িত হলে রাষ্ট্র সংস্কারের প্রচেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে এবং প্রশাসনিক ফ্যাসিজম আরও শক্তিশালী হবে।

সিভিল সার্ভিসের কার্যকর সংস্কার ছাড়া অন্য সব সংস্কার অকার্যকর হয়ে যাবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

বক্তারা বলেন, জনপ্রশাসন সংস্কার প্রতিবেদনে উদ্দেশ্যমূলকভাবে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা, পরিসংখ্যান, ডাক, অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস প্রভৃতি ক্যাডার বিষয়ে জটিলতা সৃষ্টি করা হয়েছে। এছাড়া বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ ও জেলা পরিষদকে বিলুপ্তির মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিত্বকে উপেক্ষা করে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের ক্ষমতা বৃদ্ধি, বাস্তবতা বিবর্জিত প্রাদেশিক শাসন ব্যবস্থার প্রস্তাব করা হয়েছে, যা জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠনের অন্তরায়। আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের দাবি বাস্তবায়ন ছাড়া কোনো সংস্কার গ্রহণযোগ্য হবে না বলে মত দেন তারা।

সভায় পরিষদের পক্ষ থেকে করণীয় বিষয়ে পেশাভিত্তিক মন্ত্রণালয় (ক্যাডার যার, মন্ত্রণালয় তার) বাস্তবায়ন, উপসচিব পদে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ, সব ক্যাডারের সমতা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডারসহ সব ক্যাডারকে একই কমিশনের আওতায় রাখা, পরিবার পরিকল্পনা ও পরিসংখ্যান ক্যাডারকে সার্ভিসে অব্যাহত রাখা, সুপিরিয়র এক্সিকিউটিভ সার্ভিসে প্রবেশের পর শুধু প্রশাসন ক্যাডারের জন্য আগের সার্ভিসে ফেরার সুবিধার প্রস্তাব বাতিল, জেলা কমিশনারকে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব প্রদানের প্রস্তাব বাতিল, ‘অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস’র পরিবর্তে ‘ভূমি সার্ভিস’ বা ‘ভূমি ব্যবস্থাপনা সার্ভিস’ নামকরণ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে ‘মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়’ বা ‘সরকারি কর্মচারী ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়’ হিসেবে নামকরণসহ বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরা হয়।

Advertisement

আরও পড়ুন সেই সহকারী কমিশনার তাপসী তাবাসসুম চাকরিচ্যুত সরকারি চাকরিতে ৪ লাখ ৬৮ হাজার পদ খালি

সেমিনারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানি, সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট এম. এ. আজিজ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক আহমেদ ইকবাল চৌধুরী, বিশিষ্ট লেখক ও কলামিস্ট ফিরোজ আহমেদ, অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র জেলা জজ ড. শাহজাহান সাজু, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক ডা. মো. মাহবুবুর রহমান, গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম সদস্যসচিব (শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক) ফয়সাল মাহমুদ শান্ত, ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার খান মঞ্জুর মোরশেদ আলোচনায় অংশ নেন।

আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের সমন্বয়ক ও সেমিনার আয়োজন কমিটির আহ্বায়ক মো. জামিলুর রহমান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ।

আরএমএম/এমকেআর/এএসএম