জাতীয়

আগের মতো দর্শনার্থী আসে না হাতিরঝিলে

আগের মতো দর্শনার্থী আসে না হাতিরঝিলে

একটা সময় রাজধানীর বাসিন্দাদের কাছে অন্যতম আকর্ষণীয় বিনোদনকেন্দ্র ছিল হাতিরঝিল। সময়ের বিবর্তনে হাতিরঝিলের সেই আকর্ষণে যেন ভাটা পড়েছে। এখনো ছুটির দিনগুলোতে রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিনোদনপ্রেমীরা হাতিরঝিলে ছুটে এলেও আগের মতো দর্শনার্থীতে আর টাইটুম্বর দেখা যায় না।

Advertisement

হাতিরঝিলের আশপাশের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েক বছর আগে যে কোনো ছুটির দিন পুরো হাতিরঝিল দর্শনার্থীতে পরিপূর্ণ থাকতো। মানুষের ভিড় এতটাই হতো যে ঠিকমতো হাঁটা যেতো না। পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব কিংবা একা কেউ একটু মুক্তবাতাস নিতে কিংবা সময় কাটাতে ভিড় করতেন এই জায়গাটিতে। হাতিরঝিলের ভেতরের রাস্তা ও ব্রিজগুলো লোকারণ্য থাকতো। কিন্তু মহামারি করোনার পর থেকে হাতিরঝিলে মানুষের আনাগোনা কমেছে।

রোববার (৬ জুলাই) বিকেলে হাতিরঝিল ঘুরে দেখা যায়, নানান শ্রেণি-পেশার ও নানান বয়সী নারী-পুরুষ ঘুরতে এসেছেন। তবে হাতিরঝিলের বেশিরভাগ স্থানেই মানুষের আনাগোনা কম দেখা যায়। কয়েকটি স্থানে কিছু মানুষের জটলা দেখা যায়।

হাতিরঝিলে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা কলাবাগানের বাসিন্দা মো. আরাফাত বলেন, পরিবার নিয়ে আমি প্রায়ই ঘুরতে বের হই। ঢাকার সবগুলো বিনোদনকেন্দ্রই আমরা ঘুরে দেখেছি। হাতিরঝিলে অন্যরকম আনন্দ লাগে। খোলামেলা পরিবেশ, প্রাণ খুলে মুক্তবাতাস নেওয়া যায়। তাই মাঝে মধ্যেই এখানে আসি।

Advertisement

তিনি বলেন, আগে শুক্রবার বা যে কোনো ছুটির দিন হাতিরঝিল আসতাম, দেখতাম লোকারণ্য, কিন্তু এখন সেই দৃশ্য আর দেখা যায় না। গত ঈদের ছুটিতেও এখানে এসেছিলাম, কিন্তু মানুষের তেমন ভিড় দেখিনি। আজও ভিড় তেমন নেই।

তিনি আরও বলেন, হাতিরঝিলের ভেতরে খাবারের তেমন ব্যবস্থা নেই। তাছাড়া শুরুর দিকে হাতিরঝিল যেমন ছিল, এখনো তেমনই আছে। দর্শনার্থীদের কাছে আকর্ষণীয় করতে হাতিরঝিলের ভেতরে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। এ কারণেও দর্শনার্থী কম হতে পারে।

রামপুরা থেকে হাতিরঝিলে আসা পারিসা আক্তার বলেন, আমি এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে মামার বাড়িতে বেড়াতে এসেছি। করোনার আগে একবার হাতিরঝিলে এসেছিলাম, সে সময় এখানে অনেক মানুষ দেখেছিলাম। আজ মানুষের তেমন ভিড় দেখছি না। আর সাত বছর আগে হাতিরঝিল যেমন দেখেছিলাম, এখন তেমনই মনে হচ্ছে। শুধু ব্রিজগুলো, আর রাস্তা পুরাতন হয়েছে মনে হচ্ছে।

আরও পড়ুন হাতিরঝিলে নারী সাংবাদিকের মৃত্যু: আত্মহত্যা নাকি হত্যা? ৫ বছরেও শেষ হয়নি হাতিরঝিল আদলে লেক বাস্তবায়ন প্রকল্প

হাতিরঝিলের পাশে একটি বাড়িতে ১০ বছর ধরে ভাড়া থাকেন মো. মামুন হোসেন। তিনি বলেন, প্রথমদিকে হাতিরঝিলে মানুষের খুব ভিড় ছিল। শুক্র-শনিবার তো মানুষের ভিড়ে হাতিরঝিলের ভেতরে হাঁটা যেতো না। কিন্তু করোনার পর থেকে হাতিরঝিলে দর্শনার্থী কমতে দেখছি। এখন শুক্র-শনিবার বা বিশেষ ছুটির দিনে মানুষের তেমন ভিড় হয় না হাতিরঝিলে।

Advertisement

হাতিরঝিলের পাশের আরেক বাসিন্দা মো. মনির হোসেন বলেন, হাতিরঝিলের সৌন্দর্য আগের চেয়ে কমেছে। আগে পুরো হাতিরঝিল লাইটিং করা ছিল। সন্ধ্যার পর লাইট জ্বলে উঠলে হাতিরঝিলের সৌন্দর্য অনেক বেড়ে যেতো। এখন তো কোথাও লাইট জ্বলে না। আগের মতো লাইটিংও করা নেই। তাছাড়া হাতিরঝিলের মধ্যে ভবঘুরে, ছিনতাইকারীও ঘোরাঘুরি করে। অনেকেই হয়তো সন্ধ্যার পর হাতিরঝিল নিরাপদ মনে করেন না। এ কারণে হাতিরঝিলে মানুষ এখন কম আসে।

তিনি বলেন, ঢাকার মানুষের জন্য খোলামেলা বিনোদনকেন্দ্রের সংখ্যা খুব কম। যে কয়টি খোলামেলা বিনোদনকেন্দ্র আছে, তার মধ্যে হাতিরঝিল অন্যতম। এটা শুধু সৌন্দর্য উপভোগের জায়গা নয়, এটি যান্ত্রিক ঢাকা শহরের ফুসফুসও বলা চলে। আগে আমি প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা হাতিরঝিলে আসতাম। এখন আর সকাল-সন্ধ্যা আসা হয় না, মাঝে মধ্যে হাঁটতে আসি।

তিনি আরও বলেন, হাতিরঝিলে আগের মতো দর্শনার্থী বাড়াতে কিছু উদ্যোগ নিতে হবে। হাতিরঝিলের ভেতরে কিছু সৌন্দর্যবন্ধনের কাজ করতে হবে। আগের মতো পুরো হাতিরঝিলে রং-বেরঙের লাইটিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। মানুষ যাতে নিরাপদে চলাচল করতে পারে, সে জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। একাধিক স্থানে পানির ফোয়ারাসহ হাতিরঝিলের ভেতরে নতুনত্ব আনতে হবে।

এমএএস/বিএ/জিকেএস