দেশজুড়ে

দখলে ড্রেন-বিল, বৃষ্টি হলেই শহরে হাঁটুপানি

দখলে ড্রেন-বিল, বৃষ্টি হলেই শহরে হাঁটুপানি

টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে আবারও থমকে গেছে সাতক্ষীরা শহরের স্বাভাবিক জনজীবন। বিশেষ করে শহরের নিম্নাঞ্চলগুলোতে হাঁটুপানি জমে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে শতাধিক পরিবার। কোথাও কোথাও ড্রেনের ময়লা মিশে পানি আরও দুর্গন্ধময় হয়ে উঠেছে, এতে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি।

Advertisement

বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) সকাল থেকে শুরু হওয়া গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি শুক্রবার (৪ জুলাই) সকাল নাগাদ রূপ নেয় মুষলধারায়। এতেই সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা।

সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন জানান, ২৪ ঘণ্টায় সাতক্ষীরায় ১২১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী দুই-তিন দিন থেমে থেমে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতা এ সময়টায় স্বাভাবিক, তবে সবাইকে সতর্ক থাকার অনুরোধ করা হয়েছে।

টানা বৃষ্টিতে পানি নিষ্কাসনের পথ না থাকায় সাতক্ষীরা পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। কাটিয়া, মুন্সপাড়া, ইটাগাছা, গড়েরকান্দা, বাকাল বারুইপাড়া ও কুখরালীর মতো এলাকায় পানি জমে প্রায় শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

Advertisement

স্থানীয়রা জানান, ওইসব এলাকার পানি জমে কুখরালীর একটি বিলে। কিন্তু সেই বিল থেকে পানি বের হওয়ার স্বাভাবিক পথ কয়েক বছর আগে স্থানীয় প্রভাবশালীরা বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে বর্ষাকালে ৪-৫ মাস ধরে হাঁটুপানি জমে থাকে।

ইটাগাছা এলাকার বাসিন্দা আফরোজা বেগম বলেন, বৃষ্টির পানি হলেই উঠোন ডুবে যায়। ড্রেনের গন্ধে ঘরে থাকা যায় না। বাচ্চাদের পায়ে ঘা হয়, চর্মরোগ হচ্ছে। মেয়র–কাউন্সিলর আশ্বাস দেন কাজ কিছুই হয় না।

একই এলাকার আজিজুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ড্রেন নেই, আর যেটুকু আছে সেটাও পরিষ্কার হয় না। রাস্তায় এখন ড্রেনের নোংরা পানি বইছে। ঘরে বসে শহর চালালে হবে না, রাস্তায় নেমে বাস্তবটা দেখতে হবে।

ভুক্তভোগী তাহমিদ হোসেন বলেন, সরকার আসে যায়, কুখরালীর এই দুর্ভোগ কাটে না। মাত্র একটা ড্রেন বদলালেই সমস্যার অনেকটা সমাধান হতো। আমরা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চাই।

Advertisement

আরেক ভুক্তভোগী কাজী রুবেল বলেন, পচা পানির গন্ধ ও সাপের ভয়ে বাচ্চারা স্কুলে যেতে পারে না। গোসল, টয়লেট, খাবার পানি সবকিছুতেই ভোগান্তি। এটাকে আর সহ্য করা যাচ্ছে না।

এদিকে জলাবদ্ধতার কারণে রাস্তাঘাটও নষ্ট হয়ে গেছে। চলাফেরায় ভোগান্তির পাশাপাশি বেড়েছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। সুলতানপুর এলাকার চিকিৎসক মইনুল ইসলাম বলেন, বর্ষা এলেই চর্মরোগ ও ডায়রিয়ার রোগী বেড়ে যায়। শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, ফলে তারাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। অবিলম্বে ড্রেন সংস্কার ও পরিষ্কার জরুরি।

এ বিষয়ে সাতক্ষীরা পৌরসভার প্রশাসক মাশরুবা ফেরদৌস বলেন, সাতক্ষীরা পৌরসভা একটি পুরনো শহর। অনেক জায়গায় ড্রেনেজ ব্যবস্থা আধুনিকীকরণ প্রয়োজন। বিশেষ করে নিচু এলাকাগুলোতে জলাবদ্ধতা প্রতিনিয়ত সমস্যা তৈরি করছে, এটা আমরা জানি। এরই মধ্যে কিছু ওয়ার্ডে জরুরি পরিষ্কার অভিযান শুরু হয়েছে। স্থায়ী ড্রেনেজ প্রকল্পও প্রণয়ন করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, শহরের সব সমস্যার সমাধান একসঙ্গে সম্ভব নয়। ধাপে ধাপে আমরা এগোচ্ছি।

শুধু বসতঘরেই নয়, জলাবদ্ধতার প্রভাব পড়েছে দিনমজুর, রিকশাচালক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জীবিকায়ও। ভ্যানচালক জলিল বলেন, পানিতে রাস্তা ডুবে থাকায় যাত্রী ওঠে না, ইনকাম নেই। কীভাবে খাবো ভাবতে পারছি না।

ফুটপাত ব্যবসায়ী রাশেদা বলেন, বিক্রি নেই, দোকানে যেতেও কষ্ট হয়। দিনে আয় না হলে খাব কী?

স্থানীয়দের দাবি, টানা বৃষ্টিতে সাতক্ষীরার শহরজুড়ে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা যেন এখন আর কোনো আকস্মিক দুর্যোগ নয়, বরং নিত্যদিনের বাস্তবতা। অল্প কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতেই শহর ডুবে যাচ্ছে, অথচ বছরের পর বছর ধরে পৌর কর্তৃপক্ষ কার্যকর কোনো সমাধান দিতে পারেনি।

আহসানুর রহমান রাজীব/এমএন/জেআইএম