খেলাধুলা

কাজী সালাউদ্দিনের ৪৬ বছর পর ঋতুপর্ণা চাকমা

কাজী সালাউদ্দিনের ৪৬ বছর পর ঋতুপর্ণা চাকমা

এশিয়ার ফুটবলের সর্বোচ্চ আসর এশিয়ান কাপ। মর্যাদার এই আসরে বাংলাদেশ একবারই খেলেছিল ১৯৮০ সালে কুয়েতে। বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল ৪৬ বছর পর আগামী বছর খেলবে অস্ট্রেলিয়ায়। পুরুষ দলের সেই অর্জন ছিল আন্তর্জাতিক ফুটবলে অভিষেকের ৮ বছর পর, মেয়েরা শীর্ষ পর্যায়ে খেলবে অভিষেকের ১৬ বছর পর।

Advertisement

১৯৮০ সালে কুয়েতে হওয়া এশিয়ান কাপের বাছাই হয়েছিল তার আগের বছর। বাংলাদেশ গ্রুপের (বি) খেলা হয়েছিল ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে। প্রতিপক্ষ ছিল কাতার ও আফগানিস্তান। ডাবল লিগ ভিত্তিতে খেলার পর বাংলাদেশ ৪ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ রানার্সআপ হয়ে উঠেছিল চূড়ান্ত পর্বে। চার ম্যাচের একটিতে জয় ও দুটিতে ড্র করেছিল সালাউদ্দিন-চুন্নুদের দল। গ্রুপসেরা হয়ে চূড়ান্ত পর্বের টিকিট পেয়েছিল কাতার।

৪৬ বছর পর দ্বিতীয়বার বাংলাদেশের পতাকা উড়বে এশিয়ার সবচেয়ে বড় ও মর্যাদার ফুটবল টুর্নামেন্টে। এবার এ কৃতিত্ব অর্জন হয়েছে ঋতুপর্ণা-আফঈদার ঝলকে। পুরুষ দল এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে গ্রুপ রাার্নআপ হয়ে কোয়ালিফাই করলেও মেয়েরা খেলতে যাচ্ছে চ্যাম্পিয়ন হয়েই। কাজী সালাউদ্দিনরা এক ম্যাচ হাতে রেখেই নিশ্চিত করেছিলেন এশিয়ান কাপে খেলা, মেয়েরাও তাই।

পাহাড়িকন্যা ঋতুপর্ণা চাকমার নামটি এখন মানুষের মুখেমুখে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম দখল করে নিয়েছেন ২১ বছরের এই যুবতী। ৪৬ বছর আগে এভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ছিল না। তবে ওই সময় পত্রিকার পাতা দখল করে নিয়েছিলেন কাজী মো. সালাউদ্দিন। দেশের ফুটবলের সর্বকালের সেরা সুপারস্টার কাজী সালাউদ্দিনের গোলেই ইতিহাস গড়েছিল বাংলাদেশের ফুটবল।

Advertisement

১ মার্চ ১৯৭৯, বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচে ২-২ গোলে ড্র করেছিল আফগানিস্তানের বিপক্ষে। দুই গোলই করেছিলেন মো. আবদুল হালিম। মোহাম্মদ মহসিনের গোল কাতারের বিপক্ষে ১-১ এ ড্র করলে বাংলাদেশের চূড়ান্ত পর্বে ওঠার সম্ভাবনা তৈরি হয়। তৃতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ লক্ষ্য পূরণ করে আফগানিস্তানকে ৩-২ গোলে হারিয়ে।

পঞ্চম মিনিটে পিছিয়ে পড়া বাংলাদেশকে সমতায় এনেছিলেন আশরাফ উদ্দিন আহমেদ চুন্নু ৫০ মিনিটে। তিন মিনিট পর মো. আবদুল হালিম বাংলাদেশকে ২-১ গোলে লিড এনে দিয়ে উল্লাস ছড়িয়েছিলেন ঢাকা স্টেডিয়ামে। তবে ৬১ মিনিটে আফগানরা গোল করে শঙ্কা তৈরি করেছিল বাংলাদেশ শিবিরে।

খেলা ৯০ মিনিটে গড়ালে সেই শুভক্ষণ আসে। কাজী মো. সালাউদ্দিন জয়সূচক গোল করে বাংলাদেশকে নিয়ে যান এশিয়ার শীর্ষ আসরে। কাতারের বিপক্ষে শেষ ম্যাচ বাকি থাকতেই বাংলাদেশ টিকিট নিশ্চিত করে কুয়েতের। শেষ ম্যাচে কাতারের কাছে ৩-১ গোলে হারে বাংলাদেশ। ওই ম্যাচেও একমাত্র গোলটি করেছিলেন কাজী মো. সালাউদ্দিন।

মিয়ানমারে নারী এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে প্রথম ম্যাচে বাহরাইনের বিপক্ষে ৭-০ ব্যবধানের জয়ে এক গোল ছিল ঋতুপর্ণা চাকমার। তবে তিনি সবাইকে বিম্মিত করেছেন মিয়ানমারের বিপক্ষে অসাধারণ ২ গোল করে। ৭৩ ধাপ এগিয়ে থাকা মিয়ানমারকে তাদেরই মাঠে হারিয়ে বাংলাদেশ যে ইতিহাস গড়েছে, তার কৃতিত্ব ঋতুপর্ণার। সর্বশেষ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালেও তিনি জয়সূচক গোল করেছিলেন নেপালের বিপক্ষে।

Advertisement

কাঠমান্ডুর সেই গোলের সঙ্গে অনেক মিল ইয়াঙ্গুনের দ্বিতীয় গোলটি। ঋতুপর্ণাকে এখন ‘বাংলাদেশের মেসি’ বলতে শুরু করেছেন অনেকে।

পুরুষ ফুটবল দলের ৪৬ বছর আগের বাছাইয়ের সেই প্রতিযোগিতা কেমন ছিল? জয়সূচক গোল করে বাংলাদেশকে এশিয়ান সর্বোচ্চ মঞ্চে নেওয়া কাজী মো. সালাউদ্দিন স্মৃতিচারণ করলেও পুরো চিত্রটা মনে করতে পারলেন না, ‘আসলে এতটুকুই মনে আছে, আমার গোলে বাংলাদেশ জিতেছিল এবং এশিয়ান কাপে গিয়েছিলাম। এ বাইরে তেমন কিছু মনে করতে পারছি না।’

নারী ফুটবল দলের এই সাফল্যে কাজী মো. সালাউদ্দিন অনেক খুশি। তিনি অভিনন্দন জানিয়েছেন নারী ফুটবল দলকে। ‘আপনার গোলে বাংলাদেশ একবার এশিয়ান কাপে খেলেছিল, ৪৬ বছর পর ঋতুপর্ণার গোলে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল এশিয়ান কাপে’ জানাতেই কাজী সালাউদ্দিন বললেন, ‘ওদের এই অর্জনে আমি অনেক খুশি।’

কাজী সালাউদ্দিনের নেতৃত্বেই দেশের নারী ফুটবল একটা শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়েছিল। মেয়েদের বছরব্যাপী বাফুফে ভবনের ক্যাম্পে রেখে অনুশীলন করানোয় সতীর্থদের সমালোচনাও শুনতে হয়েছিল তাকে। সেই কথা মনে করিয়ে দিলে এই কিংবদন্তি ফুটবলার শুধু হাসলেন। সেই নারী ফুটবলাররাই দেশের খেলাধুলায় নতুন ইতিহাস তৈরি করলো।

আরআই/এমএমআর/জেআইএম