দেশজুড়ে

পাবনায় থামছে না কঙ্কাল চুরি, একরাতে উধাও আরও ২১

পাবনায় থামছে না কঙ্কাল চুরি, একরাতে উধাও আরও ২১

পাবনায় থামছে না রাতের গভীরে কবরস্থান থেকে মরদেহ বা কঙ্কাল চুরির ঘটনা। মাঝে মধ্যেই বিভিন্ন কবরস্থান থেকে চুরি হচ্ছে কঙ্কাল। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) দিনগত রাতে পাবনার আমিনপুর থানার বিরাহিমপুর কবরস্থান থেকে চুরি হয়েছে কঙ্কাল।

Advertisement

শুক্রবার (৪ জুলাই) সকালে স্থানীয়রা কবরস্থানে গেলে বিষয়টি নজরে আসে। এর আগেও কয়েকটি জায়গায় এমন ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে। তাই এ নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে সংশ্লিষ্টদের।

স্থানীয় সূত্র বলছে, বিরাহিমপুর কবরস্থান ছাড়াও জেলার সাঁথিয়া, সুজানগর ও আমিনপুর থানার বিভিন্ন কবরস্থান থেকে এর আগেও প্রায় ২৬ টি মরদেহ বা কঙ্কাল চুরির ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে গত বছরের ৯ জুন সাঁথিয়া উপজেলার রাজাপুর কবরস্থান থেকে পাঁচটি, এর দুই দিন আগে দুই কিলোমিটার দূরের সুজানগর উপজেলার দুলাই ইউনিয়নের চিনাখড়া কবরস্থান থেকে পাঁচটি এবং এর মাস খানেক আগে আমিনপুর কবরস্থান থেকে ১৬টি কঙ্কাল চুরির ঘটনা ঘটে। প্রত্যেকটি ঘটনাই ঘটানো হয়েছে গভীর রাতে। পরদিন সকালে স্থানীয়রা কবরস্থানে গিয়ে এসব দেখতে পান। তবে এসব ঘটনার একটিরও রহস্য উদঘাটন হয়িনি বা ঘটনায় জড়িত কাউকেই আইনের আওতায় আনতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

বিরাহিমপুর কবরস্থানের ঘটনায় স্থানীয়রা জানান, রাতের কোনো একটি সময় কবর খুঁড়ে মরদেহ বা কঙ্কালগুলো বের করা হয়েছে। কোনো কবর প্রায় পুরোপুরি খোঁড়া। আবার কোনোটি আংশিক খুঁড়ে মরদেহগুলো বের করা হয়েছে। কোনোটির ক্ষেত্রে কাফনের কাপড় বের করেছে, যেটি দেখা যাচ্ছে। এর আগেও আশপাশের উপজেলায় এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। ভিন্ন উপজেলা হলেও অধিকাংশ কবরস্থানগুলো খুব বেশি দূরে নয়। কিন্তু এসব ঘটনায় পুলিশকে কিছুই করতে দেখা যায়নি।

Advertisement

তারা আরও জানান, কবরস্থানে পুলিশ এসেছিল। পরিদর্শন করে চলে গেছে। স্বজনদের কবর দেওয়ার পর সেই মরদেহের নিরাপত্তা নেই। এ বিষয়টি সবার জন্যই আতঙ্ক ও উদ্বেগের।

স্থানীয় বাসিন্দা শামিম হোসেন বলেন, সকালে ঘুম থেকে উঠে শুনি আমাদের কবরস্থানের কঙ্কাল চুরি হয়েছে। ছুটে এসে দেখি অনেকগুলো কবর খোঁড়া। এসব কবরে থাকা মরদেহের একটিও নেই। পরিস্থিতি এমন হয়েছে- বেঁচে থেকে নিরাপত্তা নেই, আবার মরলেও নিরাপত্তা নেই। অথচ এগুলোর রহস্য কোনোভাবেই জানা যাচ্ছে না। এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আরও তৎপর হওয়া উচিত।

এ বিষয়ে আমিনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। সেখান থেকে কিছু কঙ্কাল চুরির ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি তদন্ত চলছে। লিখিত অভিযোগ পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে দফায় দফায় কঙ্কাল চুরির ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে সচেতন মহল। এ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে পাবনা জেলা জজ কোর্টের সহকারী সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি) আনোয়ার হোসেন বলেন, গত বছরের শেষের দিকেও এ ধরনের কঙ্কাল বা মরদেহ চুরির ঘটনা ঘটেছে। আবার বিরাহিমপুর কবরস্থান দিয়ে এ বছরের চুরি অভিযান শুরু হলো। কেন বার বার এগুলো ঘটছে? পূর্বে যেসব চুরির ঘটনা ঘটেছে, সেগুলোর একটিরও রহস্য উদঘাটন বা ঘটনায় জড়িত কাউকে শনাক্ত করা হয়নি। এই যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রশাসনিক ব্যর্থতা, এটির ফলেই এই ঘটনাগুলো বার বার ঘটানোর সুযোগ পাচ্ছে চোর চক্র।

Advertisement

তিনি বলেন, এসব ক্ষেত্রে থানা পুলিশ একটি এক্সকিউজ দেখায় যে, লিখিত অভিযোগ দিতে হবে। সব ঘটনায় লিখিত অভিযোগ দিতেই হবে? এছাড়া কোনো পদক্ষেপ নেবার সুযোগ নেই? দায়িত্বপ্রাপ্তরা চাইলেই তদন্ত করে এর রহস্য উন্মোচন ও দোষীদের শাস্তির আওতায় আনতে পারেন। কিন্তু তারা দায়সারা উত্তর দিয়ে থেমে থাকেন। কবরস্থান থেকে কঙ্কাল বা মরদেহ চুরি খুবই নিন্দনীয় ও উদ্বেগজনক ঘটনা। এর সঙ্গে জড়িতদের অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনা উচিত।

পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) মো. মশিউর রহমান মন্ডল বলেন, এর আগে কঙ্কাল চুরির যেসব ঘটনা ঘটেছে সে বিষয়গুলোতে কি ধরনের আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সেটি আমরা খতিয়ে দেখছি। পাশাপাশি বিরাহিমপুর কবরস্থানের ঘটনায় এরইমধ্যে তদন্ত শুরু হয়েছে। পুলিশি নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। দ্রুতই এ চুরির রহস্য উদঘাটন করা হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অপরাধমূলক কাজের ক্ষেত্রে পুলিশ চাইলে বাদী হয়ে মামলা দায়ের বা পদক্ষেপ নিতে পারে। তবে এটি ধর্তব্য অপরাধের ক্ষেত্রে। কঙ্কাল চুরির বিষয়টি ধর্তব্য অপরাধের মধ্যে পড়ে না। এজন্য ভুক্তভোগী বা সংশ্লিষ্টদের লিখিত অভিযোগ বা মামলা দায়েরের প্রয়োজন পড়ে। তবে এক্ষেত্রে কেউ অভিযোগ না দিলে আমরা পুলিশের পক্ষ থেকে জিডি করি এবং প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আদালতের প্রসিকিউশন অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেই। কঙ্কাল চুরির বিষয়টি আমরা অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। যে পদ্ধতিই অনুসরণ করা প্রয়োজন, সেটি করে ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।

আলমগীর হোসাইন নাবিল/এমএন/জিকেএস