ঈদুল আজহার ঠিক আগ মুহূর্তে নতুন ডিজাইনের এক হাজার টাকার নোট বাজারে ছাড়ে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রাথমিকভাবে ২০, ৫০ ও ১০০০ টাকার প্রায় ২৫০ কোটি টাকার নতুন নোট ইস্যু করা হয়। নতুন নোট বাজারে ছাড়া হলেও প্রয়োজনীয় টেকনিক্যাল প্রস্তুতি ও সমন্বয়ের ঘাটতিতে সেটি এখন গ্রাহকদের ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব নতুন নোট ক্যাশ রিসাইক্লিং মেশিন (সিআরএম) না নেওয়া নিয়ে তৈরি হয়েছে বিভ্রান্তি ও ভোগান্তি।
Advertisement
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, বিষয়টি সমাধানে কাজ চলছে। আর বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বলছে, ডিজাইন, সিকিউরিটি ফিচার, সাইজ, ওজন, জলছাপ মেশিনে আপলোড করতে হয়। এটা করতে প্রায় দুই মাসের মতো সময় প্রয়োজন পড়ে। আর এসব সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আপাতত কিছুদিন এভাবে চলবে।
নতুন ডিজাইনের নোট নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে কিছু ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে সিআরএম বুথে টাকা জমা দিতে গিয়ে মেশিন বারবার ফিরিয়ে দিচ্ছে। ব্যাংকের সিআরএম নতুন ১০০০ টাকার নোট নিচ্ছে না। গ্রাহকরা এ নোট জমা দিতে গিয়ে বারবার ব্যর্থ হওয়ায় এটিএম ও সিআরএম বুথে তাদের ভোগান্তি পোহাতে হয়।
বেসরকারি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ঈদের আগে গভর্নর আমাদের জানিয়েছিলেন, এ নোট সীমিত আকারে ছাড়া হবে। তা এখনই এটিএম বা সিআরএম বুথে না দেওয়ার অনুরোধও করেছিলেন। কারণ নতুন নোটের ফিচার অ্যাডজাস্ট করতে জুন পর্যন্ত সময় লাগবে।’
Advertisement
নতুন নোট এটিএম মেশিনে আসতে কত সময় প্রয়োজন
এ নিয়ে বিভিন্ন ব্যাংকের কার্ড ও এটিএম বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, নতুন নোট মেশিনে গ্রহণযোগ্য করতে সাধারণত দুই মাসের বেশি সময়ের প্রয়োজন। এজন্য ‘টেম্পলেট’ তৈরি করতে হয়। এটি মেশিন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো (জাপানের হিটাচি, যুক্তরাষ্ট্রের এনসিআর ইত্যাদি) করে। সেখানে আপলোড করা হয় নতুন নোটের ডিজাইন, সিকিউরিটি ফিচার, সাইজ, ওজন, জলছাপ, রং ইত্যাদি। মেশিন প্রস্তুতকারীরা বাংলাদেশে এসে বা নোট নমুনা পেয়ে প্রোগ্রামিং সম্পন্ন করে, যা কয়েক মাস সময় লাগে।
এ নিয়ে সিটি ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. অরূপ হায়দার জাগো নিউজকে বলেন, ‘কোনো নতুন নোট বাজারে এলে প্রথমেই সেটাকে মেশিনকে চেনাতে হয়, যেটা টেকনিক্যাল (কারিগরি) বিষয়। এটা একটা ক্যালিব্রেশন করতে হয়, নোটের ডিজাইনে যতগুলো সিকিউরিটি ফিচার আছে। এটার দুটি কারণ, যাতে ভালো নোট রিজেক্ট না হয়ে যায় আর খারাপ নোট যাতে ঢুকে না যায়। এটা করতে হলে মেশিনটাকে পরিপূর্ণভাবে নোটকে চিনতে হবে। আমাদের তিনটা ভেন্ডরের মেশিন আছে এর মধ্যে দুজন টাইমলাইন দিয়েছে যে দুই মাসের মতো সময় লাগবে।’
তিনি বলেন, ‘ঈদের আগে থেকেই আমাদের কাজ শুরু হয়েছে। সেখানে ১৫ দিন পার হয়েছে। আশা করা যায়, জুলাইয়ের মাঝামাঝি বা শেষের দিকে এ সমস্যার সমাধান হবে। এটার সমাধান হলে ভেন্ডরগুলোর মেশিন (বিভিন্ন ব্যাংকে থাকা) সেখানে সব ব্যাংকের মেশিন কাজ করবে। এটা শুধু একটা ব্যাংকের মেশিনে হবে বাকিদের হবে না এমনটা নয়। সমাধান হলে ওই ভেন্ডরের অন্য ব্যাংকে থাকা মেশিনের বাস্তবায়ন হবে। বড় ভেন্ডর দু-তিনটা ছোট ভেন্ডর আরও আট-দশটা আছে। প্রতিবারই নতুন নোট এলে দেড় থেকে দুই মাসের মতো সময় লাগে। এছাড়া ৫০০ বা হাজার টাকার নোট তো ঘন ঘন পরিবর্তন হয় না।’
Advertisement
এটিএম ও সিআরএম মেশিনে টাকা তোলা বা জমা দেওয়ার সময় আরও কিছু প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা কাজ করে। নোটের সাইজ, পুরুত্ব, ময়লাভাব সবই মেশিনের সঠিক কাজকে প্রভাবিত করে। অনেক সময় সামান্য ভিন্নতার কারণেও মেশিন নোট নিতে ব্যর্থ হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, বিষয়টি সমাধানে কাজ চলছে, প্রসেস শুরু করেছে ব্যাংকগুলো।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘মেশিনের সফটওয়ার চেনাতে হয় যে এটা নতুন নোট। ব্যাংকগুলো কাজ শুরু করেছে। ব্যাংকগুলো একেক দেশ থেকে একেক কোম্পানির মেশিন সংগ্রহ করেছে। কারণ নতুন নোটের নিরাপত্তা ফিচার ও ডিজাইন সিআরএম মেশিনে প্রোগ্রামিং করে দিলেই মেশিনগুলো নোট চিনতে পারবে। ব্যাংকগুলো এরই মধ্যে কনসার্ন কোম্পানির সঙ্গে কথা বলে কাজ শুরু করেছে।’
ইএআর/এমএএইচ/জিকেএস