মাত্র ৩৩৪ বল খেলে ৩৬৭ রান। উইয়ান মুলডার আউট হননি। সুযোগ ছিল ব্রায়ান লারার ৪০০ রানের রেকর্ডটা ভেঙে দেওয়ার। আর মাত্র ৩৩ রান দুরে ছিলেন তিনি। এই ৩৩ রান নিতে কত বল লাগতো? বড় জোর ৩০ বল!
Advertisement
লাঞ্চ বিরতির পর সব মিলিয়ে আর ১০ ওভার খেলতে পারলে, যার মধ্যে অন্তত ৩০ বল মোকাবেলা করতেন মুলডার! তাতেই সৃষ্টি হয়ে যেতো নতুন ইতিহাস। ব্রায়ান লারার পর দ্বিতীয় ব্যাটার হিসেবে পৌঁছে যেতেন টেস্টে গৌরবময় ৪০০ রানের মাইলফলকে; কিন্তু তা পারলেন না। মুলডার আসলে করলেন না। নিজেই ইনিংস ঘোষণা করে দিলেন।
তবে, ৩৬৭ রান করলেও রেকর্ড বইয়ে অজানা অনেক অধ্যায় যোগ করেছেন উইয়ান মুলডার। যেগুলো জানাতেই জাগোনিউজের পাঠকদের জন্য সাজানো হয়েছে এই আয়োজন।
ব্র্যাডম্যানের পর টেস্টের প্রথম দিন সর্বোচ্চ
Advertisement
টেস্টের একদিনের তিন সেশনে তিনটি সেঞ্চুরি, অর্থ্যাৎ একই দিনে ট্রিপল সেঞ্চুরি করার রেকর্ড শুধুমাত্র একজনের। তিনি স্যার ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যান। অস্ট্রেলিয়ান এই কিংবদন্তি ১৯৩০ সালে লিডসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টের প্রথম দিনেই ট্রিপল সেঞ্চুরি করেছিলেন। তার ৯৫ বছর পর টেস্টের প্রথম দিন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৬৪ রান করেন উইয়ান মুলডার।
অর্থ্যাৎ ডন ব্র্যাডম্যানে পর টেস্টের প্রথম দিন মুলডার হলেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী ব্যাটার। যদিও টেস্টের একই দিনে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহের দিক থেকে মুলডার রয়েছেন ৬ নম্বরে। তিনি এবং ব্র্যাডম্যানছাড়া অন্যরা সর্বোচ্চ রান সংগ্রহ করেছিল টেস্টের অন্যদিন। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে একদিনে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড এখন মুলডারেরই।
দ্বিতীয় দ্রুততম ট্রিপল সেঞ্চুরি
ব্র্যাডম্যানের মত একই দিনে না পারলেও, ট্রিপল সেঞ্চুরি ঠিকই করেছেন উইয়ান মুলডার। দ্বিতীয় দিন দ্রুত রান তুলে তিনি ট্রিপল সেঞ্চুরির মাইলফলকে পৌঁছান ২৯৭ বলে। টেস্টে এটা দ্বিতীয় দ্রুততম ট্রিপল সেঞ্চুরির রেকর্ড। এর আগে ২০০৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেই চেন্নাই টেস্টে ২৭৮ বলে দ্রুততম ট্রিপল সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েছিলেন ভারতের বিরেন্দর শেবাগ।
Advertisement
উইয়ান মুলডার পেছনে ফেলেছেন ইংল্যান্ডের হ্যারি ব্রুক (৩১০ বল), অস্ট্রেলিয়ার ম্যাথ্যু হেইডেন (৩৬২ বল) ও বিরেন্দর শেবাগকেই (৩৬৪ বল)।
শেষ পর্যন্ত উইয়ান মুলডার ৩৬৭ রানে থাকতেই ইনিংস ঘোষণা করে দেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। মুলডার নিজেই অবশ্য অধিনায়ক। ব্রায়ান লারার ৪০০ রানের রেকর্ড ভাঙার সুযোগ পেয়েও তিনি সেটা গ্রহণ করলেন না।
একটি ক্ষেত্রে অন্যদের চেয়ে দ্রুততম উইয়ান মুলডার। ট্রিপল সেঞ্চুরি করার পর ৩৫০ রানের মাইলফলকে পৌঁছাতে তিনি খেলেন আর মাত্র ২৭টি বল। অর্থ্যাৎ, ৩৫০ রান করেন ৩২৪ বলে। যা টেস্ট ক্রিকেটে দ্রুততম ৩৫০ রানের স্কোরের রেকর্ড। মুলডারের আগে দ্রুত ৩৫০ রান করার রেকর্ড ছিল ম্যাথ্যু হেইডেনের, ৪০২ বলে।
যেখানে প্রথম মুলডার
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ট্রিপল সেঞ্চুরির রেকর্ড রয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার ম্যাথ্যু হেইডেন যে ৩৮০ রান করেছিলেন, সেটা জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই। অস্ট্রেলিয়ার ওয়াকা গ্রাউন্ডে, ২০০৩ সালে। তবে জিম্বাবুয়ের মাটিতে মুলডারের আগে কেউ ট্রিপল সেঞ্চুরি করতে পারেনি। দেশটিতে সর্বোচ্চ রানের স্কোর ছিল শ্রীলঙ্কার কুমারা সাঙ্গাকারার। ২০০৪ সালে বুলাওয়েতে ২৭০ রান করেছিলেন সাঙ্গাকারা।
শুধু তাই নয়, জিম্বাবুয়ের মাটিতে মুলডারের এই ইনিংস প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটেও সর্বোচ্চ। এর আগে জিম্বাবুয়ের মাটিতে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে জিম্বাবুয়ে ‘এ’ দলের বিপক্ষে সর্বোচ্চ ৩০৬ রান করেছিলেন নিউজিল্যান্ড ‘এ’ দলের হয়ে মার্ক রিচার্ডসন।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মুলডারের ৩৬৭ রান অবশ্য দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। তার আগে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৩৮০ রান করেছিলেন ম্যাথ্যু হেইডেন, ২০০৩ সালে।
আরও একটি ক্ষেত্রে এগিয়ে মুলডার। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে টেস্টে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রান এখন তার। এর আগে প্রোটিয়াদের হয়ে সর্বোচ্চ ৩১১ রান করেছিলেন হাশিম আমলা। ২০১২ সালে ওভালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এই ইনিংস খেলেন তিনি। তবে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে মুলডারের ইনিংসটা দ্বিতীয় স্থানে। দক্ষিণ আফ্রিকা ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে লায়ন্সের হয়ে ২০০৯-১০ মৌসুমে ৩৯০ রান করেছিলেন স্টিফেন কুক।
ব্র্যাডম্যানের মত প্রথম দিন ট্রিপল সেঞ্চুরি করতে না পারলেও একটি রেকর্ডে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন মুলডার। অধিনায়ক হিসেবে অভিষেকেই প্রথম দিন সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলেছেন তিনি। অধিনায়ক হিসেবে একদিনে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড ছিল নিউজিল্যান্ডের গ্রাহাম ডওলিংয়ের। ১৯৬৮ সালে তিনি খেলেছিলেন সর্বোচ্চ ২৩৯ রানের ইনিংস। ৫৭ বছর পর তাকে পেছনে ফেললেন মুলডার।
বাউন্ডারিতে দ্বিতীয়
৩৬৭ রান করার পথে উইয়ান মুলডার মোট বাউন্ডারি মারেন ৫৩টি। এর মধ্যে ৪৯টি হলো চার এবং ৪টি হলো ছক্কা। টেস্ট ক্রিকেটে এক ইনিংসে এটা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বাউন্ডার মারার ঘটনা। এর আগে ১৯৬৫ সালে ইংল্যান্ডের ব্যাটার জন এডরিখ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সর্বোচ্চ ৫৭টি বাউন্ডারি মারেন। যার মধ্যে ৫২টি চার ও ৫টি ছক্কা ছিল। ৩১০ রানে অপরাজিত ছিলেন এডরিখ। শুধু চার মারার ক্ষেত্রে দ্বিতীয় স্থানে মুলডার, ৪৯টি। ৫২টি চার মারেন জন এডরিখ।
পঞ্চম ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের ইনিংস
উইয়ান মুলডারের সামনে সুযোগ ছিল টেস্ট ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ব্যাক্তিগত রানের ইনিংস ব্রায়ান লারার ৪০০ রানের রেকর্ড ভাঙার; কিন্তু মুলডার সে সুযোগটা নিজেই নিলেন না। ইনিংস ঘোষণা করে দিলেন ৫ উইকেটে ৬২৬ রানে। তিনি নিজে ৩৬৭ রানে থাকলেন অপরাজিত।
টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে মুলডারের এই ইনিংস পঞ্চম ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। ২০০৪ সালে ব্রায়ান লারা সর্বোচ্চ ৪০০ রান করেছিলেন। তার এক বছর আগে, ২০০৩ সালে ৩৮০ রান করেছিলেন ম্যাথ্যু হেইডেন।
১৯৯৪ সালে ব্রায়ান লারা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেছিলেন ৩৭৫ রানের ইনিংস। এছাড়া মাহেলা জয়াবর্ধনে ২০০৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে কলম্বোয় খেলেছিলেন ৩৭৪ রানের ইনিংস। এরপর অবস্থান মুলডারের ইনিংসের।
উইয়ান মুলডারকে নিয়ে টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে এ নিয়ে মোট ২৯জন ব্যাটার ট্রিপল সেঞ্চুরি করলো। আর তিনি হলেন দ্বিতীয় দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটার, যিনি এই মাইলফলকে পৌঁছান।
আইএইচএস/