মওলানা ওয়াহিদুদ্দিন খান
Advertisement
একটি হাদিসে এসেছে, নবিজি (সা.) বলেছেন—দুনিয়ার সর্বোত্তম সম্পদ হলো নেককার বা ভালো স্ত্রী। (সহিহ মুসলিম: ১৪৬৭)
এই কথার মানে কী?এর মানে হলো, প্রত্যেক নারী জন্মগতভাবেই একজন পুরুষের জীবনে সবচেয়ে বড় সম্পদ হওয়ার ক্ষমতা নিয়ে জন্মায়। ঠিক যেমন প্রকৃতি আমাদের কাঁচা লোহা দেয়। কিন্তু ওই লোহাকে গলিয়ে বিভিন্ন আকৃতি দেওয়া আমাদের কাজ। নারীর ব্যাপারটাও ঠিক তাই।
একজন পুরুষের প্রথম দায়িত্ব—সে যেন স্ত্রীর মর্যাদা বোঝে। স্ত্রীর ভেতরের সৌন্দর্য, গুণ, যোগ্যতাগুলো যেন খুঁজে বের করে। আসলে প্রতিটি নারীই এক সম্ভাবনা। এখন সেই সম্ভাবনাকে বাস্তব রূপ দেওয়া কিংবা নষ্ট করা—এটা একান্তই পুরুষের হাতে।
Advertisement
নবিজি (সা.) চেয়েছেন, পুরুষ যেন নিজের স্ত্রীকে আল্লাহর দেওয়া উপহার মনে করে। যখন সে মনে করবে, আমার স্ত্রী আল্লাহর পাঠানো উপহার, তখন তার মানসিকতাই বদলে যাবে। তখন সে অনুভব করবে, আল্লাহর নির্বাচন ভুল হতে পারে না। দুনিয়া পরিচালনায় আল্লাহ যেমন ভুল করেন না, তেমনই আমার সঙ্গী নির্বাচনেও আল্লাহ কোনো ভুল করেননি।
এই বিশ্বাস যদি পুরুষের মনে দৃঢ় হয়, তাহলে স্ত্রীকে ভালো রাখা তার কাছে ইবাদতের মতো হয়ে যাবে। সে সব রকম কষ্ট সহ্য করে চেষ্টা করবে তার স্ত্রী যেন সত্যি সত্যি তার জীবনের সবচেয়ে বড় সুখের সঙ্গী হয় এবং একইসাথে সে তার স্ত্রীকেও উত্তম স্ত্রী হয়ে উঠতে সাহায্য করবে।
সব পুরুষই চায়, আমার স্ত্রী হোক দুনিয়ার সবচেয়ে ভালো স্ত্রী। কিন্তু সত্য কথা হলো, ভালো স্ত্রী কাউকে তৈরি করে দেওয়া হয় না। স্ত্রী কোনো রেডিমেড জামা নয়! সে একজন জলজ্যান্ত মানুষ, তাকে স্বামীর নিজেরই গড়ে তুলতে হয়। আর এই কাজের জন্য পুরুষের দরকার দুটি জিনিস:
১.আন্তরিক সহানুভূতি২.ধৈর্য ও সহনশীলতা
Advertisement
এই দুটি গুণ পুরুষের মধ্যে থাকা জরুরি। কারণ বিয়ের মাধ্যমে সম্পূর্ণ অচেনা দুজন একসাথে সংসার শুরু করে। দুজনের রুচি ও অভ্যাস আলাদা। আসলে আল্লাহ মানুষের জীবনকে যে নিয়মে বানিয়েছেন, সেখানে সব কিছু এক রকম নয়। বরং পার্থক্যটাই এখানে প্রকৃতির নিয়ম।
এই নিয়ম আসলে মানুষকে সুযোগ দেয়—দুজন ভিন্ন মানুষ যেন তাদের আলাদা যোগ্যতা কাজে লাগিয়ে সমাজের জন্য আরও বেশি উপকারী হতে পারে। এটা তখনই হতে পারবে, যখন স্বামী তার স্ত্রীর প্রতি আন্তরিক সহানুভূতি রাখবে এবং তার ভিন্নতার প্রতি ধৈর্য দেখাবে।
স্বামী যদি স্ত্রীর আলাদা ভাবনা, আচরণ ও অভ্যাসের পেছনে সৌন্দর্য খুঁজে পায়, তাহলে সে শুধু তাকে গ্রহণই করে না, বরং তাকে বিকশিত হতেও সাহায্য করে। এই প্রক্রিয়ায় সে শুধু স্ত্রীর সম্ভাবনাকে বাস্তব রূপ দেয় না, বরং নিজের সীমাবদ্ধতা ও আত্মকেন্দ্রিকতা কাটিয়ে ওঠে, এবং এ কাজ তাকে আরও সহনশীল ও দায়িত্ববান করে তোলে। স্ত্রীকে গড়ে তুলতে গিয়ে সে নিজের চরিত্রও পরিশীলিত করে। তাই বলা যায়, স্ত্রীকে গড়ে তোলার চেষ্টাই একজন পুরুষের আত্মগঠনের শ্রেষ্ঠ প্রশিক্ষণ।
অনুবাদ: মওলবি আশরাফ
/এমএস