জাতীয়

নতুন টাকা অচল মেট্রোরেলে

নতুন টাকা অচল মেট্রোরেলে

• ঈদের আগে ও পরে বাজারে নতুন ছাড়ে বাংলাদেশ ব্যাংক• নতুন টাকা ভেন্ডিং মেশিনে নিচ্ছে না• সফটাওয়্যার আপডেটে উদ্যোগ নেই ডিএমটিসিএলের

Advertisement

সকাল ৯টা। মেট্রোরেলের ফার্মগেট স্টেশন। এ স্টেশনে ভেন্ডিং মেশিনে নতুন সিরিজের ৫০ টাকার নোট দিয়ে একক যাত্রার টিকিট কাটার চেষ্টা করেন মনিপুরিপাড়ার বাসিন্দা মনোয়ারুল ইসলাম। কিন্তু অনেক চেষ্টার পরও টিকিট কাটতে পারেনি তিনি। বারবারই তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। আর মনিটরে লেখা ওঠে ‘লেনদেন প্রক্রিয়াটিতে ত্রুটি আছে। সাহায্যের জন্য অপেক্ষা করুন। সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখিত।’

কিন্তু ঠিক কী কারণে তাকে টিকিট দেওয়া হচ্ছে না, তার কিছুই বুঝতে পারছিলেন না মনোয়ারুল। পরে নির্দিষ্ট কাউন্টারে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটেন তিনি। এ সময় ভেন্ডিং মেশিন থেকে কেন টিকিট দিচ্ছে না, তা কাউন্টারের সংশ্লিষ্ট কর্মীর কাছে জানতে চান তিনি। তখন মেট্রোরেলের টিকিট কাউন্টার থেকে তাকে জানানো হয়, যে নতুন টাকায় তিনি টিকিট কাটার চেষ্টা করছেন, তা এখনেও ভেন্ডিং মেশিনে দেওয়া হয়নি। ফলে যাত্রীদের অনেকেই টাকা থাকা সত্ত্বেও ভেন্ডিং মেশিন থেকে টিকিট কিনতে পারছেন না।

নতুন ২০০ টাকার নোট দিয়ে মতিঝিল স্টেশন থেকে মিরপুর-১০ নম্বর স্টেশনে যাওয়ার টিকিট কাটতে ভেন্ডিং মেশিনের সামনে দাঁড়ান নাসির উদ্দিন। কিন্তু তিনিও কোনোক্রমেই টিকিট কাটতে পারছিলেন না। বারবারই তার টাকা ফিরিয়ে দেয় ভেন্ডিং মেশিন। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।

Advertisement

আলাপকালে নাসির উদ্দিন বলেন, এক মাসের বেশি সময় আগে বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারে নতুন সিরিজের টাকার নোট বাজারে ছেড়েছে। কিন্তু এখনেও ভেন্ডিং মেশিনের সফটাওয়্যারে আপডেট দেওয়া হয়নি। আবার নতুন টাকা দিয়ে নির্দিষ্ট কাউন্টারে টিকিট কাটতে গেলে, তারা টাকা কয়েকবার উল্টিয়ে-পাল্টিয়ে দেখে এ নোট আসল না নকল। এতে যাত্রীদের সময় নষ্ট হয়।

আরও পড়ুন:

আজ আসছে নতুন নকশার নোট ঈদের আগেই মিলবে ২০, ৫০ ও ১০০০ টাকার নতুন নোট নতুন টাকা ছাপাতে এবার খরচ হচ্ছে তিন গুণ

এভাবেই ঢাকার জনপ্রিয় মেট্রোরেলে ভেন্ডিং মেশিনে নতুন টাকায় টিকিট কাটতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা। যাত্রীদের অভিযোগ, নতুন টাকা বাজারে ছাড়ার পরপরই এসব টাকার একটি করে নোট সংগ্রহের উচিত ছিল মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের। এবং তা দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিটি স্টেশনের ভেন্ডিং মেশিনে সফটাওয়্যার আপডেট করার দরকার ছিল। কিন্তু এখনও তার কোনো প্রস্তুতি নেয়নি কর্তৃপক্ষ।

যদিও মেট্রোরেলের ঊর্ধ্বতনরা জানিয়েছেন, এখনও নতুন সিরিজের টাকা বাজারে সবার হাতে যায়নি। নির্দিষ্ট ব্যাংকগুলোতেও নতুন টাকা এক সঙ্গে পাওয়া যাচ্ছে না। বিষয়টি তাদের পর্যবেক্ষণে রয়েছে। শিগগির নতুন টাকা সংগ্রহ করে ভেন্ডিং মেশিনের সফটাওয়্যারে দেওয়া হবে। এ কাজটি করতে অন্তত আরও তিন-চার মাস সময় লাগবে।

Advertisement

বর্তমানে ঢাকার একটি দ্রুতগামী গণপরিবহন ব্যবস্থা মেট্রোরেল। এর নিয়ন্ত্রক সংস্থা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। ২০৩০ সাল নাগাদ ১২৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মোট ৬টি মেট্রো লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে ডিএমটিসিএল। এর মধ্যে ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর এমআরটি লাইন-৬-এর উত্তরা উত্তর থেকে আগারগাঁও অংশে মেট্রোরেল আংশিক চালু হয়। পরে ২০২৩ সালের ৫ নভেম্বর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশে যাত্রী চলাচল শুরু হয়।

এ রুটের উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর ১১, মিরপুর ১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সচিবালয়, মতিঝিলে ১৬টি স্টেশন রয়েছে।

গত ১ জুন ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের স্বাক্ষরযুক্ত নতুন সিরিজের ১ হাজার, ৫০ ও ২০ টাকার ব্যাংক নতুন নোট বাজারে ছেড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আবার ঈদের পর ৫, ১০, ১০০, ২০০ ও ৫০০ টাকার নতুন ডিজাইনের নোট বাজারে ছাড়ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরইমধ্যে এসব টাকা বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে গ্রাহকের হাতে পৌঁছেছে।

মিরপুর ১৪ স্টেশন থেকে মেট্রোরেলে কারওয়ান বাজারে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন আতাহার আলী। ২৯ জুন সকালে কারওয়ান বাজার স্টেশনে আলাপকালে আতাহার আলী বলেন, নতুন নোট দিয়ে মেট্রোরেলের টিকিট কাটার জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। ঈদের পর তথা ২০ জুনের পর থেকে মেট্রোরেলে এই সমস্যা বেশি দেখা যাচ্ছে। যদিও আগের টাকা দিয়ে টিকিট কাটা যাচ্ছে। এ ছাড়া যাদের এমআরটি কার্ড রয়েছে, তাদের এই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে না।

আরও পড়ুন:

নতুন ১০ টাকা কিনতে খরচ ১৫ টাকা এটিএম-সিআরএমে নতুন নোট ‘অচেনা’ নিয়ে যা বলছে ব্যাংক ফুটপাতে নতুন টাকার নোট মিললেও, ব্যাংকে মিলছে না

ডিএমটিসিএলের এমআরটি-৬ এর প্রকল্প পরিচালক মো. জাকারিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ঈদের আগে সব ব্যাংকে টাকা দিতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। আবার যে কয়েকটি ব্যাংকে টাকা গেছে, তার কোনোটিতে ১০০০ টাকার নোট গেছে। আবার কোনো ব্যাংকে ২০ টাকার নোট গেছে। যার কারণে আমরা কাজটা শুরু করতে পারিনি। তিনি বলেন, এখন আমরা নতুন নোট সংগ্রহের চেষ্টা করেছি। সবগুলো টাকা পেলে তা ভেন্ডিং মেশিনের সফটাওয়ারে দেওয়া হবে। এটা আমাদের নলেজে আছে। যদিও মেট্রোরেলে টিকিট কাটতে ১০০০ টাকা ও ৫০০ টাকার নোট নেওয়া হয় না। আমাদের চাহিদা বেশি ২০০ টাকা আর ২০ টাকার নোটি।

এমএমএ/এসএনআর/এমএস