প্রহসনের নির্বাচনের অভিযোগে করা মামলায় সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালকে ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেছে পুলিশ। একই সঙ্গে আরেক সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার ফের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হয়েছে।
Advertisement
বুধবার (২৬ জুন) মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও শেরেবাংলা নগর থানার উপপরিদর্শক শামসুজ্জোহা সরকার এ আবেদন করেন। এ বিষয়ে দুপুর ২টার পর ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
আসামি কাজী হাবিবুল আওয়ালকে রিমান্ডে নেওয়ার কারণ হিসেবে ১১টি বিষয় উল্লেখ করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক শামসুজ্জোহা সরকার। সেগুলো হলো:
১. গ্রেফতার আসামি ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনকালে বাংলাদেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। কিন্তু তিনি ওই নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অন্তর্ভুক্তিমূলক সম্পন্ন না করে কেবল একটি দলকে নিয়ে ডামি নির্বাচনের আয়োজন করলেন কেন?
Advertisement
২. সার্চ কমিটির সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেছিলেন এবং কেন যোগাযোগ করেছিলেন?
৩. তিনি ডামি নির্বাচন করার নিমিত্তে সংসদীয় আসন ভেঙে কেন আওয়ামী অধ্যুষিত এলাকা নিয়ে সংসদীয় আসন সৃষ্টি করলেন?
৪. কমপক্ষে ৬০টি ডামি আসন নিশ্চিত করার জন্য কাদের নির্দেশনা দিয়েছিলেন?
৫. নির্বাচন কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নির্বাচনীভাতা বৃদ্ধি করেছিলেন কেন?
Advertisement
৬. গ্রেফতার আসামি ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ২৭.১৫ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে ইলেকট্রনিক মিডিয়া ও প্রিন্ট মিডিয়ায় বক্তব্য দেন। পুনরায় এক ঘণ্টা পরই ৪০ শতাংশ ভোট হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। যা একটি অলৌকিক বিষয়। আসামি কার ইন্ধনে ও পরামর্শে ৪০ শতাংশ ভোট কাস্ট হয়েছে মর্মে উল্লেখ করেছেন তা উদঘাটন।
৭. ষড়যন্ত্রমূলকভাবে সরকারি আদেশ, সাংবিধানিক ক্ষমতা হ্রাস, দেশের জনগণের ভোটাধিকার লঙ্ঘন করেছে। তরুণ সমাজ ভোটে বিমুখ হয়েছে এবং ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে।
৮. বাংলাদেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যবস্থা না করে গ্রেফতার আসামি একটি দলের মাধ্যমে ডামি নির্বাচনের সম্পন্ন করে গেজেট প্রকাশ করেন।
আরও পড়ুন সাবেক সিইসি হাবিবুল আউয়াল গ্রেফতার শেখ হাসিনা ও সাবেক তিন সিইসির বিরুদ্ধে বিএনপির মামলা৯. গ্রেফতার আসামি প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্বে থাকা অবস্থায় ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একটি দলকে বিজয়ী ঘোষণা করার লক্ষ্যে জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে প্রহসনমূলক নির্বাচন ব্যবস্থা গ্রহণ করে কত টাকা ঘুষ গ্রহণ করেছেন তা উদঘাটন। যাতে করে কোটি কোটি নতুন প্রজন্মের ভোটারগণ ভোট দিতে পারেনি। তাতে দেশে স্বৈরাচারীর বীজ বপন করা হয়েছিল।
১০. ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যা ব্যয় হয়েছে তা শুধু একটি দলকে বিজয়ী করার জন্য হয়েছে কি না?
১১. গ্রেফতার আসামি একটিমাত্র দলকে নিয়ে ডামি নির্বাচন সম্পন্ন করে দেশের জনগণের ভোট নষ্ট করে, ভোটের প্রতি জনগণের যে বিশ্বাস তা ভঙ্গ করে জাতির সঙ্গে প্রতারণা করেছে এবং সাংবিধানিক পদে থেকে শপথ ভঙ্গ করে রাষ্ট্রদ্রোহী অপরাধ করেছে।
গতকাল বুধবার (২৫ জুন) রাজধানীর মগবাজার থেকে কাজী হাবিবুল আওয়ালকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এর আগে ২২ জুন সকালে শেরেবাংলা নগর থানায় দশম, একাদশ ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন পরিচালনাকারী কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ, কে এম নুরুল হুদা ও কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশনের বিরুদ্ধে মামলা করে বিএনপি। দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন খান বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন। মামলায় সাবেক তিন প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ ২৪ জনকে এজাহারনামীয় আসামি করা হয়।
এমআইএন/বিএ/এএসএম