২০২৪ সালের ৫ আগস্ট, শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন। তখন থেকেই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) নেতাকর্মীদের মনে জেগে ওঠে নতুন আশা, এবার তাদের প্রিয় নেতা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বীরের বেশে দেশে ফিরবেন।
Advertisement
প্রায় এক বছর হতে চললেও সেই প্রত্যাশিত প্রত্যাবর্তন ঘটেনি। ২০২৫ সালের জুলাই মাসে আবারও রাজনৈতিক অঙ্গনে জোরালো গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে, তারেক রহমান শিগগির দেশে ফিরছেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে সেটা কবে? কোন তারিখে?
আরও পড়ুনবিএনপি জনগণের প্রত্যাশার নির্বাচন চায়: তারেক রহমান ১৭ বছরে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি প্রমাণ করা যায়নি: নজরুল শহীদ আব্দুল্লাহর ক্যানসার আক্রান্ত ভাইয়ের খোঁজ নিলেন তারেক রহমান যারা জনগণকে ভয় পায় তারাই নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে: প্রিন্সতারেক রহমান ঠিক কোন দিন দেশে ফিরছেন, সে বিষয়ে বিএনপির নেতারা সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারছেন না। তারাও ঘুরে ফিরে বারবার একই কথা বলছেন, শিগগির দেশে ফিরছেন তারেক রহমান।
দেশে ফেরা নিয়ে তারেক রহমানের বক্তব্যগত ৩০ জুন পটুয়াখালী জেলা বিএনপির সম্মেলনে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করে তারেক রহমান বলেন, ‘আমি খুব শিগগির দেশে ফিরব। দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় যেটুকু ত্যাগ দরকার, আমি তা করতে প্রস্তুত।’
Advertisement
এ ঘোষণার পর থেকে বিএনপির রাজনীতিতে নতুন গতি আসার ব্যাপারে অনেকেই আশাবাদী।
দেশে প্রত্যাবর্তনের চারটি সম্ভাব্য তারিখতারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতার সঙ্গে কথা বলেছে জাগো নিউজ। তারা কেউই নাম প্রকাশ করে কথা বলতে চাননি। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারেক রহমানের দেশে ফেরার সম্ভাব্য সময়সূচি হিসেবে চারটি দিন আলোচিত হচ্ছে।
আরও পড়ুননির্বাচন আটকানোর শক্তি কারও নেই: গয়েশ্বর আওয়ামী দোসররা সংস্কার কমিশনে বড় বড় কথা বলছে: সালাহউদ্দিন আহমদ নির্বাচন বিলম্বিত করতে ইস্যু তৈরি করা হচ্ছে: আবুল খায়ের ভূঁইয়া আর কত জীবন দেবে এ দেশের মানুষ: নজরুল ইসলামএর মধ্যে প্রথম দিন হচ্ছে আগামী ২৮ জুলাই। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের বর্ষপূর্তির ঠিক এক সপ্তাহ আগে তারেক রহমান দেশে ফিরতে পারেন।
দ্বিতীয় দিনটি হচ্ছে ৫ আগস্ট। দিনটি ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ ঘোষণা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত বছরের এই দিনে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। এই দিনে তারেক রহমান দেশে ফিরতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।
Advertisement
তৃতীয় দিনটি হতে পারে ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জানুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে বা পরে। তখন দেশে ফিরতে পারেন তারেক রহমান।
চতুর্থ দিনটি হতে পারে ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঠিক আগে বা পরে। তারেক রহমান তখন বীরের বেশে দেশে ফিরতে পারেন।
তারেক রহমান থাকবেন কোথায়?দেশে ফিরলে তারেক রহমান থাকবেন কোথায় এ নিয়েও কথা হচ্ছে। চারটি বাড়ির যে কোনো একটিতে তিনি থাকতে পারেন বলে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা চলছে।
১৯৬ নম্বরের বাসায় চলছে সংস্কারকাজচারটি বাড়ির মধ্যে গুলশান-২ অ্যাভিনিউ রোডের ১৯৬ নম্বর বাড়ি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে বেশি। বাড়ির ভেতরে-বাইরে রং করাসহ প্রয়োজনীয় সংস্কারকাজ চলছে।
আরও পড়ুনসুষ্ঠু নির্বাচন দিলেই বোঝা যাবে বিএনপি কতটা জনপ্রিয়: রিজভী যাদের যোগ্যতা নেই তারাই পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চায়: আমিনুল হক যুবদল নেতাকে ভিআইপি রুম না দেওয়ায় হোটেলে নারীদের ওপর হামলা বিএনপি ১৬ বছর লড়াই করেছে, একদিনেই ৫ আগস্ট আসেনি: মজনু১৯৮১ সালের ৩০ মে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাহাদতবরণের পরে তার স্ত্রী খালেদা জিয়ার নামে গুলশানের ১৯৬ নম্বর বাসা এবং ঢাকা সেনানিবাসে শহীদ মইনুল হোসেন সড়কে একটি বাসা বরাদ্দ দিয়েছিল রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তার সরকার।
১৯৬ নম্বরের বাসাটি এত বছর নামজারি করা ছিল না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গত ৪ জুন বাড়িটির নামজারির কাগজ খালেদা জিয়ার হাতে তুলে দেয়।
বাড়িটিতে আগে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ভাড়া থাকতেন। ছয় মাস আগে তিনি বাড়িটি ছেড়ে দেন। এরপরই তারেক রহমানের থাকার উপযোগী করতে প্রয়োজনীয় সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
ফিরোজায় আছেন খালেদা জিয়াএদিকে ঢাকা সেনানিবাসের বাসাটির বরাদ্দ বিগত শেখ হাসিনার সরকারের আমলে বাতিল করা হয়। এরপর খালেদা জিয়া গুলশানের ভাড়া বাসা ফিরোজায় ওঠেন। এই বাসার সঙ্গে ১৯৬ নম্বরের বাসাটি। এই বাসায়ও মায়ের সঙ্গে থাকতে পারেন তারেক রহমান।
বারিধারা ডিওএইচএস ও ধানমন্ডিতে তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমানের পৈতৃক নিবাস। তারেক রহমান সেখানেও থাকতে পারেন বলে আলোচনা রয়েছে।
বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বক্তব্যতারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত বছরের আগস্টে বলেন, ‘তারেক রহমান আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দেশে ফিরে এসে দলের নেতৃত্ব দেবেন। আমরা তার প্রত্যাবর্তনকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছি এবং আশা করছি শিগগির তিনি দেশে আসবেন।’
আরও পড়ুনবিএনপি গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা ধারণ করে: প্রিন্স আদালতকে ফ্যাসিস্টমুক্ত করতে হবে: সালাহউদ্দিন বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের বিষয়ে আশাবাদী অস্ট্রেলিয়া পিআর পদ্ধতিতে গেলে দেশে বড় ধরনের বিভেদ হবে: এ্যানিগত ১০ জুন গুলশানে একই বক্তব্যে মির্জা ফখরুল যোগ করেন, ‘তারেক রহমান অবশ্যই দেশে ফিরবেন। তিনি খুব শিগগির ফিরছেন।’
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি গত ২৬ জুন ঢাকায় ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে বলেন, ‘তারেক রহমান খুব শিগগির দেশে ফিরবেন। আমরা শুধু দলের মধ্যে নয়, জাতীয় পর্যায়েও প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
এরপর ৫ জুলাই বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘তারেক রহমানের দেশে ফেরার দিনক্ষণ নিয়ে প্রচারিত তথ্যের কোনো সত্যতা নেই। তবে শিগগির তিনি দেশে ফিরবেন। নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু না হলে দেশে ফিরবেন না।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ‘তারেক রহমানের দেশে ফেরার প্রস্তুতি চলছে। দেশে ফিরতে আইনগত বা রাজনৈতিক কোনো বাধা নেই। চ্যালেঞ্জ হচ্ছে উনার নিজের সিদ্ধান্ত নেওয়া, সময় ঠিক করা। কারণ এত বছর বিদেশে থাকার সুবিধা-অসুবিধা, পারিবারিক ও রাজনৈতিক বিষয় আছে, যা উনি ভালোভাবে বুঝবেন। আমি বলতে পারি, উনি আসার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন, যেদিন তিনি দিন ডিক্লেয়ার করবেন সবাই জানবেন।’
আরও পড়ুনতারেক রহমান জুলাই আন্দোলনের পটভূমি রচনার প্রধান নায়ক: রিজভী তোষামোদি করতে বিএনপির কিছু নেতা তারেক রহমানকে মাস্টারমাইন্ড বলছেন নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রের চূড়ান্ত বিজয় আসবে বিএনপি কখনো চাঁদাবাজি ও দখলদারত্বকে প্রশ্রয় দেয় না: আমিনুল হকতারেক রহমানের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু বলেন, ‘শঙ্কার কথা না থাকলেও তারেক রহমানের মতো লেভেলের নেতার নিরাপত্তা বিষয়ে বিবেচনা রাখা স্বাভাবিক। উনি ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে সারাদেশে আন্দোলন চালিয়েছেন।’
দেশে ফিরতে বাধা নেইওয়ান/ইলেভেন সরকারের সময় ২০০৭ সালের ৭ মার্চ তারেক রহমানকে গ্রেফতার করা হয়। ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্তি পেয়ে ১১ সেপ্টেম্বর চিকিৎসার জন্য সপরিবারে লন্ডন যান তারেক রহমান। তখন থেকেই সেখানেই অবস্থান করছেন তিনি। লন্ডনে থাকাকালে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান তারেক রহমান।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর সব মামলা থেকে অব্যাহতি ও খালাস পেয়েছেন তারেক রহমান। সরকারের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে এই মুহূর্তে তারেক রহমানের দেশে ফিরতে কোনো ধরনের বাধা নেই।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীও সম্প্রতি বলেন, ‘তারেক রহমানের দেশে ফিরতে কোনো বিধিবদ্ধ বাধা নেই।’
কেএইচ/এমএমএআর/জেআইএম