মতামত

ডিজিটাল শৃঙ্খলে গোপনীয়তার ক্ষয় ও মুক্তির অন্বেষণ

ডিজিটাল শৃঙ্খলে গোপনীয়তার ক্ষয় ও মুক্তির অন্বেষণ

বর্তমান ডিজিটাল যুগে মানুষের ব্যক্তিগত জীবনের গোপনীয়তা এক গভীর সংকটের মুখোমুখি। একদিকে প্রযুক্তির সহজলভ্যতা ও সুবিধা, অন্যদিকে ব্যক্তিগত তথ্যের ওপর এক প্রকার অদৃশ্য দখলদারি তৈরি হয়েছে, যা শোশানা জুবফের (Shoshana Zuboff) “Surveillance Capitalism” বা ‘নজরদারি পুঁজিবাদ’ নামক তত্ত্বের মাধ্যমে সুস্পষ্টভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

Advertisement

এই তত্ত্ব অনুযায়ী, প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো ব্যক্তি-মানুষের অভিজ্ঞতা, আচরণ, অনুভূতি— সবকিছু ডেটার রূপে সংগ্রহ করে এবং তা বাজারজাত করে। এই প্রক্রিয়ায় মানুষের স্বাধীনতা ও ব্যক্তিত্বের ওপর গভীর আঘাত হানে। ফ্র্যাঙ্কফুর্ট স্কুলের সমালোচনামূলক তত্ত্ব এই বাস্তবতা আরও গভীর দৃষ্টিতে ব্যাখ্যা করে, যেখানে আধুনিক পুঁজিবাদী সমাজ একপ্রকার প্রযুক্তিভিত্তিক শাসনব্যবস্থা হিসেবে পরিগণিত হয়।

শোশানা জুবফ তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘The Age of Surveillance Capitalism” (২০১৯)-এ নজরদারি পুঁজিবাদের যে ধারণা দেন, তা আধুনিক পুঁজিবাদের একটি নতুন এবং বিপজ্জনক রূপ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এই নতুন পুঁজিবাদী ব্যবস্থায়, মূল পণ্য হলো মানুষের আচরণগত তথ্য। গুগল, ফেসবুক, অ্যামাজনসহ বিশ্বের বৃহৎ প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো মানুষের ডিজিটাল পদচিহ্ন—যেমন সার্চ হিস্টরি, লোকেশন ডেটা, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার, এমনকি কণ্ঠস্বর ও আবেগ পর্যন্ত—নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে। এই বিশাল পরিমাণ তথ্য বিশ্লেষণ করে তারা মানুষের ভবিষ্যৎ আচরণ সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণীমূলক মডেল তৈরি করে। এই মডেলগুলোই মূলধন হিসেবে বিজ্ঞাপনদাতা, কর্পোরেট সংস্থা এবং ক্ষেত্রবিশেষে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে বিক্রি করা হয়। এভাবে তৈরি হয় একটি ‘ব্যবহারগত ভবিষ্যতের বাজার’ (Market for Behavioral Futures), যেখানে ব্যবহারকারীর আচরণই পণ্যে পরিণত হয়, যা তাদের অজান্তেই কেনা-বেচা হয়।

এই প্রক্রিয়াটি কেবল পণ্য বা সেবার বিজ্ঞাপন প্রচারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি একটি বৃহৎ ক্ষমতার কাঠামো গড়ে তোলে। এই কাঠামো এতটাই নিগূঢ় যে, এর মাধ্যমে ব্যক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় নিঃশব্দে ও অদৃশ্যভাবে। জুবফ ব্যাখ্যা করেন যে, এই ক্ষমতার কাঠামো এতটাই অসাম্যপূর্ণ যে তথ্য সংগ্রাহকরা ব্যবহারকারীদের সম্পর্কে বিশাল জ্ঞান অর্জন করে অথচ ব্যবহারকারীরা নিজের তথ্য কীভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে তা জানতেও পারে না, বা তাদের তথ্যের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না। এ ধরনের একতরফা তথ্য ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা (privacy) সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ে এবং গণতন্ত্রের মৌলিক ভিত্তিই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়। ব্যবহারকারীদের আচরণকে মুনাফার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের এ পদ্ধতি, মানুষের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাকে একটি নতুন ধরনের সম্পদ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে, যা ঐতিহাসিকভাবে কখনো পুঁজিবাদের অংশ ছিল না। এটি ব্যক্তিগত জীবন ও অনুভূতিকে একটি অর্থনৈতিক চালিকাশক্তিতে পরিণত করে, যেখানে প্রতিটি ক্লিক, প্রতিটি লাইক, প্রতিটি ব্রাউজিং হিস্টরি, প্রতিটি জিও-লোকেশন ডেটা মুনাফার সুযোগ তৈরি করে।

Advertisement

ফ্র্যাঙ্কফুর্ট স্কুল, বিশেষত থিওডর আদোর্নো (Theodor W. Adorno), ম্যাক্স হর্কহেইমার (Max Horkheimer) এবং হারবার্ট মারকুজের (Herbert Marcuse) মতো চিন্তকদের সমালোচনামূলক তত্ত্ব এই প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। তারা আধুনিক পুঁজিবাদী সমাজের ভেতরে প্রযুক্তি ও সংস্কৃতিকে ব্যবহার করে যে নিয়ন্ত্রণের রূপ দেখিয়েছেন, তা ‘ইন্সট্রুমেন্টাল র্যাশনালিটি (Instrumental Rationality) বা যান্ত্রিক যুক্তিবাদ দ্বারা চালিত। তাদের মতে, আধুনিক যুগে যুক্তি আর মুক্তির হাতিয়ার না হয়ে পরিণত হয় নিয়ন্ত্রণ ও শোষণের যন্ত্রে।

আদোর্নো ও হর্কহেইমারের ‘কালচার ইন্ডাস্ট্রি’ (Culture Industry) ধারণায় বোঝানো হয় যে, গণমাধ্যম ও জনপ্রিয় সংস্কৃতি কীভাবে মানুষের চিন্তাভাবনা নিয়ন্ত্রণ করে এবং তাদের মধ্যে একধরনের কৃত্রিম চাহিদা তৈরি করে। আজকের নজরদারি পুঁজিবাদের যুগে এই সংস্কৃতি শিল্প কেবল টেলিভিশন বা চলচ্চিত্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি ছড়িয়ে পড়েছে মোবাইল অ্যাপ, সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম, সার্চ ইঞ্জিন এবং অন্যান্য ডিজিটাল সেবার মধ্যে।

এসব প্রযুক্তি স্বাধীনতা, ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা ও আত্মনির্ভরতার ছদ্মবেশে কাজ করলেও বাস্তবে তা একধরনের চিন্তানিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গড়ে তোলে। ব্যবহারকারীরা মনে করেন তারা স্বাধীনভাবে প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন, কিন্তু তাদের প্রতিটি পদক্ষেপ, প্রতিটি পছন্দ এই ‘কালচার ইন্ডাস্ট্রি’ দ্বারা প্রভাবিত ও নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। এই প্রক্রিয়া ব্যক্তির স্বকীয়তা এবং সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা হ্রাস করে, যা এক ধরনের সম্মতি উৎপাদন করে শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার ক্ষমতা দুর্বল করে দেয়।

মারকুজের ‘ওয়ান-ডাইমেনশনাল ম্যান’ (One-Dimensional Man) বা ‘একমাত্রিক মানুষ’ ধারণা আজকের ডিজিটাল যুগে খুবই প্রাসঙ্গিক। তিনি যুক্তি দিয়েছিলেন যে, আধুনিক শিল্প সমাজ মানুষকে এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করে যে, তারা কেবল সেইসব চাহিদা পূরণ করতে চায় যা সমাজ নিজেই তৈরি করে। মানুষ এখন তার পূর্ণ সত্তা হারিয়ে তথ্যের একটি ক্লাস্টারে রূপ নিচ্ছে, যাকে বিভিন্ন সফটওয়্যার ও অ্যালগরিদম দ্বারা বিশ্লেষণ ও নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

Advertisement

প্রযুক্তি ব্যবহারকারী মনে করেন যে তিনি মুক্ত, নিজের পছন্দে প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন, কিন্তু সেই ব্যবহার নির্ধারিত হচ্ছে নজরদারি প্রযুক্তির মাধ্যমে। এটি এমন এক আত্মবিক্রয়ের অবস্থায় নিয়ে যায়, যেখানে মানুষ নিজেই নিজের ওপর নজরদারির হাতিয়ারে পরিণত হয়। এই ‘একমাত্রিকতা’ মানুষকে সমাজের প্রতিষ্ঠিত কাঠামোর বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলতে বা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে অক্ষম করে তোলে। তাদের পছন্দগুলো এমনভাবে প্রভাবিত হয় যে, তারা নিজেদের শোষণের প্রক্রিয়াকেই সমর্থন করে।এই সংকট শুধু পশ্চিমা বিশ্বে সীমাবদ্ধ নয়; দক্ষিণ এশিয়া, বিশেষত বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলোতে এই বাস্তবতা দ্রুত বিস্তার লাভ করছে। বাংলাদেশ সরকার ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্যে বহু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে জাতীয় ডিজিটাল আইডি, জন্মনিবন্ধনের ডিজিটাল রেকর্ড, মোবাইল ব্যাংকিং এবং বিভিন্ন সরকারি ডিজিটাল সেবা। তবে এসব উদ্যোগে সাধারণ জনগণের ব্যক্তিগত তথ্য জমা হচ্ছে কেন্দ্রীয় ডেটাব্যাংকে, যার নিরাপত্তা, স্বচ্ছতা ও নিয়ন্ত্রণ নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই এই তথ্য সংগ্রহ ও ব্যবহারে জনগণের সম্মতি ও সচেতনতা নেই। ফলে তথ্যের অপব্যবহার বা ডেটা ফাঁসের ঝুঁকি বেড়ে যায়, যা নাগরিকদের গোপনীয়তাকে আরও বিপদে ফেলে।

বাংলাদেশে নজরদারি কেবল করপোরেট প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং রাষ্ট্রের পক্ষ থেকেও একটি প্রযুক্তিনির্ভর পর্যবেক্ষণ কাঠামো তৈরি হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া মনিটরিং, ফেসিয়াল রিকগনিশন সফটওয়্যার ও ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন (বর্তমানে সাইবার নিরাপত্তা আইন) ইত্যাদির মাধ্যমে সরকার নাগরিকদের কার্যক্রম নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।

সরকার বারবার জাতীয় নিরাপত্তা ও সাইবার অপরাধ দমনের অজুহাতে নাগরিকদের বাকস্বাধীনতা নিয়ন্ত্রণে এই প্রযুক্তি ও আইন ব্যবহার করছে। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন ব্যবহার করে সাংবাদিক, ব্লগার, এমনকি সাধারণ নাগরিকদেরও গ্রেফতার করা হয়েছে শুধু মতপ্রকাশের কারণে। এই পরিস্থিতি ফ্র্যাঙ্কফুর্ট স্কুলের তত্ত্বে বর্ণিত ‘সাংস্কৃতিক দমন’ ও ‘যুক্তিবাদের শোষণ’-কে বাস্তব রূপে ফুটিয়ে তোলে, যেখানে প্রযুক্তি স্বাধীনতার পরিবর্তে নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।এছাড়া বাংলাদেশের ডিজিটাল বাস্তবতায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ডিজিটাল বিভাজন (Digital Divide)। নগরবাসী ও মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠী হয়তো প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ, তবে গ্রামীণ ও দরিদ্র জনগোষ্ঠী অনেক ক্ষেত্রেই প্রযুক্তিগতভাবে পশ্চাৎপদ। অথচ তাদের তথ্যই সবচেয়ে বেশি নজরদারির আওতায় পড়ছে—চিকিৎসা, শিক্ষা, এনজিও কার্যক্রম বা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে।

এই অসমতা নজরদারি পুঁজিবাদকে আরও গভীরভাবে প্রোথিত করে। তথ্যের এই অবাধ প্রবাহে দরিদ্র জনগোষ্ঠী কার্যত নিঃস্ব হয়ে পড়ছে, কারণ তারা নিজেদের তথ্যের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারছে না এবং তাদের তথ্যের মূল্য সম্পর্কে তারা সচেতনও নয়। তাদের অর্থনৈতিক দুর্বলতা এবং ডিজিটাল সাক্ষরতার অভাব তাদের আরও বেশি করে নজরদারির শিকার করে তোলে।

সমালোচনামূলক তত্ত্ব আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, প্রযুক্তির অগ্রগতি সবসময় মানবিক উন্নয়ন নির্দেশ করে না। বরং কখনো কখনো তা একধরনের আধুনিক দাসত্ব তৈরি করে, যেখানে মানুষ স্বেচ্ছায় প্রযুক্তির মাধ্যমে নিজের স্বাধীনতা বিসর্জন দেয়। ফ্র্যাঙ্কফুর্ট স্কুলের মতে, মুক্তির সম্ভাবনা প্রযুক্তির ভেতরেই নিহিত আছে, তবে তা অর্জনের জন্য প্রয়োজন সমালোচনামূলক চেতনা এবং তথ্যের রাজনৈতিক অর্থ উপলব্ধি করার ক্ষমতা।

শোশানা জুবফের কথায়, আমাদের দরকার ‘নতুন ডিজিটাল অধিকার চুক্তি’ (New Digital Rights Agreement), যা নাগরিকদের তথ্যের মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করবে। এই চুক্তি নাগরিকদের প্রযুক্তি ব্যবহারের অধিকারকে স্বীকৃতি দেবে, কিন্তু একই সাথে তাদের তথ্য সুরক্ষার নিশ্চয়তা দেবে এবং প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর ক্ষমতার লাগাম টেনে ধরবে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই ধরনের একটি আন্দোলন গড়ে তুলতে হলে প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগের। এর মধ্যে অন্যতম হলো জনগণের মধ্যে ডিজিটাল সাক্ষরতা বৃদ্ধি, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের ঝুঁকি ও অধিকার নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টি এবং একটি শক্তিশালী, আন্তর্জাতিক মানসম্মত তথ্য সুরক্ষা আইন প্রণয়ন। এই আইনে ডেটা ব্যবহারের স্বচ্ছতা, ডেটা সংগ্রহের উদ্দেশ্য এবং ডেটা মালিকানার অধিকার স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করা উচিত।

একই সঙ্গে নাগরিক সমাজ, সাংবাদিকতা এবং একাডেমিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ বিষয়ে সমালোচনামূলক আলোচনার মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক প্রযুক্তি ব্যবস্থার দাবিতে সোচ্চার হতে হবে। গণমাধ্যমকে শুধু তথ্য পরিবেশনকারী হিসেবে নয়, বরং তথ্য যাচাইকারী এবং জনগণের অধিকার রক্ষায় কণ্ঠস্বর হিসেবে ভূমিকা পালন করতে হবে।

ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, বাংলাদেশের ছাত্র ও সাধারণ জনগণ বারবার অন্যায়, নিপীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। আজকের দিনে এই প্রতিরোধের নতুন ক্ষেত্র হলো ডিজিটাল অধিকার। তথ্যের ওপর নাগরিকের অধিকার নিশ্চিত না হলে, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের ভিত্তিও দুর্বল হয়ে পড়বে। প্রযুক্তি যেন মানবমুক্তির হাতিয়ার হয়, শোষণের নয়—এই লক্ষ্যেই আমাদের প্রযুক্তি-নীতিকে রূপান্তর করতে হবে।

সার্বিকভাবে বলা যায়, নজরদারি পুঁজিবাদ আধুনিক পুঁজিবাদের এক বিপজ্জনক রূপ, যা ব্যক্তি-মানুষকে তথ্যের পণ্য করে তোলে এবং গোপনীয়তা ও স্বাধীনতাকে ক্ষয় করে।

শোশানা জুবফ এবং ফ্র্যাঙ্কফুর্ট স্কুল আমাদের যে সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়েছেন, তা ব্যবহার করে আমরা এই প্রক্রিয়ার অন্তর্নিহিত শোষণ ও দমনচিত্র শনাক্ত করতে পারি। বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে প্রযুক্তি যেন ক্ষমতাহীনদের নয়, ক্ষমতাবানদের হাতিয়ার হয়ে না ওঠে—সেই সচেতনতা গড়ে তোলা আজ সময়ের দাবি। প্রযুক্তি হোক মুক্তির, শৃঙ্খলের নয়— এই প্রতিশ্রুতিতেই ভবিষ্যতের পথ রচিত হোক। একটি সচেতন, শিক্ষিত এবং দায়িত্বশীল সমাজই পারে প্রযুক্তির নেতিবাচক প্রভাব থেকে নিজেদের রক্ষা করতে এবং ডিজিটাল যুগে স্বাধীনতা ও গোপনীয়তার ভারসাম্য বজায় রাখতে।

লেখক: গবেষক ও উন্নয়নকর্মী।

এইচআর/এসএফএ/এমএস