জাতীয়

অ্যাপে ট্র্যাপ, টাকা গায়েব

অ্যাপে ট্র্যাপ, টাকা গায়েব

চাকরির পাশাপাশি বাড়তি আয়ের আশায় ‘আপওয়ার্ক ফ্রন্টডেস্ক–২০২৩’–এ কাজ শুরু করেছিলেন একজন ব্যাংক কর্মকর্তা। শুরুতে কয়েক হাজার টাকা আয়ও করেন। একপর্যায়ে তাকে আপওয়ার্কের অংশীদার হওয়ার প্রলোভন দেখানো হয়। সেই ফাঁদে পা দিয়ে তিনি এক কোটি টাকা ওই প্ল্যাটফর্মের ‘কথিত’ পরিচালকদের দেওয়া ব্যাংক হিসাবে জমা দেন। পরে অংশীদার হওয়ার কাগজ পেয়ে দেখেন সেটি ভুয়া।

Advertisement

ঋণ করা বিপুল অঙ্কের টাকা খুইয়ে চরম হতাশ হয়ে পড়েন ওই ব্যাংক কর্মকর্তা। মামলা করেন প্রতারকদের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘জীবনে আমি অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি। অনলাইনের কোনো প্ল্যাটফর্মে আগে কখনো কাজ করিনি। পরে হোয়াটসঅ্যাপের একটি বার্তা পেয়ে কাজ শুরু করি। ডিজিটাল প্রতারকদের ফাঁদে পড়ে নিজের সঞ্চিত অর্থ ও ধারদেনা করে আমি এক কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করে প্রতারিত হয়েছি।’

ভুক্তভোগী ব্যাংক কর্মকর্তা জানান, গত বছরের ১১ ডিসেম্বর তার হোয়াটসঅ্যাপে নাজনীন নামে এক নারীর মেসেজ আসে। তাতে লেখা ছিল, অনলাইনে পার্টটাইম জব করা যাবে। প্রতিষ্ঠানের নাম আপওয়ার্ক। তিনি একজন প্রতিনিধি। চাকরির পাশাপাশি বাড়তি আয়ের আশায় তিনি (ব্যাংক কর্মকর্তা) ওই হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজে প্রভাবিত হয়ে আপওয়ার্কের ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করেন। পরে ক্রিপ্টো অ্যাকাউন্টের টাকা উত্তোলনের জন্য আরও বিনিয়োগ করতে বলা হয়। একপর্যায়ে কোম্পানির অংশীদার হওয়ার প্রস্তাব পান। বেশ কয়েকটি ব্যাংক হিসাব দেওয়া হয়। সেই ব্যাংক হিসাবে ১০ দিনের (গত বছরের ১২ ডিসেম্বর থেকে ২২ ডিসেম্বর) ব্যবধানে ১ কোটি ১০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে সবই খোয়ান।

বাংলাদেশিরা লোভে পড়ে বিভিন্ন অ্যাপসে টাকা রাখছে এবং একটা সময় সব টাকা হারাচ্ছেন। ব্যাংকের অ্যাপস ছাড়া অন্য যে কোনো অ্যাপস বাংলাদেশের তফসিলভুক্ত ব্যাংক নয়। ব্যাংকের অ্যাপস ছাড়া অন্য অ্যাপসে টাকা জমা রাখা যায় না।- আইটি বিশেষজ্ঞ তানভীর হাসান জোহা

Advertisement

বেসরকারি চাকরিজীবী নাহিদুল ইসলামও (ছদ্মনাম) অনলাইন অ্যাপে বিনিয়োগ করে প্রতারিত হন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘এক নারী আমাকে টেলিগ্রামে মেসেজ দিয়ে অনলাইনে কাজের অফার দেন। তারপর একটি টেলিগ্রাম গ্রুপে যুক্ত করেন। যেখানে ৬০ জন মেম্বার ছিল। গ্রুপে থাকা নারী, পুরুষ সবাই টাকা দিয়ে লাভ পাচ্ছেন- এমন স্ক্রিনশট দেন। পরে ওই নারীও আমাকে ‘পলারস্টেপ’ নামে একটি অ্যাপসে কাজ করতে বলেন। আমি ৪১০ টাকা ইনভেস্ট করলে তারা ৮২০ টাকা দেন। পরে লোভে পড়ে তাদের দেখানো অফারে দুই লাখ টাকা দেই। তখন আর লাভ দেয়নি।’

নাহিদুল ইসলাম আরও বলেন, কল দিলে তারা বলে, এমন হওয়ার কথা না, আপনি তো ভাগ্যবান, তাই এমন হয়েছে। আপনি আরও ২ লাখ ৪৩ হাজার টাকা দিলে দ্বিগুণ টাকা ওঠাতে পারবেন। তাদের কথায় ফের সেই টাকা দেই। কিন্তু কোনো লাভ না পেয়ে ফের যোগাযোগ করি। আপনার ভাগ্য অনেক ভালো তাই অ্যাকাউন্ট লক হয়েছে বলে তারা জানায়। এখন ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা দিলে লক খুলে যাবে এবং একসঙ্গে ১২ লাখ টাকা তুলতে পারবেন। আমার কাছে এত টাকা না থাকায় পরিচিত লোকজনের সঙ্গে আলোচনা করে বুঝতে পারি, আমি প্রতারণার শিকার হয়েছি। পরবর্তীসময়ে মামলা করি।’

সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ২২ ডিসেম্বর প্রতারণার অভিযোগে চীনা নাগরিকসহ দুই বাংলাদেশিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশের হিসাবে এমন ভুক্তভোগীর সংখ্যা অনেক। তবে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ দিতে চান না। এজন্য পুলিশ অধিকাংশ ক্ষেত্রে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারে না।

চক্রগুলো সাধারণত প্রথমে অল্প টাকা দিয়ে মানুষের মনে বিশ্বাস স্থাপন করে। পরে বড় অঙ্কের টাকা পাঠালে সুদসহ আরও বেশি টাকা ফেরত দেবে, এমন প্রলোভন দেখিয়ে মূলত ওই অর্থটা হাতিয়ে নেয়। এরপর তারা নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। তাদের সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ করতে পারেন না ভুক্তভোগীরা।- সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান

Advertisement

সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারের কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে অসংখ্য সরকারি চাকরিজীবী লোভে পড়ে তার জমানো টাকা বিভিন্ন অ্যাপসে জমা করছে। অল্প কিছু টাকা জমার পর তা দ্বিগুণ উত্তোলন করে। এরপর যখন মোটা অঙ্কের টাকা জমা দিচ্ছে তখন সেই টাকা আর উত্তোলন করতে পারছে না।

আরও পড়ুনপ্রতারণার ডিজিটাল হাতিয়ার বিটকয়েন, বাংলাদেশে ভবিষ্যৎ কী?মারণাস্ত্র না থাকলে ‘পুলিশের নিরাপত্তা’ দেবে কে?মোবাইল নম্বর ক্লোন করে প্রতারণা, হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি টাকাঈদ সামনে রেখে বেপরোয়া ‘ডিজিটাল প্রতারণা’

সাইবার পুলিশ জানায়, প্রতারকরা দুই ধরনের মানুষকে টার্গেট করে। এক. যে নারীদের সন্তান স্কুলে যায় এবং যাদের অনেক সময় আছে, অর্থাৎ যে নারীরা গৃহিণী। এমন নারীদের বয়স ৩৫ থেকে ৪৫ এর মধ্যে। এমন নারীরা বেশিরভাগ শিক্ষিত এবং তারা ফ্রিল্যান্সিং করতে চান। এই নারীদের টার্গেট করে প্রতারকরা লিংক সাবস্ক্রাইবের কাজ দেয়। দিনে পাঁচটি সাবস্ক্রাইব করলে ৫০০ টাকা বিকাশ করা হয়। ভুক্তভোগী নারী দেখেন কাজ করলেই টাকা। এমন প্রলোভনে পড়ে নারীরা ধীরে ধীরে মোটা অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করে টাকা খোয়ান।

বিভিন্ন বয়সী অন্তত ২৫ জনের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলে জাগো নিউজ। তারা প্রত্যেকেই জানিয়েছেন, প্রায় প্রতিদিনই মোবাইল, হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রামে এ ধরনের বিভিন্ন মেসেজ পান তারা। চারজন জানিয়েছেন, শুধু মেসেজ নয়, তাদের ফোন করেও এ ধরনের ‘ফ্রিল্যান্সিং’ কাজের অফার দেওয়া হয়েছে।

অনলাইনে বিনিয়োগের নামে লোপাট শত কোটি টাকা

অবৈধভাবে বিনিয়োগ ওয়েবসাইট পরিচালনা ও প্রতারণার অভিযোগে গত বছর তিনজনকে গ্রেফতার করেছিল সিআইডি। সিআইডি জানায়, এ চক্রটি cry-ptobdf.cc নামে একটি ওয়েবসাইটে বিনিয়োগের মাধ্যমে আয়ের ফাঁদে ফেলে অন্তত ১০০ কোটি টাকা হাতিয়েছে।

চক্রটি এক ভুক্তভোগীকে ফোন করে অনলাইনে কাজের অফার দেয়। এরপর হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে ইউটিউবে সাবসক্রিপশন করতে বলে। এতে ১০০ টাকা করে দিয়ে উৎসাহিত করা হয় তাকে। এরপর তাদের টেলিগ্রাম গ্রুপে যুক্ত করে নেয়, যেখানে আরও ভুক্তভোগী যুক্ত ছিল। তখন ওয়েবসাইটে (www.cry-ptobdf.cc) রেজিস্ট্রেশন করিয়ে নেওয়া হয়। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা নিয়ে ভুক্তভোগীর ওই ওয়েবসাইটের অ্যাকাউন্টে জমা দেখানো হতো।

এক্ষেত্রে গণসচেতনতা সবচেয়ে বেশি জরুরি। ফরমালি কোনো অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেবো। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি আমাদের কাছে অ্যাপসগুলোর তালিকা দেয় তবে বিটিআরসির পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।- বিটিআরসি মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম মনিরুজ্জামান

৫ হাজার টাকা বিনিয়োগ করলে ৭ হাজার টাকা, ১০ হাজার দিলে ১৪ হাজার টাকা পাওয়া যাবে—এমন লোভনীয় প্রস্তাব দেওয়া হতো। ভুক্তভোগী যখন তাদের লোভনীয় ফাঁদে পা দিয়ে বড় অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করতো, তখনই প্রতারক চক্র টাকা আটকে দিতো।

এনজিও থেকে ঋণ করেও টাকা জমা দেন অ্যাপে

রাতারাতি ধনী হওয়ার প্রলোভনে টাইলস মিস্ত্রি সবুজ আলী এক লাখ ৬০ হাজার টাকা খাটিয়েছিলেন ‘আলটিমা’ নামে এক অ্যাপে। প্রথম মাসে ৫ শতাংশ হারে লভ্যাংশ পান আট হাজার টাকা, কিন্তু এরপর আর কিছু মেলেনি। অ্যাপে বিনিয়োগের আগে সবুজের সঞ্চয় ছিল ৪০ হাজার টাকা, বাকি টাকা মায়ের নামে ঋণ করেন এনজিও থেকে।

স্ক্যাম দেখে ফোন কেটে দেন তামিম

একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তানজীব সারোয়ার তামিম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি একটি অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন পেয়েছিলাম। ওপাশ থেকে আমার সঙ্গে ইংরেজিতে কথা বলা হচ্ছিল। নারীকণ্ঠের একজন আমাকে বলেন, তিনি একটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানের এইচআর বিভাগে কাজ করেন। আমাকে তারা ফ্রিল্যান্সার হিসেবে নিয়োগ দিতে চান। তার কথা শুনে আমি বুঝতে পারছিলাম যে উনি বাংলাদেশি কেউ, কারণ তার ইংরেজি উচ্চারণ বিদেশিদের মতো নয়। আমি বুঝতে পারি এটা স্ক্যাম। ফোন কেটে দিই।

২৭ লাখ টাকা খোয়ান এক নারী

একটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তার স্ত্রীর ২৭ লাখ টাকা খুইয়েছেন ইনভেস্টমেন্ট অ্যাপসে টাকা বিনিয়োগ করে। তাসনিম লিমা (ছদ্মনাম) জানান, অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজের জন্য হোয়াটসঅ্যাপে একটি লিংক পাই। সেখানে ক্লিক করে দেখি ১০০ টাকা জমা দিলে দেড়শ টাকা পাওয়া যাবে একটি ফরম পূরণ করেই। একপর্যায়ে বলা হয়, ভিআইপি অ্যাকাউন্ট থেকে ৩০ লাখ টাকা ইনভেস্ট করলে দ্বিগুণ টাকা পাওয়া যাবে। এই লোভে আমি ধারদেনা করে ২৭ লাখ টাকা ইনভেস্ট করি। এরপর ওই অ্যাপসের সব কার্যক্রম ও হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে আমাকে ব্লক করে দেওয়া হয়।

সিআইডির কর্মকর্তারা জানান, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবীরা বেশি ভুক্তভোগী। তাদের জমানো টাকা এসব ভুয়া ইনভেস্টমেন্ট অ্যাপসে বিনিয়োগ করে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। ফাঁদে পা দিচ্ছেন তরুণরাও। এছাড়া শিক্ষিত গৃহিণী যারা আছেন তাদের টার্গেট করে ফ্রিল্যান্সিংয়ের নামে এসব অ্যাপসে বিনিয়োগ করতে বলা হচ্ছে।

‘ব্যাংকের অ্যাপস ছাড়া অন্য অ্যাপসে টাকা রাখা যায় না’

আইটি বিশেষজ্ঞ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর (সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল) তানভীর হাসান জোহা জাগো নিউজকে বলেন, ‘বাংলাদেশিরা লোভে পড়ে বিভিন্ন অ্যাপসে টাকা রাখছে এবং একটা সময় সব টাকা হারাচ্ছেন। ব্যাংকের অ্যাপস ছাড়া অন্য যে কোনো অ্যাপস বাংলাদেশের তফসিলভুক্ত ব্যাংক নয়। ব্যাংকের অ্যাপস ছাড়া অন্য অ্যাপসে টাকা জমা রাখা যায় না। যারা এসব অ্যাপসে টাকা রাখছে তাদের প্রথমে দেখা যাচ্ছে এক লাখ টাকা জমা রাখলে ২০ হাজার টাকা লাভ দিচ্ছে। কিন্তু যখন একজন মানুষ লোভে পড়ে ১০ লাখ কিংবা তারও বেশি জমা রাখছে তখনই প্রতারণার শিকার হচ্ছেন।’

তিনি বলেন, ‘ইদানীং গ্রামগঞ্জে দেখা যাচ্ছে অনলাইনে লাভের আশায় জুয়া খেলে ভিটে-বাড়ি বিক্রি করে দিচ্ছেন। এসব অ্যাপস চায়না ও নাইজেরিয়া থেকে কন্ট্রোল করা হয়। অনেক সময় বাংলাদেশ পুলিশ তাদের গ্রেফতারও করে। কিন্তু জামিন পেয়ে তারা অন্য দেশে গিয়ে এসব প্রতারণা করে। জামিন হওয়ার কারণ হলো পুলিশের দুর্বল তদন্ত। তদন্ত যদি ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ জমা দেয় তাহলে জামিনের বদলে শাস্তি নিশ্চিত হয়। কিন্তু ৭২ মাসও গড়ায় এসব তদন্ত। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলে এসব প্রতারণা কমে যাবে।’

সচেতনতার বিষয়ে এ আইটি বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ওটিপি নিয়ে একটা সময় অনেক প্রতারণা হয়েছে, প্রচারণার জন্য ওটিপি নিয়ে এখন আর হ্যাক হয় না। এজন্য এসব অ্যাপসে প্রতারণা থেকে রক্ষা পেতে প্রচারণা বাড়াতে হবে।’

যা বলছে সিআইডি

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জাগো নিউজকে বলেন, ‘এ ধরনের মেসেজ ফোন অথবা হোয়াটসঅ্যাপে আসে। অনেক সময় বিদেশি নম্বর থেকে আসে। আমরা এখন পর্যন্ত তদন্তে জেনেছি, মূলত দেশের বাইরে ও দেশের কয়েকটি স্ক্যামার চক্র এর সঙ্গে জড়িত। বিদেশি নাগরিক জড়িত থাকলেও বাংলাদেশি লোকজনকে ব্যবহার করা হয় ভাষার জন্য। এটা একটি সংঘবদ্ধ চক্র। তারা বিভিন্ন মাধ্যমে টাকাটা বিদেশে নেয়। এর একটি বড় মাধ্যম হলো ক্রিপ্টোকারেন্সি। এমন প্রতারণায় অনেকে ১০ লাখ, ২০ লাখ, ৫০ লাখ আবার কোটি টাকাও হারিয়েছে। এমন অভিযোগ আমরা পাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘চক্রগুলো সাধারণত প্রথমে অল্প টাকা দিয়ে মানুষের মনে বিশ্বাস স্থাপন করে। পরে বড় অঙ্কের টাকা পাঠালে সুদসহ আরও বেশি টাকা ফেরত দেবে, এমন প্রলোভন দেখিয়ে মূলত ওই অর্থটা হাতিয়ে নেয়। এরপর তারা নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। তাদের সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ করতে পারেন না ভুক্তভোগীরা।’

এসব প্রতারকদের ধরতে সিআইডি নিয়মিত কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘জনসচেতনতার অভাবে এমন হচ্ছে। জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। শিশু থেকে শুরু করে বয়স্ক সবার জন্য অনলাইন সচেতনা বাড়ালে এমন প্রতারণা ঠেকানো সম্ভব।’

সিআইডি সাইবার পুলিশ সেন্টারের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. জাহিদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘বর্তমানে ইনভেস্টমেন্ট অ্যাপস ব্যবহার করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার প্রতারণা বেড়েছে। হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রাম গ্রুপ খুলে বাংলাদেশের সিম ব্যবহার করে লিংক করা হচ্ছে। যেখানে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে ৫০০ টাকা জমা দেওয়ার কিছুক্ষণ পর ৮০০ টাকা দেখায়। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় অনেক ক্ষেত্রে চতুর্থবারেও গ্রাহক টাকা তুলতে পারছেন। কিন্তু তিনি বুঝতে পারেন না কীভাবে তার টাকা বেড়ে যাচ্ছে। এরপর যখন গ্রাহকের এক লাখ, পাঁচ লাখ কিংবা ১০ লাখ টাকা জমা হয় তখন প্রতারকরা গ্রাহকের অনলাইন অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে দেয়। এরপর ভুক্তভোগী আর টাকা তুলতে পারে না, যোগাযোগও করতে পারেন না।’

তিনি বলেন, ‘ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, ব্রাক ব্যাংক ও সিটি ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার অ্যাকাউন্ট বেশি পাওয়া যায়। এসব ব্যাংক থেকে কিছুদিন পর টাকা বিদেশি কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অথবা মোবাইল ব্যাংকিং নম্বরেও নেয় প্রতারকরা। প্রতারণার টাকা বাংলাদেশ থেকে হুন্ডির মাধ্যমে ভারত, চায়না ও কোরিয়া- এই তিন দেশে বেশি পাচার হচ্ছে। এক্ষেত্রে সবার সচেতনতা তৈরি করতে হবে।

তালিকা পেলে ব্যবস্থা নেবে বিটিআরসি

অ্যাপস বন্ধের বিষয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম মনিরুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, ‘এক্ষেত্রে গণসচেতনতা সবচেয়ে বেশি জরুরি। ফরমালি কোনো অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেবো। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি আমাদের কাছে অ্যাপসগুলোর তালিকা দেয় তবে বিটিআরসির পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

টিটি/এএসএ/ এমএফএ/জেআইএম