টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে মাদকবিরোধী অভিযানের নামে বাড়ি থেকে সাড়ে ৮ লাখ টাকা লুটের অভিযোগ করেছেন সাবেক কাউন্সিলর ছালেহা বেগম। এ নিয়ে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে উপজেলা প্রশাসন।
Advertisement
অভিযান পরিচালনাকারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহা-পরিচালক, জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন ও থানায় লিখিত অভিযোগ করেন ছালেহা বেগম ।
অভিযোগে তিনি বলেন, ‘গত ১৮ জুন সকালে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের লোকজন প্রথমে আমার বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করে কোনো মাদকদ্রব্য না পেয়ে তাদের গাড়ির তেল খরচের জন্য ২০ হাজার টাকা দাবি করেন। তখন আমি তাদের ১০ হাজার টাকা দেই। পরবর্তীতে তারা আমাকে বাকি ১০ হাজার ঢাকা মোবাইলফোনের মাধ্যমে পাঠিয়ে দিতে বলে চলে যান। কিছুক্ষণ পরে তারা পুনরায় আমার ঘরে প্রবেশ করে আসবাবপত্র এলোমেলো করতে থাকেন। একপর্যায়ে তারা ঘরের আলমারির তালা খুলে সেখানে থাকা নগদ ৬ লাখ ৬৬ হাজার টাকা নেন। আমার ছেলের ঘরে প্রবেশ করে ঘরের আসবাবপত্র এলোমেলো করে ও ঘরের আলমারির ড্রয়ারে থাকা নগদ ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা নেন। টাকা নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে আমাকে ও আমার ছেলের স্ত্রীকে বিভিন্ন ভয়ভীতি ও হুমকি দেন। পরে জবানবন্দি ভিডিও রেকর্ড করা হয়।’
সরেজমিনে ভুক্তভোগী ছালেহা বেগমের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, এখনো পরিবারের সদস্যদের আতঙ্ক কাটেনি। স্থানীয় লোকজন তাদের সমবেদনা জানাতে আসছেন।
Advertisement
স্থানীয় লিটন ও মান্নান জাগো নিউজকে বলেন, সালেহা বেগমের ছেলে একজন ধার্মিক মানুষ। তিনি মাদকের সঙ্গে জড়িত, এটি শুনে আমরা হতবাক।
পরিবারের সদস্যরা বলেন, আগামী বছর হজ্বে যাওয়ার জন্য টাকাগুলো রাখা হয়েছিল। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের নারী সদস্য ছাড়াই বাড়িতে মহিলা সদস্যের গায়ে হাত তোলা হয়েছে ও নির্যাতন করা হয়। এলাকার কোনো মানুষকে আসতে দেওয়া হয়নি।
ভুক্তভোগী সালেহা বেগম জাগো নিউজকে বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের লোকজন আমার কাছ থেকে মোবাইল, টাকা ও গহনা নিয়ে অন্য রুমে চলে যায়। সেখান থেকে ফিরে এসে আমাকে গহনা ফেরত দিলেও টাকা ফেরত দেয়নি। পরে তারা ফেনসিডিল উদ্ধারের নাটক করেন। আমাদের অনেক নির্যাতন করেছে। পরবর্তীতে জোর পূর্বক মিথ্যা জবানবন্দি ভিডিও করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় জড়িতদের সুষ্ঠু বিচারের দাবি করছি।
সালেহা বেগমের স্বামী জাগো নিউজকে বলেন, আমাকে জোর করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের লোকজন বাড়ি থেকে বের দেয়। পরে এসে দেখি ঘরের জিনিসপত্র তছনছ করা হয়েছে। একই সঙ্গে সাড়ে ৮ লাখ টাকা নিয়েছে বলে জানতে পারি। মুরগির খামার ও গরু বেচার টাকা ছিল। হজে¦ যাওয়ার জন্য টাকাগুলো জমিয়ে রাখা হয়েছিল। আমি ঘটনায় জড়িতদের দ্রুতই বিচারের দাবি করছি।
Advertisement
ভঞাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু আব্দুল্লাহ খান জাগো নিউজকে বলেন, অভিযানের আগে আমাকে কোনো কিছুই জানানো হয়নি। অভিযানের নামে টাকা নেওয়ার ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী সালেহা বেগমের একটি অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগটি আমলে নিয়ে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অভিযানে থাকা সহকারী জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিদর্শক শামীম আল আজাদ এ ব্যাপারে কোন কিছু বলতে রাজি হননি। তিনি পরিদর্শক সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।
অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ভারপ্রাপ্ত) পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ইউএনওকে আগেই অবগত করে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। কোনো টাকা নেওয়া হয়নি। একপর্যায়ে তিনি কথা শেষ না করেই ফোন কেটে দেন।
এ ব্যপারে জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভুক্তভোগী ওই নারী সুষ্ঠু বিচার পাবেন। উপ-পরিদর্শক শামীম আল আজাদকে বদলির জন্য হেডকোয়ার্টারে আবেদন করা হয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, শামীম আল আজাদকে টাঙ্গাইল আদালতের প্রসিকিউশন শাখায় সংযুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু তিনি সেখানে যোগদান না করে আদেশ অমান্য করেছেন।
আব্দুল্লাহ আল নোমান/এমএন/এমএস