দেশজুড়ে

লাভ বেশি হবে না, তাই সড়ক সংস্কারে নিম্নমানের সামগ্রী!

লাভ বেশি হবে না, তাই সড়ক সংস্কারে নিম্নমানের সামগ্রী!

সড়ক পাকা হবে। গ্রামের মানুষ ভোগান্তি ছাড়াই এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় যাবেন। বছরের পর বছর এমন প্রত্যাশার পর অবশেষে শুরু হয়েছে রাস্তা পাকা করার কাজ। তবে জনগণ তাতে খুশি হতে পারছেন না। কারণ, বহুল প্রত্যাশিত এই কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে নিম্নমানের সামগ্রী। হাত দিলেই ভেঙে যাচ্ছে ইটের খোয়া।

Advertisement

ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ঝিলকি গ্রামে এক কিলোমিটার সড়ক পাকাকরণের কাজের চিত্র এটি। সড়কটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি)।

স্থানীয়রা জানান, গত বছরের আগস্টে কার্যাদেশ পেয়ে সড়ক পাকাকরণ কাজ শুরু করেন ঠিকাদার। ত্রিশালের ঝিলকি প্রাইমারি স্কুল মোড় থেকে আহমেদাবাদ বাজার পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার সড়কের পাকাকরণ কাজ চলছে। সড়কে মাটি ফেলার পর বর্তমানে ইট- সুরকি ফেলে মেকাডমের কাজ করছেন নির্মাণ শ্রমিকরা। সড়কে ব্যবহার করা ইট-সুরকিসহ অন্যান্য নির্মাণসামগ্রী খুবই নিম্নমানের। পা দিয়ে কিংবা হাত দিয়ে জোরে চাপ দিলেই ইট ভেঙে গুঁড়া হয়ে যাচ্ছে। এলাকাবাসী এ বিষয়ে বাঁধা দিলেও ঠিকাদার তা মানছেন না। নিম্নমানের সামগ্রী দিয়েই দেদারসে কাজ করা হচ্ছে।

‘আমরা জেনেশুনেই নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করছি। কারণ, ভালো সামগ্রী ব্যবহার করলে বেশি লাভ করা সম্ভব না। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বাধা দিলে ম্যানেজ করা হবে।’

Advertisement

ঝিলকি গ্রামের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আশপাশে বেশ কয়েকটি হাট-বাজারসহ স্কুল-মাদরাসা রয়েছে। সড়কটি ভালোভাবে নির্মাণ করলে সব মানুষের সুবিধা হতো। কিন্তু ময়লা ও ঘাসের ওপরেই নিম্নমানের ইট-সুরকি ফেলে মেকাডমের কাজ করা হচ্ছে। বাঁধা দিলেও ঠিকাদারের লোকজন গায়ের জোরে কাজ চালিয়ে নিচ্ছেন। এই নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে সড়কের কাজ করলে ছয় মাসও টিকবে না।’

আরও পড়ুন ক্ষেতে সার-কীটনাশকে হুমকিতে জনস্বাস্থ্য বেনজীরের সেই আলিশান বাড়ির বাসিন্দা এখন কেয়ারটেকার আর দুই কুকুর স্থাপনায় এখনো শেখ পরিবারের নাম, বসানো হয়নি নতুন ফলক

একই গ্রামের কৃষক আবদুল মোতালেব জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের গ্রামে ধানসহ প্রচুর শাকসবজি উৎপাদন হয়। কৃষকরা এসব ফসল বাজারে নিয়ে বিক্রি করেন। সড়কটি পাকা হলে কৃষকরা সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবেন। কিন্তু সড়কটি বেশিদিন টেকসই হবে বলে মনে হয় না। নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে।’

স্থানীয় এলজিইডি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সড়কটি পাকাকরণের জন্য বরাদ্দ এক কোটি ৩৩ লাখ ৪৭ হাজার টাকা। মেসার্স শায়ান কনস্ট্রাকশন নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি করছে।

‘সড়কে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জেনে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারপরও কাজ চলমান রাখলে অথবা শিডিউল অনুযায়ী সড়কে কাজ না করলে বিল তুলতে দেওয়া হবে না।’

Advertisement

সড়কে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে কাজ করার কারণ জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি জোবায়ের হোসেন জনি বলেন, ‘আমরা জেনেশুনেই নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করছি। কারণ, ভালো সামগ্রী ব্যবহার করলে বেশি লাভ করা সম্ভব না। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বাধা দিলে ম্যানেজ করা হবে।’

এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ময়মনসিংহের নির্বাহী প্রকৌশলী সালমান রহমান রাসেল জাগো নিউজকে বলেন, ‘সড়কে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জেনে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারপরও কাজ চলমান রাখলে অথবা শিডিউল অনুযায়ী সড়কে কাজ না করলে বিল তুলতে দেওয়া হবে না।’

এসআর/জিকেএস