বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকটের কারণে গত দেড় বছরে দেশের প্লাস্টিক খাতের অধিকাংশ শিল্পপ্রতিষ্ঠান ক্ষতির মুখে পড়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় শিল্পটির বিকাশে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে প্লাস্টিকের টেবিলওয়্যার ও গৃহস্থালিসামগ্রীর ওপর আরোপিত মূল্য সংযোজন করের (ভ্যাট) হার ১৫ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ প্লাস্টিক পণ্য প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশন (বিপিজিএমইএ)।
Advertisement
একই সঙ্গে তারা রপ্তানিমুখী প্লাস্টিক শিল্পের যন্ত্রপাতি, যন্ত্রাংশ ও কাঁচামাল আমদানির ওপর শুল্কহার টেক্সটাইল শিল্পের মতো ১ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি জানিয়েছে।
বুধবার (১৮ জুন) রাজধানীর পল্টন টাওয়ারের বিপিজিএমইএ কার্যালয়ে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংগঠনটির সভাপতি সামিম আহমেদ। এসময় বিপিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ও বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
নতুন অর্থবছর আমদানি যন্ত্রপাতির ওপর শুল্ক সুবিধা চেয়ে সরকারের কাছে ১৫টি সংশোধিত প্রস্তাব দিয়েছে সংগঠনটি। তবে বিপিজিএমইএর অভিযোগ, প্রস্তাবিত বাজেটে প্লাস্টিক খাতের জন্য করা গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবগুলো উপেক্ষিত তথা বিবেচনা করা হয়নি।
Advertisement
বিপিজিএমইএ বলছে, প্লাস্টিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান এসআরও-এর অধীনে আমদানিতে ১ শতাংশ শুল্ক সুবিধা দেওয়া হলে অর্থনীতিতে আরও ভালো অবদান রাখতে সক্ষম হবে। এর মাধ্যমে শুল্ক খাত আরও স্বয়ংসম্পূর্ণ ও সক্ষম হবে। রপ্তানিতে ইতিবাচক ভূমিকা রেখে দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ করবে।
আরও পড়ুন
দেড় বছরে ২০ শতাংশ প্লাস্টিক কারখানা ক্ষতিগ্রস্ত প্লাস্টিকপণ্যের রপ্তানি বাড়াতে আরএফএল-এর ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগসামিম আহমেদ বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে প্লাস্টিক খাত বেশ উপেক্ষিত হয়েছে। প্লাস্টিক খেলনাশিল্প উদীয়মান খাত। এখানে নতুন নতুন কর্মসংস্থান হচ্ছে। অথচ সব মিলিয়ে এ খাতে ৮৭ শতাংশের বেশি শুল্ক-কর রয়েছে। এ ছাড়া এখনও প্লাস্টিক শিল্পের মৌলিক কাঁচামালের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশই আমদানি করতে হয়। এসব কাঁচামালের আমদানিতে ৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। স্থানীয় শিল্পের বিকাশে এটি কমানো জরুরি। বস্ত্র ও পোশাকসহ কয়েকটি রপ্তানিমুখী শিল্প খাতে যন্ত্রপাতি, যন্ত্রাংশ ও উপকরণ ইত্যাদি আমদানিতে মূসক, সম্পূরক শুল্ক, নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক অব্যাহতির সুবিধা পচ্ছে। প্লাস্টিক খাতকেও এই সুবিধা দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
সামিম আহমেদ বলেন, বর্তমানে প্লাস্টিক খাত একটি সম্ভাবনাময় রপ্তানি খাতে পরিণত হয়েছে। কিন্তু উৎপাদন দক্ষতা ও আধুনিক প্রযুক্তির অভাবে খাতটি কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি পাচ্ছে না। নতুন যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুল্ক ও ভ্যাট জটিলতা অনেক প্রতিষ্ঠানকে নিরুৎসাহিত করছে।
Advertisement
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকটের বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকটে বিগত দেড় বছরে প্লাস্টিক খাতের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান ক্ষতির মুখে পড়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সরকার যদি আমদানি যন্ত্রপাতিতে ১ শতাংশ শুল্ক সুবিধা দেয়, তবে খাতটি আরও প্রতিযোগিতামূলক ও বিকশিত হবে। একই সঙ্গে রপ্তানিও বাড়বে।
বর্তমানে টেক্সটাইল খাতের সংগঠনগুলোর (বিটিএমএ, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিএলএমইএ, বিটিটিএলএমইএ, বিটিডিপিএ) সদস্যরা এসআরও নং-১২০-আইন/২০২১/০৯/কাস্টমস অনুযায়ী মাত্র ১ শতাংশ শুল্কে যন্ত্রপাতি আমদানির পাশাপাশি মূসক ও অন্যান্য শুল্ক থেকেও ছাড় পাচ্ছে।
আরও পড়ুন
সৌরবিদ্যুতে ব্যাপক বিনিয়োগ পরিকল্পনা করছি: আহসান খান চৌধুরী আন্তর্জাতিক প্লাস্টিক মেলায় আরএফএলবিপিজিএমইএ বলছে, প্লাস্টিক শিল্প একই সুবিধা পেলে এ খাত আরও দ্রুত বিকশিত হবে এবং দেশের রপ্তানি আয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারবে।
সামিম আহমেদ বলেন, প্লাস্টিকের তৈরি সব ধরনের টেবিলওয়্যার, কিচেনওয়্যার, গৃহস্থালিসামগ্রীতে উৎপাদন পর্যায়ে প্রথমে ভ্যাট ৫ শতাংশ। পরে তা বাড়িয়ে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়। নতুন বাজেটে তা বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু আমরা এটি ৫ শতাংশ নির্ধারণ করার দাবি জানাচ্ছি। ভ্যাট ১৫ শতাংশ করা হলে তৃণমূল পর্যায়ের দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ দুর্ভোগ পোহাবে।
ট্যারিফ মূল্য প্রসঙ্গে বিপিজিএমইএ সভাপতি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে খেলনা ও খেলনার উপকরণ বৃদ্ধি পেলেও আমদানি করা তৈরি খেলনার ট্যারিফ মূল্য বৃদ্ধির জন্য বিপিজিএমইএর প্রস্তাবটি বিবেচনা করা হয়নি। ফলে স্বল্প মূল্যের নিম্নমানের আমদানিকৃত খেলনাসামগ্রীতে বাজার সয়লাব হবে। বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় হবে। উন্নত মানের দেশীয় খেলনা এশীয় ইউরোপের বাজারেও দীর্ঘদিন যাবৎ রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে এবং বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করছে। এসব শ্রমঘস শিল্পে নারী শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে। কাজেই দেশীয় খেলনা শিল্পের সুরক্ষায় আমদানি করা খেলনার ট্যারিফ মূল্য বৃদ্ধির পুনরায় প্রস্তাব করছি।
লিখিত বক্তব্যে সামিম আহমেদ বলেন, প্লাস্টিকের তৈরি পণ্য আমদানিতে বেশ কিছু পণ্যে সম্পূরক শুল্কের (এসডি) হার ১০ শতাংশ ও ৫ শতাংশ হ্রাস করা হয়েছে। আমদানি বিকল্প দেশীয় উন্নত মানের প্লাস্টিকের তৈরি পণ্য স্থানীয় বাজারে সরবরাহ করে দেশের চাহিদা মিটিয়েও বিশ্বের প্রায় ৫০টি দেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আহরণ করছে। এ অবস্থায় প্রস্তাবিত ২০২৫-২০২৬ বাজেটে তৈরি প্লাস্টিক পণ্য আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক হ্রাস করার প্রস্তাবটি প্রত্যাহারের জন্য প্রস্তাব করছি। স্থানীয় শিল্প রক্ষার স্বার্থে সম্পূরক শুল্ক উচ্চতর হারে বৃদ্ধি এবং সর্বোচ্চ হারে রেগুলার ডিউটি আরোপের প্রস্তাব করা যাচ্ছে। বর্তমানে দেশে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন প্লাস্টিক পণ্য তৈরি হচ্ছে। অথচ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, চীনসহ অন্যান্য দেশ থেকে নিম্নমানের কমদামি প্লাস্টিক পণ্য আন্ডার ইনভয়েসের মাধ্যমে দেশে ঢুকছে। যেমন: প্লাস্টিকের তৈরি হ্যাঙ্গার, ফার্নিচার, দরজা জানালা, ক্রেট, প্লাস্টিক প্যালেটস প্রভৃতি এসে স্থানীয় বাজার দখল করে দেশের প্লাস্টিক শিল্পকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
এসময় তিনি বলেন, বলপেন উৎপাদন পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপিত আছে। ওই ভ্যাট অব্যাহতির সুপারিশ করছি। শিক্ষা উপকরণ হিসেবে বলপেনের ওপর অতীতে কখনো উৎপাদনপর্যায়ে ভ্যাট ছিল না। দুই বছর আগে প্রথম উৎপাদনপর্যায়ে ভ্যাট আরোপ করা হয়। আমরা সরকারের বিভিন্ন মহলে অবহিত করার পর প্রস্তাবিত ২০২৫-২০২৬ সালের বাজেটে ব্যবসায়িক পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু উৎপাদন পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট বহাল রেখেছে। এ খাতের বিদ্যমান সমস্যা নিরসন করা হলে রপ্তানিতে ইতিবাচক ভূমিকা রেখে দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করবে, বাড়বে রাজস্ব।
ইএআর/এমকেআর/এএসএম